বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ভারতের ৭ রাজ্যে নজর বাংলাদেশের

  •    
  • ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৩:৩০

দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সীমান্তসংলগ্ন এসব রাজ্যের সঙ্গে কানেক্টিভিটি ও বাণিজ্য বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে ঢাকা। সদ্যঃসমাপ্ত দিল্লি সফরে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় উন্নয়নমন্ত্রী (ডোনার) জি কিষেন রেড্ডির সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বৈঠকে প্রতিবেশী ৭ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়।

প্রতিবেশী বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারতের ৭ রাজ্যে নজর বাংলাদেশের। দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে সীমান্তসংলগ্ন এসব রাজ্যের সঙ্গে কানেক্টিভিটি ও বাণিজ্য বাড়ানোর কৌশল নিয়েছে ঢাকা। এর অংশ হিসেবে সদ্যঃসমাপ্ত দিল্লি সফরে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় উন্নয়নমন্ত্রী (ডোনার) জি কিষেন রেড্ডির সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রীর ওই বৈঠকে প্রতিবেশী ৭ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়। ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি ছাড়াও দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে তাদের তিন দিনের জন্য ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়।

বৃহত্তর সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা ও কুড়িগ্রাম অঞ্চল লাগোয়া এই সাত রাজ্যের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বৃহত্তম হচ্ছে আসাম। আসামের মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্ব শর্মাকে আগেই ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল বাংলাদেশ।

ওই রাজ্যগুলোও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে মুখিয়ে আছে বলে মনে করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ভারত সফরকালেই পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম দিল্লির বাংলাদেশ ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি উল্লেখ করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন নিউজবাংলাকে বলেন, “গত মে মাসে গোহাটি সফরকালে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা আমাকে বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে আমার অজস্র ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।’

“আমি জানতে চেয়েছিলাম কেন? তিনি আমাকে বলেন, শেখ হাসিনার জিরো টলারেন্স ফর টেরোরিজম নীতির ফলেই ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যে আজ শান্তি ও উন্নয়নের জোয়ার বইছে। দিনকে দিন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ব্যবসা ও বিনিয়োগ। নতুন নতুন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় ও চিকিৎসাকেন্দ্র গড়ে উঠছে। এটা সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ও বাংলাদেশ নট এ হাব অব টেরোরিস্ট ঘোষণার পর থেকেই।”

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়ানোর চেষ্টা বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে। কিন্তু তা বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে যোগাযোগের স্বল্পতা। দিল্লির আইটিসি মৌর‌্য হোটেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্যুটে জি কিষেন রেড্ডির সঙ্গে অনুষ্ঠিত ৭ সেপ্টেম্বরের ওই বৈঠকে সেই বাধাগুলো দূর করার বিষয়ে আলোচনা হয়।

গত ৩ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে সাক্ষাতের সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির করমর্দন। ছবি: টুইটার

প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে কিষেন রেড্ডিকে বলেন, ‘আঞ্চলিক মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তারা যত বেশি সফর করবেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে বাংলাদেশের সহযোগিতা তত দ্রুত বাড়বে।’

জবাবে কিষেন রেড্ডি জানান, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে কথা বলে তিনি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। মোদি আন্তরিকভাবেই বাণিজ্য সম্পর্ক বৃদ্ধিতে আগ্রহী। তেমন হলে মন্ত্রী হিসেবে তিনিই প্রথম বাংলাদেশ সফর করবেন।

দিল্লির ওই আলোচনায় কিষেন রেড্ডি সীমান্ত হাট চালুর প্রস্তাব করেন। ভারতের পাঁচ সীমান্তবর্তী রাজ্যের সঙ্গে কথা বলে দুই দেশের মোট ৭০টি স্থান সীমান্ত হাটের জন্য চিহ্নিত করা হয়। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে ৩৫, মেঘালয়ে ২২, ত্রিপুরায় ৫ এবং আসাম ও মিজোরামে ৪টি করে।

বৈঠকে বন্ধ হাটগুলো দ্রুত খোলার আরজি জানান কিষেন রেড্ডি। তিনি স্থলবন্দর বাধা দূর করার প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন।

বৈঠকে কিষেন রেড্ডি আগরতলা–আখাউড়া রেললাইন নির্মাণ ও সংলগ্ন সমন্বিত চেকপোস্ট তৈরির জটিলতার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। তিনি বলেন, ভারতের অর্থায়নে পুরো প্রকল্পটি তৈরি হলেও বাংলাদেশের দিকে কাজে ধীরগতির কারণে প্রকল্পটি শেষ হচ্ছে না। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ওপর নির্ভর করছে গোটা এলাকার বাণিজ্যিক সম্ভাবনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তির আশ্বাস দেন।

