বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ড. আকরামের মাইক্রোফোন কেড়ে নিলেন এমপি ছলিম

  •    
  • ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৮:০৭

ভিডিওতে দেখা যায়, এমপি ছলিম উদ্দিন তরফদার উত্তেজিত স্বরে বক্তব্য দিচ্ছিলেন। একই সারিতে বসা ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী। সামনে টেবিলে মাইক্রোফোন দিয়ে আকরামের কাছে ছলিম জানতে চান, তাকে ইঙ্গিত করে কেন বক্তব্য দিলেন। আকরাম হোসেন মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বক্তব্য শুরুর কিছুক্ষণ পরই তার কাছ থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়ে আবার উত্তেজিত কণ্ঠে কথা বলা শুরু করেন ছলিম।

নওগাঁর সাবেক এমপি ড. আকরাম হোসেন চৌধুরীর সঙ্গে বর্তমান এমপি ছলিম উদ্দীন তরফদারের বিরোধ প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে।

বদলগাছীতে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় এলাকার উন্নয়ন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তোপে পড়েন আকরাম। একপর্যায়ে তার হাত থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নেন এমপি ছলিম।

শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার বিলাশবাড়ী ইউনিয়নের শিবপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় এ ঘটনা ঘটে। মঞ্চে নেতাকর্মীদের সামনে সাবেক সাংসদ ও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আকরাম হোসেন চৌধুরীর কাছ থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নেন সাংসদ ছলিম উদ্দীন তরফদার।

এমন ঘটনায় নেতাকর্মীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সোমবার এ-সংক্রান্ত একটি ভিডিও ক্লিপ আসে এই প্রতিবেদকের হাতে।

ভিডিওতে দেখা যায়, এমপি ছলিম উদ্দীন তরফদার উত্তেজিত স্বরে বক্তব্য দিচ্ছেন। একই সারিতে বসা ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী। সামনে টেবিলে মাইক্রোফোন দিয়ে আকরামের কাছে ছলিম জানতে চান, তাকে ইঙ্গিত করে কেন বক্তব্য দিলেন।

আকরাম হোসেন মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বক্তব্য শুরুর কিছুক্ষণ পরই তার কাছ থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়ে আবার উত্তেজিত কণ্ঠে কথা বলা শুরু করেন ছলিম।

এ বিষয়ে ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘ওইদিন আমাকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। অনেক গালিগালাজ করা হয়েছে। তিনি যদি বুঝতেন যে এ গালিগালাজ তাকেই ছোট করবে, তাহলে হয়তো বলতেন না।

‘ওই ইউনিয়নে ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ দুটি ভাগে ভাগ হয়ে গেছে। অথচ সবাই বলে বিলাশবাড়ী আওয়ামী লীগের ঘাঁটি। যদি এমনটাই হয় তাহলে গত নির্বাচনে নৌকা কেন পরাজিত হলো? ঘাঁটি হঠাৎ করে ভেঙে গেল কেন? উদাহরণ দিয়ে বলি, সত্যিকার অর্থে দল যখন ক্ষমতায় থাকে, তখন অনেক সময় আমরা অবহেলা করি।’

ড. আকরাম বলেন, ‘দল নিয়ে চিন্তা করি না। কিন্তু বিরোধীদলীয় কেউ যখন ক্ষমতায় থাকে, তখন আমাদের অনেক চিন্তা করতে হয়। ডেপুটি স্পিকার আখতার হামিদ সিদ্দিকী নান্নু ১৭ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। তার সময়ে দুই উপজেলায় তেমন উন্নয়ন হয়নি। আমার সময়ে অনেক উন্নয়ন করেছি। উন্নয়ন হচ্ছে আমার সরকারের আমলে, আর বিএনপির নেতাকর্মীরা সত্য-মিথ্যা বলে মানুষকে জাগ্রত করার চেষ্টা করছে।’

তিনি বলেন, ‘বক্তব্যের একপর্যায়ে বলেছিলাম, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকলে মন্ত্রী, সচিবসহ বিভিন্ন দপ্তর সহযোগিতা করে। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে ছলিম উদ্দীন তরফদার মাইক্রোফোন কেড়ে নেন। তাকে আমি বোঝাতেই পারিনি যে এ বক্তব্যের শেষ পয়েন্টটা আসলে কী ছিল। মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়ে তিনি নানা ধরনের তর্ক-বিতর্ক শুরু করে দিলেন।

