ফেনীতে থামছে না কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য। নানান অপরাধে জড়াচ্ছে সংঘবদ্ধ কিশোররা। অভিযোগ রয়েছে, রাজনীতির ছত্রছায়ায় কিশোরেরা বেপরোয়া। সম্প্রতি সজিব নামের এক কিশোর খুন হয়েছে এমনই একটি গ্যাংয়ের হাতে।
শহরে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে মাঠে নেমেছে পুলিশ।
ফেনী শহরের সব কটি স্কুলে আছে কিশোর গ্যাংয়ের একাধিক গ্রুপ। অনুসন্ধানে ‘এলবিবিজি’ নামের একটি নারী গ্যাংসহ ২২টি গ্রুপের নাম পাওয়া গেছে।
এসব গ্যাংয়ের আস্তানা ফেনী আলিয়া মাদ্রাসা মার্কেটের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা, কুমিল্লা বাসস্ট্যান্ড আয়কর অফিসসংলগ্ন এলাকা, নাজির রোড, শহরের শান্তি কোম্পানি রোড, মিজান রোড, একাডেমি, সালাহ উদ্দিন মোড়, পাঠানবাড়ী, কায়সার সড়ক, পুলিশ কোয়ার্টার, রামপুর, পশ্চিম উকিলপাড়া, সেন্ট্রাল স্কুল, ডাক্তারপাড়া, পৌরসভাসংলগ্ন ও মাস্টারপাড়া।
সম্প্রতি কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে বিরোধে ছুরিকাহত হয়ে ১৫ দিন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে রোববার মারা যায় ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার সজিব নামের এক কিশোর। কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্যে জেলাজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা জানায়, কিশোর গ্যাংয়ের ছেলেরা শহরের বিভিন্ন স্কুল ও কলেজপডুয়া শিক্ষার্থী। এক গ্রুপের কোনো সদস্যকে মারধরের ঘটনা ঘটলে প্রতিশোধ নিতে অন্য গ্রুপের সদস্যরা ঝাঁপিয়ে পড়ে। স্কুলব্যাগে থাকে চাপাতি, পকেটে ক্ষুর। আধিপত্য বিস্তার, ছোট ভাই-বড় ভাই সম্বোধন নিয়ে বিরোধ এবং প্রেমসংক্রান্ত রেষারেষিতে মারামারিতে লিপ্ত হয় এরা।
ফেনী আলিয়া মার্কেটের দোকান মালিক নুরুল হুদা বায়েজিদ জানান, প্রকাশ্যে চলে মদ-গাঁজাসহ নানা অপকর্ম। তাদের দৌরাত্ম্যে বন্ধ থাকে মার্কেটের বেশির ভাগ দোকান। তাদের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পান না দোকান মালিকরা। কিশোর গ্যাংয়ের কারণে দোকান মালিকরা অতিষ্ঠ। দিন দিন কাস্টমার কমে যাচ্ছে। সকাল অথবা বিকেলে প্রতিদিন মারামারি লেগে থাকে এদের মধ্যে। বিকেল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত আসর চলে।
ফেনী শহরের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, শহরের বিভিন্ন স্থানে সক্রিয় রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের একাধিক গ্রুপ। এলাকাভিত্তিক এসব গ্যাং বানিয়ে আধিপত্য বিস্তার করাই তাদের কাজ। এসব গ্রুপের ইন্ধনদাতা রাজনৈতিক পরিচয়ধারী এলাকার ‘বড় ভাইরা’। কিশোরদের নিজেদের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে মামলা-হামলার পর আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে থাকে এসব বড় ভাই। ফলে ক্রমান্বয়ে বাড়ছে কিশোর অপরাধ।
অনেক সময় এসব বড় ভাইয়ের তদবিরের কারণে বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে মামলার তদন্তকাজ। আর এসব ঘটনায় বেশ কয়েকটি মামলা হলেও রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় হোতারা।
কিশোর গ্যাংয়ের ব্যাপারে ফেনীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাদিয়া ফারজানা বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের ডেটাবেস তৈরি করা হচ্ছে। নিজ নিজ থানা এলাকায় বিট অফিসাররা তথ্য নিচ্ছেন।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে একটি কিশোর গ্যাংয়ের এক দলনেতা বলেন, ‘আমরা বন্ধুদের নিয়ে বসে আড্ডা দিই। আমরা তো কারো ক্ষতি করছি না। মাঝে মাঝে নিজেদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি হলে গালমন্দ হয়। এসব তামাশা, অন্য কিছু নয়।’