বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ফিতায় আটকে ৬টি থানা শিক্ষা অফিস

  •    
  • ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ২২:৫৮

সমন্বয়ের জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কার কাছে যাবেন সেটা নিয়ে জটিলতা বাড়ছে। এ কারণে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক বরাবর একটি আবেদনে রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকার ১৫৭টি বিদ্যালয় নিয়ে ছয়টি প্রাথমিক থানা শিক্ষা অফিস স্থাপনের সুপারিশ করা হয়।

সদর থানা শিক্ষা অফিস ভেঙে রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় আরও ছয়টি থানা শিক্ষা অফিস স্থাপনের জন্য করা আবেদন লাল ফিতায় বন্দি দুই বছর ধরে। এ কারণে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ছাড়াও সমন্বয়, বদলি, শিক্ষকদের বাড়ি ভাড়াসহ নানা জটিলতায় পড়ছে দপ্তরটি।

প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানিয়েছে, ২০২০ সালের ১৫ জুলাই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ এম শাহজাহান সিদ্দিক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক বরাবর একটি আবেদন পাঠান। তাতে রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকার ১৫৭টি বিদ্যালয় নিয়ে ছয়টি প্রাথমিক থানা শিক্ষা অফিস স্থাপন সংক্রান্ত বিষয়ে তথ্য দেন তিনি।

সেই পত্রে একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ২৬টি বিদ্যালয় নিয়ে হাজিরহাট থানা শিক্ষা অফিস, ২৫টি বিদ্যালয় নিয়ে পরশুরাম, ২৫টি বিদ্যালয় নিয়ে সাহেবগঞ্জ, ৩০টি বিদ্যালয় নিয়ে কোতোয়ালি, একটি শিশু কল্যাণ বিদ্যালয়সহ ২৫টি বিদ্যালয় নিয়ে তাজহাট আর ২৬টি বিদ্যালয় নিয়ে মাহিগঞ্জ থানা শিক্ষা অফিস করার বিষয়ে তথ্য পাঠানো হয়েছে।

এক শিক্ষা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘একটি উপজেলার শিক্ষা কমিটির সভাপতি হন সেই উপজেলার নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান। তিনি এই বিভাগের সব কিছুই দেখেন। কিন্তু রংপুর সদর আর রংপুর সিটি করপোরেশন পুরোটাই আলাদা। মহানগর কমিটি না থাকায় সমন্বয়ের জন্য উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কার কাছে যাবেন সেটা নিয়ে জটিলতা বাড়ছে।

‘বিদ্যালয় নির্মাণ, পুনঃনির্মাণ, ছোট বড় সংস্কার, অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রস্তাব পাঠানোর ক্ষেত্রে শিক্ষা কমিটির অনুমোদন নেয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে উপজেলা সমন্বয় বদলিতেও শিক্ষা কমিটির প্রয়োজন। কিন্তু সিটি করপোরেশন এলাকা উপজেলা চেয়ারম্যানের এখতিয়ার বহির্ভুত হওয়ায় এসব বিষয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে।’

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ধরুন কোনো বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আছে ২০০ জন। সেখানে শিক্ষক আছেন ১০ জন। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে আরও বেশি শিক্ষক আছেন। কিন্তু ওই বিদ্যালয়ে এত শিক্ষকের প্রয়োজন নেই।

‘ঠিক আরেকটি বিদ্যালয়ে আছে ২০০ শিক্ষার্থী কিন্তু শিক্ষক আছে মাত্র চার জন। এই চারজন শিক্ষক দিয়ে ২০০ শিক্ষার্থীকে কোনোভাবেই মানসম্মত পাঠদান সম্ভব নয়। এই অবস্থায় শিক্ষার্থীদের সমন্বয়-বদলি খুবই প্রয়োজন। যেটা সম্ভব হচ্ছে না।

‘শিক্ষকের শূন্যপদ পূরন, পদায়ন, উপজেলা থেকে সিটি করপোরেশন এলাকায় বদলি– এই বিষয়গুলো শিক্ষা অফিসার সমন্বয় করতে পারেন না। কিন্তু তিনি কোন কমিটিতে গিয়ে কথাটা তুলবেন?’

ওই কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এখন তো শিক্ষা অফিসার উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে সমন্বয় করেন বা করবেন। উপজেলা চেয়ারম্যান তার এলাকার স্বার্থ দেখবেন, এটাই স্বাভাবিক। ফলে উপজেলা আর সিটি করপোরেশন এলাকার বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে পক্ষপাত বা বৈষম্য হয়।’

বিদ্যালয় অনুযায়ী কর্মকর্তার সংকট

সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আখতারুজ্জামান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘রংপুর সদর উপজেলায় ২২৩ প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এ জন্য একজন উপজেলা শিক্ষা অফিসার, ৯ জন সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার, একজন উচ্চমান সহকারী ও একজন হিসাব সহকারী ও তিন জন অফিস সহকারী রয়েছেন। সদর উপজেলা ও রংপুর সিটি করপোরেশন এলাকার জন্য কর্মকর্তা কর্মচারী সংকট রয়েছে।

সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘প্রতি মাসে যে সমস্যা হচ্ছে উপজেলা আর সিটির ভিতরে শিক্ষকদের বেতন ভাতা, বাড়ি ভাড়া ও যাতায়াত ভাতা নিয়ে। এত বড় সিটি আর উপজেলায় বহু শিক্ষক। কাজের এত চাপ যে কোনো কোনো মাসে ১০ তারিখের দিকে বেতন দিতে হয়।’

বিদ্যালয় পরিদর্শনে সমস্যা

নিয়ম অনুযায়ী, একজন উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে প্রতি মাসে কমপক্ষে পাঁচটি বিদ্যালয় পরিদর্শন করতে হবে। সে অনুযায়ী তার বছরে ৬০টি বিদ্যালয় পরিদর্শন করার কথা। কিন্তু বিদ্যালয় সংখ্যা বেশি থাকায় মাসের পর মাস অনেক বিদ্যালয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার পরিদর্শনে যেতে পারেন না। একই সঙ্গে অফিসের কাজের চাপও বহুগুণ।

রংপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও শিক্ষা কমিটির সভাপতি নাছিমা জামান ববি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন এলাকার বিদ্যালয়গুলো নিয়ে একটু জটিলতা আছে। আমি বা আমরা সেগুলো সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। এই সিদ্ধান্ত শিক্ষা কর্মকর্তারা নিয়ে থাকেন। যদি শিক্ষা থানা হয়, সে ক্ষেত্রে এই জটিলতা দূর হবে।’

রংপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ এম শাহজাহান সিদ্দিক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মহানগর এবং উপজেলা নিয়ে একটু জটিলতা আছে। বিষয়টি আমি ডিজি মহোদয়কে লিখিতভাবে জানিয়েছি এবং ছয়টি শিক্ষা থানা করারও প্রস্তাব পাঠিয়েছি। এ বিষয়ে নতুন করে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মুহিবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে চিঠি এলে এতদিনেও কেন হয়নি সে বিষয়টি আমি খোঁজ নিব।’

এ বিভাগের আরো খবর