হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিক রাজীব নূর এবং তার সহকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে আদিবাসী যুব ও ছাত্র সংগঠনগুলো।
এই হামলা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি উল্লেখ করে সমাবেশ থেকে হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়।
রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সোমবার বিকেলে এই বিক্ষোভ সমাবেশ হয়।
পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে হামলার মুখে পড়েন বিডিনিউজের স্পেশাল অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর রাজীব নূর, বানিয়াচং প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও কালের কণ্ঠের বানিয়াচং প্রতিনিধি মোশাহেদ মিয়া, হবিগঞ্জ সমাচার পত্রিকার বানিয়াচং প্রতিনিধি তৌহিদ মিয়া এবং দেশসেবা পত্রিকার বানিয়াচং প্রতিনিধি আলমগীর রেজা।
বিক্ষোভ সমাবেশের শুরুতে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সতেজ চাকমা বলেন, ‘আদিবাসীদের ওপর অবিচারের বিরুদ্ধে এবং আদিবাসীদের পক্ষে যারা সরব আছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন রাজীব নূর। বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেসব অনাচার সংঘটিত হয়ে আসছে, সেই অনাচারের বিরুদ্ধে রাজীব নূর একজন অন্যতম কলমযোদ্ধা।’
সংবাদমাধ্যমকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই রাষ্ট্রব্যবস্থায় সাংবাদিক রাজীব নূরের ওপর হামলা হওয়া মানে গণতন্ত্রের অবস্থান সংকুচিত হয়ে আসা। গণমাধ্যম হচ্ছে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার চতুর্থ স্তম্ভ। সেই স্তম্ভকে গলা টিপে যারা হত্যা করতে চায়, তারা কখনই গণতন্ত্রের জন্য সুখকর হতে পারে না।’
বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক টনি ম্যাথিউ চিরান বলেন, ‘রাষ্ট্রের কলমযোদ্ধাদের ওপর যারা হামলা করে তাদের এই রাষ্ট্রে থাকার অধিকার নেই। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালনকারী আমাদের কলমযোদ্ধারা যদি দিনে-দুপুরে তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে এ রকম বর্বরোচিত হামলার শিকার হন, তাহলে রাষ্ট্রের যে সাধারণ নাগরিক রয়েছে তাদের কী অবস্থা হবে?’
সংহতি বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ ত্রিপুরা বলেন, ‘রোববার বাইসাইকেলে কয়েকবার বিশ্বভ্রমণকারী ও ভ্রমণ কাহিনির লেখক রামনাথ বিশ্বাসের বাড়ি দখলের ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন আদিবাসী মানুষের বন্ধু সাংবাদিক রাজীব নূর। ২ নম্বর বানিয়াচং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান স্বীকার করেছেন, রামনাথ বিশ্বাসের বাড়ি দখল করেছেন ওয়াহেদ মিয়া।
‘আমার প্রশ্ন হচ্ছে, জনপ্রতিনিধি জানেন, মিডিয়া জানে, প্রশাসন জানে কিন্তু কীভাবে ওয়াহেদ মিয়া এত বছর যাবৎ বাড়িটি দখল করে রাখল। প্রশাসন কেন নির্বিকার হয়ে ওয়াহেদ মিয়াদের ইন্ধন দিয়ে যাচ্ছে।’
আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অলিক মৃ বিক্ষোভ সমাবেশে সঞ্চালনা করেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আদিবাসী যুব ফোরামের দপ্তর সম্পাদক মনিরা ত্রিপুরা। তিনি রামনাথ বিশ্বাসের দখল করা বাড়ি উদ্ধার এবং সাংবাদিকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান।
মনিরা ত্রিপুরা বলেন, ‘রামনাথ বিশ্বাসের বাড়ি দখলের ঘটনার সত্যতা উদঘাটন করতে গিয়ে আমাদের সাংবাদিক বন্ধু রাজীব নূর ও তার সহকর্মীরা হামলার শিকার হয়েছেন। তাই হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।’