‘হয়তো তার মনে আঘাত লাগায় এমনটা করেছেন। কিন্তু তাকে কটাক্ষ বা লক্ষ্য করে কিছু বলিনি বা বলতে চাইনি। তিনি আমার প্রতি অবিচার করেছেন এবং লাঞ্ছিত করেছেন সবার সামনে। তিনি হয়তো আমাকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করেছিলেন। আমি ধৈর্য ধরে ছিলাম।’

এ বিষয়ে নওগাঁ-৩ (বদলগাছী-মহাদেবপুর) আসনের সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দীন তরফদার বলেন, ‘আমি সেদিন বলেছিলাম সামনে সম্মেলন উপলক্ষে যে উদ্দেশ্যে বর্ধিত সভা হচ্ছিল, সে বিষয়ে আপনে (ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী) কথা বলেন। তিনি বর্ধিত সভার বিষয়ে না বলে তার সময়ে কী কী উন্নয়ন করেছেন সেসব কথা বলছিলেন। তিনি আমাকে উদ্দেশ করে কথাগুলো বলছিলেন।’

‘ওই ইউনিয়নে ইউপি নির্বাচনে প্রার্থী সিলেকশনে যদি ভুল হয়, তাহলে ২০১৪ সালে আপনি নৌকা প্রতীকে নির্বাচনের পরও কেন আমার কাছে পরাজিত হলেন। এর জবাবটা কে দেবে? একজন ভালো এমপি হতে গেলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক বা যোগাযোগ রাখতে হবে। এতে মন্ত্রী ও সচিবরা গুরুত্ব দেবেন। এটা দিয়ে তিনি আসলে কী বোঝাতে চেয়েছেন। এ কারণে তাকে ল্যাঙ্গুয়েজ (ভাষা) ঠিক রেখে কথাগুলো বলতে বলেছিলাম। কোন জায়গায় কী বক্তব্য দিচ্ছেন আপনি। জনগণ হচ্ছে ক্ষমতার উৎস ও মালিক। জনগণ চাইলে সম্মান দিয়ে চেয়ারে বসাতে পারে আবার নামিয়েও দিতে পারে।’

মাইক্রোফোন কেড়ে নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এমপি ছলিম বলেন, ‘নৌকার জন্য যখন আপনার এত ভালোবাসা তাহলে মাইক্রোফোন নিয়ে একটু বলেন, ২০১৮ সালে নির্বাচনের সময় কোথাও কারোর জন্য ভোট চেয়েছেন কি না বা তার কোনো প্রমাণ কি দেখাতে পারবেন। তখন তিনি মাইক্রোফোন নিয়ে বললেন, ওই সময় বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান থাকায় ভোট চাওয়া সম্ভব হয়নি। তখন আমি মাইক্রোফোন তার কাছ থেকে নিয়ে নিই। এটাই ছিল মূল কথা।’

তবে মাইক্রোফোন কেড়ে নেয়ার মতো আসলে ঘটনা হয়নি বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে যদি কোনো সংবাদ হয়, আমার কোনো আপত্তি নেই । তবে এটা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কোনো সংবাদ আমরা চাই না।’

যা বললেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও স্থানীয়রা

জাহাঙ্গীর আলম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘বর্তমান এমপি অযোগ্যতার প্রমাণ দিলেন। তিনি এমপি হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না। সবার সামনে একজন উচ্চশিক্ষিত ও সাবেক এমপির কাছ থেকে মাইক্রোফোন কেড়ে নেয়া উচিত হয়নি।’

ইউসুফ আব্দুল্লাহ নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘এমন ঘটনার ধিক্কার ও নিন্দা জানাই। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি সঠিক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।’

স্থানীয় বিলাশবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হোসেন বলেন, ‘এটা দলীয় বিষয়, তাই এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’

বিষয়টি নিয়ে কথা হলে বদলগাছী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু খালেদ বুলু বলেন, ‘সেদিনের অনুষ্ঠানে আমিও উপস্থিত ছিলাম। সাবেক ও বর্তমান এমপির মাঝে এলাকার উন্নয়ন নিয়ে সামান্য ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। পরে ওটা নিরসন হয়েছে।’

২০০৮ সালে সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিম। প্রায় তিন বছর দলের বাইরে রাখা হয় তাকে। ২০১৬ সালের দিকে তিনি আবার দলে অন্তর্ভুক্ত হন।

২০১৫ থেকে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী।

এ বিভাগের আরো খবর