বৈঠকে কিষেন রেড্ডি জানান, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল চা চাষে অত্যন্ত সমৃদ্ধ। বাংলাদেশ এখান থেকে চা আমদানিতে আগ্রহী হলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার বাণিজ্যিক সম্পর্ক বহুলাংশে বাড়বে। দুই দেশই তাতে উপকৃত হবে। চা ছাড়া বেশকিছু খনিজ পদার্থ, সিমেন্ট, প্লাস্টিক পণ্য, বাঁশ, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, পর্যটন ও পরিষেবার ক্ষেত্র রয়েছে। তবে সমস্যা দূর করতে বাংলাদেশ কানেক্টিভিটিতে গুরুত্ব দেয় বলে জানিয়ে দেয়া হয়।

কূটনৈতিক সূত্র জানায়, ৭ মুখ্যমন্ত্রী ঢাকা সফর করলে তা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে একটি নতুন অধ্যায় উন্মোচনে সাহায্য করবে। পারস্পরিক কূটনৈতিক সম্পর্কও দৃঢ় হবে।

প্রতিবেশী দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা কূটনৈতিক ধারাভাষ্যকাররা বলছেন, ‘বাংলাদেশ উত্তর-পূর্ব ভারতে বিশেষ করে আসামে শান্তি প্রক্রিয়ার পথ প্রশস্ত করেছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের এখন বাংলাদেশের দাবি পূরণের পথ প্রশস্ত করা উচিত। তাতে কানেক্টিভিটি, আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্য, পারস্পরিক আস্থার ক্ষেত্রে দুই পক্ষের ভালো স্বার্থ নিশ্চিত হবে। লাভবান হবে দুই পক্ষই।

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের দুই দিন পর শনিবার ঢাকায় ‘প্রতিবেশী কূটনীতির রোল মডেল’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক হয়। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের নানা বিষয় নিয়ে এতে আলোচনা হয়।

এডিটরস গিল্ডের সভাপতি মোজাম্মেল বাবু ও ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্তের সঞ্চালনায় এ বৈঠকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত, ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার সাংবাদিক অগ্নি রায়, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. আমেনা মহসিন, টাইমস অফ ইন্ডিয়ার অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর মহুয়া চট্টোপাধ্যায়, সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমদ, টেলিগ্রাফের সাংবাদিক দেবদীপ পুরোহিত, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অফ বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর এবং দ্য হিন্দু পত্রিকার প্রতিবেদক কল্লোল ভট্টাচার্য অংশ নেন।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বৈঠকে জানান, ভারত সরকার বাংলাদেশের এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছে। দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীরা কবে নাগাদ ঢাকা সফর করবেন তা নিয়ে কাজ করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এ বিষয়ে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সংস্কৃতি, অর্থনীতি, ভাষা, রাজনৈতিক ইতিহাস এবং ধর্মের দিক থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অনেক মিল রয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও ঢাকা-নয়াদিল্লি সম্পর্ক কখনোই বিশেষভাবে সৌহার্দ্যপূর্ণ বা ঝামেলামুক্ত ছিল না। এখন রাজনৈতিকভাবে অনেকটাই স্থিতিশীলতা এসেছে। এ অবস্থায় আমরা ভারতের উত্তর-পূর্বের সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘গত এক যুগের মধ্যে অত্যন্ত সফলতম ছিল প্রধানমন্ত্রীর এবারের ভারত সফর। যারা অণুবীক্ষণ-দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে, রাজনৈতিক মতাদর্শ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করেন; তাদের কাছে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার।

‘এই সফরে ৩৩ দফার একটি যৌথ ইশতেহার প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে ৭টি সমঝোতার উল্লেখ রয়েছে। ছয়টি প্রকল্পের উদ্বোধন কিংবা কনস্ট্রাকশন শুরু অথবা কোনো পর্যায়ে আছে তা-ও জাতিকে অবহিত করা হয়েছে।

‘এই সফরের পরিপ্রেক্ষিতে আমি মনে করি না চাওয়া-পাওয়ার কথা একেবারেই বাদ দিয়ে দিতে হবে। একটি সফরে কেউ কম পাবে, কেউ বেশি পাবে। এখানে বাংলাদেশ অবশ্যই একটি পর্যায়ে এসেছে- যা আমরা ডিজার্ভ করি। অর্থনীতির জায়গা থেকে বাংলাদেশ সবারই দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।’

এদিকে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অফ বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিবেশী কূটনীতির রোল মডেলে আমরা পৌঁছাইনি। তবে সে পথে হাঁটছি। আমাকে যদি বলা হয় রোল মডেল কোথায়, তাহলে আমি বলব- ইউরোপীয় ইউনিয়নে এটা আমি দেখি। সাউথ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে অবশ্যই আমরা রোল মডেল, তবে বৈশ্বিক বিবেচনায় আমাদের আরও এগোতে হবে।'

এ বিভাগের আরো খবর