ইছাখালী গ্রামের গৃহস্থ পরিবার হাবিবুর মোল্লার ছয়টি, আকু মোল্যার তিনটি এবং আরিফ মোল্লার দুটি ঘর এ সপ্তাহে নদীতে চলে গেছে। বিলীন হয়ে গেছে শত শত লোকের চাষাবাদের জমি, অসংখ্য গাছপালা।
কখন কে বসতবাড়ি হারা হবেন, এই শঙ্কা তাড়িয়ে ফিরছে গ্রামবাসীদের। সে কারণে কেউ কেউ নিজেরাই বাড়িঘর ভেঙে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন আগেভাগে।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ইছাখালী-ধোলইতলা-ডুবসি এলাকায় মধুমতী নদীতে এবারও ভাঙন শুরু হয়েছে। প্রতি বছর পানি বাড়া আর কমার সময় এসব এলাকার মানুষ নদীভাঙনের শিকার হয়। নদীগর্ভে হারিয়ে যায় জমিজমা, ঘরবাড়ি।
গত ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে ভাঙতে ভাঙতে এলাকার মানচিত্রই বদলে গেছে। তিন শতাধিক পরিবার ইতোমধ্যে নদীর অন্যপারে বসতি গড়েছে, যা এখন পড়েছে নড়াইল জেলার মধ্যে। গোপালগঞ্জের বাসিন্দা হয়ে নড়াইলের মধ্যে বসবাস করায় কোনো জেলারই সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না তারা। অনেক ক্ষেত্রে মধুমতী নদী একই পরিবারকে দুই ভাগ করে রেখেছে।
এলাকাবাসী ও ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, প্রতি বছর পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ বর্ষার সময় কিছু ‘জিও ব্যাগ’ এনে রাখে। নদীভাঙন শুরু হলে সেগুলো ভাঙন এলাকায় ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা চালায়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার হাবিবুর রহমান মোল্লা ওরফে কাফি মোল্লা জানান, গত ৮ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার তার বসতঘরসহ ছয়টি ঘর, গাছপালা সবই মধুমতী নদীর ভাঙনের শিকার হয়েছে। তিনি এখন নিঃস্ব। এই ক্ষতি তিনি কবে এবং কীভাবে কাটিয়ে উঠবেন, তা বুঝতে পারছেন না।
ওই একই গ্রামের আরিফ মোল্লা ও আকু মোল্লার দু-তিনটি করে ঘর নদীভাঙনের শিকার হয়েছে। বাড়িঘরের সব কিছুই মধুমতী নদীতে চলে গেছে।
ওই এলাকায় আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সাফি মোল্লা, এনায়েত মোল্লা, গোলজার মোল্লা, একরাম মোল্লা, আহসান মোল্লাসহ আরও অনেকে। সবারই জায়গাজমি ভেঙে নদীতে চলে গেছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, গোপালগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুর রহমান জানান, মধুমতী নদীতে ওই এলাকায় প্রতি বছরই ভাঙনের কবলে পড়ে। নদী ভাঙন শুরু হলে তা রোধে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা তারা অব্যাহত রাখেন। এ বছরও তা করবেন।