ঢাকার সাভারে বকেয়া বাড়িভাড়া পরিশোধ করতে না পাড়ায় ভাড়াটিয়ার ঘরে তালা দিয়ে রাখার অভিযোগ উঠেছে বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধে। ফলে বৃষ্টির মধ্যেই মধ্যরাত পর্যন্ত বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে প্রসূতি এক নারী ও তার পরিবারকে। পরে রাতের দিকে ঠাঁই মেলে পাশের একটি বাড়িতে।
শুধু তা-ই নয়, বাসাভাড়ার জন্য চরম অপদস্থ ও গালিগালাজের শিকার হতে হয়েছে বলেও অভিযোগ পরিবারটির। এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় জরুরিসেবা ৯৯৯-এ ফোন দিয়েও পুলিশের কোনো সহযোগিতা মেলেনি, দাবি ভুক্তভোগীদের।
সোমবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের কান্দাইল মহল্লায়। মধ্যরাতে নিউজবাংলাকে এসব অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী তাসলিমা আক্তার ও স্বামী মো. রানা।
অভিযুক্ত বাড়ির মালিক কুলসুম বেগম। অভিযোগের বিষয়ে জানতে ফোন দেয়া হলে এই প্রতিবেদকের সঙ্গেও অসদাচরণ করেন তিনি।
৯৯৯-এ ফোন দিয়ে সহযোগিতা না পাওয়ার বিষয়ে আশুলিয়া থানার ডিউটি অফিসার (এসআই) আব্দুল আউয়াল ও উপপরিদর্শক (এসআই) মিলন ফকিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সদোত্তর মেলেনি।
রাতে পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম নিউজবাংলাকে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানোর কথা জানালেও বাস্তবে তা হয়নি।
রাত দেড়টার দিকে দ্বিতীয়বার ভুক্তভোগী পরিবারটির সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার। তখনও তারা বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
গার্মেন্টসকর্মী তাসলিমা বলেন, ‘আমার স্বামী কন্ট্যাক্টে কাজ করে। আমিও গার্মেন্টসে কাজ করি। এতে সংসার খরচ মোটামুটি চলে। আমার একটা বড় ছেলে আছে। এখন পাঁচ মাসের বাচ্চা পেটে আমার। আমার স্বামীও টাকা না পাওয়ায় ভাড়া দেয়া সম্ভব হইতেছিল না। আর আমিও ঠিকমতো অফিস করতে পারি নাই। আবার ওভারটাইমও করতে পারি নাই, এই কারণে বেতন কম পাইছি।
‘এই জন্যে ৩ হাজার ৫০০ টাকা কইরা আড়াই মাসের ভাড়া বাঁধছে। আইজ সন্ধ্যায় গার্মেন্টস থাইকা আইসা দেখি বাড়িওয়ালী আমাগো ঘরে তালা দিয়া দিছে। অন্য ভাড়াটিয়াসহ আশপাশের মানুষ আইসা রিকোয়েস্ট করল, কিন্তু মালিক কুলসুম বেগম শোনে না।’
বাজে ব্যবহারের অভিযোগ করে তাসলিমা বলেন, ‘আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতদের কাছ থাইকা অনেক কষ্ট কইরা ৫ হাজার ট্যাকা ধার আইনা দিছি। সেটাও নিব না বাড়িওয়ালী। উল্টা আমাগো অনেক গালিগালাজ করছে। আমরা যেন ঘরে ঢুকতে না পারি এই জন্যে রাত ১২টা পর্যন্ত চেয়ার নিয়া ঘরের সামনে বইসা আছিল।
বাড়িওয়ালা কুলসুম বেগম এর আগেও একই কাজ করেছেন অভিযোগ এই ভাড়াটিয়ার। বলেন, ‘এর আগেও এক দিন ঘরে তালা দিয়া রাখছিল। তখন ছোট বাচ্চাটারে নিয়া সারা দিন না খাইয়া আছিলাম। আইজ আবারও পোলাপান নিয়া না খাইয়া বৃষ্টির মইদ্দে বাইরে খাড়ায় আছি। মূলত আমাগো তাড়ায় দিয়া ঘরে এক লাখ ট্যাকার জিনিসপত্র আছে সেগুলা নিয়া বিক্রি করতে চায় বাড়িওয়ালী।’
