হযরত শাহজালালসহ দেশের সব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজে একক আধিপত্য হারাতে পারে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। বিমানবন্দরগুলোতে যাত্রীসেবার মান বাড়াতে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং এজেন্ট নিয়োগ দিতে আন্তর্জাতিক টেন্ডার আহ্বান করতে যাচ্ছে সরকার।
আগামী বছর শাহজালাল থার্ড টার্মিনাল উদ্বোধনের আগেই এ টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন ও এজেন্ট নিয়োগ হবে বলে জানিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়। অবশ্য এ প্রক্রিয়ায় বিমানও অংশ নিতে পারবে। টেন্ডার সম্পন্ন করতে এরই মধ্যে পরামর্শক নিয়োগ দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
বিমান প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সে পথে যাব। আমরা কম্পিটিটিভ ব্যবস্থায় যাব, গবেষণা হচ্ছে আমাদের। কনসালট্যান্ট নিয়োগ করেছি এ বিষয়ে। তারা অগ্রসর হচ্ছে। এখনও টেন্ডার ছাড়িনি। স্টাডি হচ্ছে।
‘বিমানও এ প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে। তারা যদি সাকসেসফুল হয় তাহলে করবে। কিন্তু আমাদের কম্পিটিশনে যেতে হবে। বিমান যদি ভালো করে…। এটার মাপকাঠি তো আপনারাই ভালো জানেন। বিমান চেষ্টা করছে। তারা যন্ত্রপাতি আনছে। এখন যদি এখানে পাবলিক সেটিসফেকশন থাকে তাহলে বিমান করবে। আমরা আন্তর্জাতিক মানের সেবা চাচ্ছি। বিমানও চেষ্টা চালাচ্ছে। কম্পিটিশনে তারা যাবে, যদি তারা পায় তাহলে তারা যাবে।’
বর্তমানে দেশের সব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরেই দেশি-বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোকে এককভাবে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সেবা দিয়ে থাকে বিমান। প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় বিমানের সেবার মান নিয়ে বিভিন্ন সময়েই অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন সময় বিমানকে বাদ দিয়ে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং এজেন্ট নিয়োগ দিতে চেয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। তবে কোনোবারই সংস্থাটি সফল হতে পারেনি।
দায়িত্ব গ্রহণের তিন সপ্তাহ পর গত ৪ আগস্ট বলাকা ভবনে আয়োজিত মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) যাহিদ হোসেন জানান বিমানের কাস্টমার সার্ভিস কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ের নয়। ফাইল ছবি
এর মধ্যে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে বিমানের একটি সংগঠনের ধর্মঘটে প্রায় ৫ ঘণ্টা শাহজালাল বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। ওই ধর্মঘটে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটের ২৪টি ফ্লাইটের প্রায় ৪ হাজার যাত্রী ভোগান্তিতে পড়েন। সে সময় এ পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজে বিকল্প এজেন্টের প্রয়োজনীয়তা জানিয়ে ওই বিমান মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় বেবিচক।
বেবিচকের ওই চিঠিতে বলা হয়, এ ধরনের জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় এবং গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজ নিরবচ্ছিন্ন করতে বিমান বাংলাদেশ ছাড়াও অন্য এজেন্সিকে অনুমতি দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা প্রয়োজন।
এ ঘটনার পর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের কাজে আধুনিকতা আনতে বিদেশি অংশীদার খোঁজা শুরু করে বিমান। তবে সে প্রক্রিয়াও আর বেশিদূর এগোয়নি বিমানের কর্মীদের আরেকটি আন্দোলনের কারণে।
তারও আগে, ২০০৬ সালে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের জন্য একটি স্বতন্ত্র কোম্পানি গঠনের পরিকল্পনা করা হয়েছিল, যার ওপর বিমানের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার অনুমোদন মেলেনি।
বিমানের আয়ের একটি বড় অংশ আসে এই গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং থেকে, যা বছরে গড়ে ৫০০ কোটি টাকারও বেশি। এ ক্ষেত্রে এ সেবা হাতছাড়া হলে এ আয়ও হাতছাড়া হয়ে যাবে বিমানের।
বিমান প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বলেন, ‘এটা যারা যাবে তারা সামগ্রিকভাবেই কাজটা পাবে, থার্ড টার্মিনাল এখানে আলাদা কিছু না। আমরা চাচ্ছি আন্তর্জাতিক মান বজায় থাকুক। বিমান প্রিপারেশন নিচ্ছে অংশ নেয়ার। আমরা চাচ্ছি বেটার অ্যাটমসফেয়ার তৈরি হোক। সার্ভিসটা যেন ভালো হয়।
আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসে বিদেশ থেকে আসা প্রবাসী ও বিদেশে কাজের উদ্দেশ্যে যাওয়া কর্মীদের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায় বাংলাদেশের প্রবেশদ্বার কর্তৃপক্ষ। ফাইল ছবি
‘এটা নিয়ে আমাদের এখন স্টাডি হচ্ছে। এতে বেশি সময় আমরা নেব না। কারণ সামনের বছর থার্ড টার্মিনাল উদ্বোধন হবে, তার আগেই এটা করতে হবে।’
গত বছরের ১৫ মার্চ জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সার্ভিস কোম্পানির মোট রাজস্বের ৫ শতাংশ রয়্যালটি বাবদ বেবিচককে পরিশোধ করার কথা বিমানের। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ খাতে কোনো টাকাই বিমান বেবিচককে দেয়নি বলে সংস্থাটির এক নিরীক্ষায় জানানো হয়েছে।