বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

স্বপ্নে পাওয়া ‘ক্ষমতায়’ তিনি এখন ‘ক্যানসার চিকিৎসক’

  •    
  • ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ২৩:২৮

শিক্ষক পরিমল মণ্ডল বলেন, ‘মুকুল যে চিকিৎসা দিচ্ছেন তা স্পষ্ট অপচিকিৎসা। সেখানে তার কিছু নিজের লোক আছে। যারা গুজব ছড়ায়, মুকুলের চিকিৎসায় লোকজন সুস্থ হয়ে যাচ্ছে।’

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের বলভদ্রপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মুকিত ওরফে মুকুল। কাজ করতেন দিনমজুরের। হঠাৎ করে আট মাস আগে থেকে স্বপ্নে ‘আধ্যাত্মিক ক্ষমতা’ পাওয়ার কথা বলে শুরু করেছেন মরণব্যাধি ক্যানসারসহ জটিল সব রোগের চিকিৎসা। বনে গেছে পুরো কবিরাজ।

সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার করে তিনি ঝাড়ফুঁক দিয়ে ‘চিকিৎসা’ দেন। তার ‘চিকিৎসা’ পেতে বাড়িতে শ শ লোক ভিড় করছে জেলা ও জেলার বাইরে থেকে।

এমনকি রোগী সেরে ওঠার বকশিশ ভাগ-বাটোয়ারার জন্য করা হয়েছে একটি কমিটিও। যে কমিটিতে রয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যসহ অন্যরা।

তবে ঝাড়ফুঁকের চিকিৎসাকে অপচিকিৎসা বলে স্বাস্থ্য বিভাগ দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেছে। স্থানীয় প্রশাসনও বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নেয়ার কথা জানিয়েছে।

শনিবার রাতে উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের বলভদ্রপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অনেক মানুষ চিৎকিসার জন্য ভিড় করছেন লোকেন মণ্ডল নামের একজনের বাড়ি। যেটি কথিত কবিরাজ মুকুলের বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে।

একটি ঘরে বসে নিমপাতার ঝাড়ফুঁক দিয়ে চিকিৎসা করছেন মুকুল।

সেখানে তিনি মরণব্যাধি ক্যানসার, প্যারালাইসিস, পাইলস, স্ট্রোক, কোমর ব্যথা, বাত, জন্ডিস, হাপানিসহ অসংখ্য রোগের চিকিৎসা করছেন বলে জানান।

মুকুল নিউজবাংলাকে বলেন, স্বপ্নের মাধ্যমে তিনি আধ্যাত্মিক শক্তি পেয়েছেন। সে শক্তিতেই তিনি ঝাড়ফুঁক, তেলপড়া ও পানিপড়া দিচ্ছেন।

অনেক রোগী সুস্থ হয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।

ঝাড়ফুঁক দিলেও কোনো টাকা নেন না বলেও জানান। তবে যাদের রোগ সারে তারা ঘরের বাইরে রাখা দানবাক্সে টাকা ও অন্য সামগ্রী দেন।

তবে তার এমন চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন এমন কোনো রোগীকে সেখানে পাওয়া যায়নি। অবশ্য উপস্থিত অনেকেই বলেছেন, তারা সুস্থ হওয়ার খবর শুনেছেন।

কিশোর মণ্ডল নামের একজন দাবি করেন, তার স্ত্রীকে ঝাড়ফুঁক ও পানিপড়া দিয়ে কোমর ব্যথা থেকে সুস্থ করেছেন মুকুল।

তার স্ত্রী কোথায় জানতে চাইলে বলেন, ‘সে বাড়িতে। আমার ভালো লাগে বলে এখানে এসেছি।’

জাহাঙ্গীর হোসেন নামের স্থানীয় এক যুবক বলেন, ‘মুকুল কাকাকে কখনও কবিরাজি করতে দেখিনি। সে মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে সংসার চালাত। এখন দেখি হঠাৎ করে বড় কবিরাজ হয়ে গেছে। তার চিকিৎসায় কেউ সুস্থ হয়েছে বলে শুনিনি।’

বনগ্রাম ইউনিয়নের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পরিমল মণ্ডল নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মুকুল যে চিকিৎসা দিচ্ছেন তা স্পষ্ট অপচিকিৎসা। সেখানে তার কিছু নিজের লোক আছে। যারা গুজব ছড়ায়, মুকুলের চিকিৎসায় লোকজন সুস্থ হয়ে যাচ্ছে।’

তিনি জানান, কিছু মানুষকে পরিকল্পিতভাবে সেখানে রাখা হয়েছে মুকুলের গুণগান গাইতে, যেন চিকিৎসা নিতে যাওয়া লোকজন বিশ্বাস করেন।

নারীদের টার্গেট করেই মূলত মুকুলের প্রতারণার ব্যবসা দিনকে দিন জমজমাট হচ্ছে বলেও দাবি করেন ওই শিক্ষক।

প্রতারণা করতে যে কমিটি করেছে মুকুল ও তার সহযোগীরা, কিছুদিন আগে টাকা ভাগাভাগি নিয়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতিও হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।

বনগ্রাম ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘মুকুল কবিরাজ হওয়ার পর সপ্তাহে শনি ও মঙ্গলবার রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা রোগীদের সেবা দিয়ে থাকেন। রোগী দেখায় কোনো ধরনের ঝামেলা যাতে না হয় সে জন্য আমিসহ ৩৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছি।’

যার বাড়িতে বসে চিকিৎসার নামে প্রতারণা করা হচ্ছে তার মালিক লোকেন মণ্ডল বলেন, ‘মুকুল গরিব মানুষ। যখন যে কাজ পেত সেটা করত। স্বপ্নে গাজী কালুকে পেয়ে কবিরাজ হয়েছেন। তার বাড়ি যেতে হলে হাঁটুসমান কাদামাটি পার হতে হয়। এ জন্য আমার বাড়িতে বসে রোগী দেখেন।’

বাগেরহাটের সিভিল সার্জন জালাল আহমেদ বলেন, ‘চিকিৎসাবিজ্ঞান কখনোই ঝাড়ফুঁকে বিশ্বাস করে না। ওই কবিরাজ যেটা করছে সেটা অপচিকিৎসা। সে সহজ-সরল রোগীদের বোকা বানাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে দ্রুত তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

মোরেলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। ঘটনা সত্য হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরো খবর