বৃষ্টির মধ্যে রাতে তালা খুলে দিতে কুলসুম বেগমকে অনুরোধ করেছিলেন প্রতিবেশীরাও। কিন্তু তাতেও মন গলেনি তার। পরে মধ্যরাতে পরিবারটিকে পাশের একটি বাড়িতে নিয়ে জায়গা দেন স্থানীয় মো. রাব্বী।
নিউজবাংলাকে রাব্বী বলেন, ‘বাসাভাড়ার জন্য বাড়ির মালিক ওই ভাড়াটিয়াদের কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। বৃষ্টির মধ্যে অনেক রাত পর্যন্ত সন্তানসম্ভবা ওই নারী তার ছোট একটি ছেলে ও স্বামীকে নিয়ে বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। বাড়ির মালিক কুলসুম বেগমকে অনেক রিকোয়েস্ট করলেও তিনি তালা খুলে দেননি। পরে আমি তাকে পাশে আরেকটা বাড়িতে আপাতত রেখেছি।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘এটা চরম অমানবিক। একজন প্রেগন্যান্ট নারী তার পরিবার নিয়ে অভুক্ত বাইরে রাত কাটাচ্ছে। এমন বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেয়া দরকার।’
স্বামী মো. রানা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি আইজকাই হামিম গ্রুপে আমার ওয়াইফের অফিসে চাকরি পাইছি। আগে কন্ট্যাক্টে কাজ করছি। কিন্তু কন্ট্রাক্টর কাম শেষে পালায় গেলে আমি ট্যাকা পাই নাই। আইজকা বাড়িওয়ালা ভাড়া না পাইয়া আমাগো বাইর কইরা ঘরে তালা দিছে।’
৯৯৯-এ ফোন দিয়ে বিষয়টি জানালেও এতে নাকি থানা পুলিশের কিছুই করার নাই বলে জানান এক কর্মকর্তা। রানা বলেন, ‘ওখান থাইকা আশুলিয়া থানায় ধরায় দিছে। কিন্তু থানার অফিসার আমারে বলছে, আপনারা তো ভাড়া দেন নাই। এইটা বাড়িওয়ালার সঙ্গে বইসা চেয়ারম্যান, মেম্বার নিয়া মীমাংসা করেন। ওইখানে আমাদের কিছু করার নাই।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে বাড়ির মালিক কুলসুম বেগমকে ফোন করা হলে এই প্রতিবেদকের সঙ্গেও অসদাচরণ করেন তিনি। বলেন, ‘১৮ হাজার ট্যাকা ভাড়া ভাই। তালা দিমু নাতো কি করমু? আপনি তো সবই জানেন। ফোন দিছেন ক্যা?’
৯৯৯-এ জানিয়েও সহযোগিতা না পাওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে মঙ্গলবার সকালে আশুলিয়া থানার ডিউটি অফিসার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল আউয়ালকে ফোন করা হলে এলোমেলো কথা বলেন। ‘৯৯৯-এ তো অনেক ফোন আসছে। তবে বাসাভাড়ার ঘটনায় না, এমনি কল আসছিল। হ্যাঁ, হ্যাঁ ৯৯৯-এ কল আসছিল। এসআই মিলন ফকিরকে পাঠানো হয়েছিল।’
সকাল পর্যন্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়নি কেন প্রশ্ন করলে এসআই বলেন, ‘স্যরি, এটা তো ৯৯৯-এ কল আসার সঙ্গে সঙ্গে আমরা মিলন ফকিরকে দিয়েছি। সঙ্গে সঙ্গেই মেসেজ দেয়া হয়েছে। না যাওয়ার বিষয়টি এখন আমি তো বলতে পারব না।’
রাত সাড়ে ১২টার দিকে আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মিলন ফকিরের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার। তবে ওই সময়েও সে এমন কোনো ঘটনা তাকে জানানো হয়নি বলে জানান। তবে মঙ্গলবার সকালে তাকে ফোন করে আর পাওয়া যায়নি।
রাতে একই সময় দুই দফা কথা হয় আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলামের সঙ্গে। তিনি ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানোর কথা জানালেও বাস্তবে তা হয়নি। নিউজবাংলাকে তিনি বলেছিলেন, ‘আচ্ছা আমি বিষয়টা দেখেতেছি। ওখানে লোক পাঠাচ্ছি।’