বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

‘আমাগো সব কিছু গিল্লা খাইয়া হালাইছে পদ্মায়’

  •    
  • ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১১:২৩

হামিদা বেগম বলেন, ‘আমাগো সব কিছু গিল্লা খাইয়া হালাইছে পদ্মায়। জীবনটা লইয়া বাঁচতে নৌকা লইয়া দূরে যাইতে চাইছিলাম। এইডাও আমার কপালে জুটল না। নৌকা ডুইব্বা সব গাঙ্গে তলাইয়া গেল। আমাগো অহন যাওয়ার মতন কোনো জায়গা নাই।’

সপ্তাহ দুয়েক আগেও দেড় শ মিটার দূরে থাকা পদ্মা এখন কড়া নাড়ছে জাজিরার পালেরচর ইউনিয়নের কাঠুরিয়া গ্ৰামের হামিদার দরজায়। এরই মধ্যে পদ্মায় বিলীন হয়েছে তার আবাদি ১২ বিঘা ধানসহ কৃষিজমি।

গত সপ্তাহে ভাঙন আতঙ্কে নৌপথে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় বসতবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছিলেন হামিদা বেগম। কিন্তু সেখানেও বাদ সাধে পদ্মার তীব্র স্রোত। আসবাবপত্রের সঙ্গে নদীতে তলিয়ে যায় হামিদাসহ পরিবারের সদস্যরা।

পরে অন্য একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় তাদের উদ্ধার করে স্থানীয়রা। তবে রক্ষা করা যায়নি নৌকায় থাকা তার শেষ সম্বলের কোনো কিছুই। চোখের সামনেই স্রোতের তোড়ে ভেসে যায় সবকিছু। খোলা আকাশের নিচে এক সপ্তাহ ধরে একটি ছাপড়া করে কোনো রকমে মানবেতর জীবন যাপন করছে পরিবারটি।

দুর্গত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খোলা আকাশে একটি চালার নিচে রান্না করছেন হামিদা। কান্না আর আহাজারি করতে করতে তিনি বলেন, ‘আমাগো সব কিছু গিল্লা খাইয়া হালাইছে পদ্মায়। জীবনটা লইয়া বাঁচতে নৌকা লইয়া দূরে যাইতে চাইছিলাম। এইডাও আমার কপালে জুটল না। নৌকা ডুইব্বা সব গাঙ্গে তলাইয়া গেল। আমাগো অহন যাওয়ার মতন কোনো জায়গা নাই। দুই দিন আগে এখানে মন্ত্রী আইছিল। হেরা ৩০ কেজি চাউল আর ২ হাজার টাকা দিয়া গেছে।’

হামিদার মতো এমন অসংখ্য পরিবার চোখে পড়বে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচর, পালেরচর, বড়কান্দি ও বিলাসপুর ইউনিয়নের পদ্মা পারের জনপদে। গেল এক সপ্তাহে নদীভাঙনের কবলে গৃহহীন হয়েছে এসব এলাকার অন্তত ১৪৫ পরিবার। তলিয়ে গেছে ৩০০ একর কৃষিজমিসহ পুকুরের মাছ।

ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকা বসতি সরিয়ে নিচ্ছে আরও অর্ধশত পরিবার। ঝুঁকির মুখে পড়েছে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পাকা সড়ক, পালেরচর বাজারসহ বহু স্থাপনা।

বর্ষার শেষ সময়ের পানি বৃদ্ধিতে অন্যবারের চেয়ে অনেকটা বেশি আগ্রাসী হয়ে উঠেছে পদ্মা। প্রতিদিনই ভাঙছে নতুন নতুন এলাকা। নদীতে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা, ফসলি জমি, রাস্তাঘাটসহ শ শ স্থাপনা। জীবন বাঁচাতে এলাকা ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে নদীভাঙনকবলিতরা।

পালেরচর এলাকার নদীভাঙনের শিকার বিলকিস বেগম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘৭ বছর লিবিয়ায় কাম কইরা ১২ বিঘা জমি কিনছিলাম। ওই জমিতে চাষাবাদ কইরা সংসার চলত। কৃষিজমিতে এইবার ধান লাগাইছিলাম। ফলনও ভালো হইছিল, কিন্তু গাঙ্গে সব ধানসহ জমি লইয়া গেল। অহন নদী আমাগো বাড়ির উডানে চইলা আইছে। ঘরদোর সরাইয়া নিতাছি। কিন্তু কই যাইয়া উঠমু?’

বড়কান্দি ইউনিয়নের কান্দি গ্রামের রশিদ ছৈয়াল বলেন, ‘এইবার আমাগো ইউনিয়নের সরদার কান্দি, খলিফা কান্দি, রঞ্জন ছৈয়াল কান্দি, মিরআলী মাতবর কান্দি, পাথালিয়া কান্দি গ্ৰামে ব্যাপক নদীভাঙন শুরু হইছে। যেকোনো সময় এই এলাকার গ্রামগুলো নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। এই গ্রামগুলোতে প্রায় ১২০০ পরিবার বাস করে। আমরা খুবই আতঙ্ক নিয়া রাইত কাটাই।’

জাজিরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোবারক আলী শিকদার জানান, নদীতে অবৈধ ড্রেজারে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙন বেড়েছে। নদীর তীরবর্তী এলাকা থেকে বালু উত্তোলন করায় নদীর গভীরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্রোত বইছে নদীর তীর ঘেঁষে। এই বছরের নদীভাঙনে জাজিরা উপজেলার প্রায় দেড় শ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত করে প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হচ্ছে।

পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, ‘নদীভাঙন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে ৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৩টি প্যাকেজে জিও ব্যাগ ডাম্পিং শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ ছাড়া এই এলাকাকে নদীভাঙনের হাত থেকে স্থায়ীভাবে রক্ষা করতে একটি ডিপিপি প্রণয়ন করা হয়েছে। আশা করি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ডিপিপি অনুমোদন করে ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে কাজ শুরু করবে পানি উন্নয়ন বোর্ড।’

তিনি জানান, সরকারের পক্ষ থেকে ভাঙনকবলিত প্রতিটি পরিবারকে ৩০ কেজি চাল ও নগদ দুই হাজার করে টাকা সহায়তা করা হয়েছে। এ ছাড়া নদীভাঙনে গৃহহীন ২৫ পরিবারকে দুই বান্ডিল করে ঢেউটিন ও নগদ ৬ হাজার করে টাকা দেয়া হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর