শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের কাছ থেকে সফলভাবে সবকিছু আদায় করেছে বলে দাবি করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহ্মুদ। বলেছেন, আটকে যাওয়া তিস্তা চুক্তিও হয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো আপত্তি নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে। সেটি ফলপ্রসূ হবে।’
শেখ হাসিনার চার দিনের ভারত সফর শেষে এই সফরের প্রাপ্তি মেলাতে যখন চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে, বিএনপি ও সমমনারা যখন দাবি করছে, এই সফরের প্রাপ্তি শূন্য, তখন রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক বৃক্ষরোপণ আলোচনা অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের কাছ থেকে সফলভাবে সবকিছু আদায় করেছেন। সমুদ্রসীমা আদায় করেছেন। ছিটমহল নিয়ে আমাদের যে দাবি, সেটি চুক্তি হওয়ার ৪০ বছর পরও ছিল না, বর্তমান সরকার সেটিও আদায় করেছেন।’
প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে বিএনপির মূল্যায়নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিএনপি তো সব সময় বিভ্রান্তি ছড়াতেই ব্যস্ত থাকে। প্রধানমন্ত্রী সফলভাবে ভারত সফর করে এসেছেন। এতে তাদের মন খারাপ হয়েছে। তাই আবোলতাবোল বলছেন।’
আওয়ামী লীগের টানা এক যুগের শাসনামলে ভারতের সঙ্গে স্থলসীমানা চুক্তি বাস্তবায়ন করে ছিটমহল বিনিময়ের ফলে বাংলাদেশ ১০ হাজার একর ভূমি বেশি পেয়েছে। আন্তর্জাতিক আদালতে চুক্তি করে জলসীমানাও চিহ্নিত হয়েছে।
দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের কাঁটা হিসেবে উঠে আসা সীমান্ত হত্যা কমিয়ে আনার চেষ্টায় আছে দুই পক্ষ, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগের তুলনায় এই হত্যা কমেছে অনেকটা। এটি শূন্যে নামিয়ে আনতে এবারও দুই প্রধানমন্ত্রী যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন।
পাহাড়সম বাণিজ্য ঘাটতিও ধীরে ধীরে কমে আসছে। বাংলাদেশের রপ্তানি প্রথমে এক বিলিয়ন, পরে দুই বিলিয়ন ছাড়িয়েছে। এবার ভারতের মাটি ব্যবহার করে বিনা মাসুলে বাংলাদেশ ট্রানজিট সুবিধা আদায় করেছে।
তবে ২০১১ সালে সইয়ের আগ মুহূর্তে আটকে যাওয়া তিস্তা চুক্তি এখনও করতে না পারা সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি বাধা হিসেবে উঠে আসছে। এবারের সফর শেষেও আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ রয়েছে এই চু্ক্তি। যদিও ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের সময় দেশটির সরকারপ্রধান নরেন্দ্র মোদি সরাসরি বলেছিলেন, বাংলাদেশে শেখ হাসিনার ও তার সরকারের ওই মেয়াদেই এই চুক্তি সই হবে।
তথ্যমন্ত্রী এবারের সফর নিয়ে বলেন, ‘এই সফরে অনেক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে ভারতের স্থলভাগ ব্যবহার করে বিনা শুল্কে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানি করা। যার জন্য আমরা বহুদিন ধরে চেষ্টা করে আসছিলাম। ফাইনালি সেটার সমাধান হয়েছে।
‘বাংলাদেশের চট্টগ্রাম এবং মোংলা বন্দর ব্যবহার করে নেপাল এবং ভুটান তাদের পণ্য আমদানি ও রপ্তানি করতে পারবে।’
তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এই চুক্তির ব্যাপারে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কোনো আপত্তি নেই। তবে রাজ্য সরকারের একটি অনুমোদন লাগবে। তাই বিষয়টি এতদিন আগায়নি। এটা নিয়ে আমাদের আলোচনা চলছে। ভবিষ্যতে একটা সমাধান হবে বলে আশা করছি। কুশিয়ারা নদীর পানি নিয়েও একটি চুক্তি হয়েছে। সেটিও বড় একটি অর্জন।’
এর আগে একটি ডালিম গাছের চারা লাগিয়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এখন সবাই গাছ লাগানোর ব্যাপারে সচেতন হয়েছে। সবাই ছাদবাগান করছে। আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি চালু করেছি।’
প্রেস ক্লাব প্রাঙ্গণে ফুলগাছ রোপণের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘গাছ আমাদের পরিবেশ সুরক্ষা করে। এখানে চাপাসহ আরও ফুলের গাছ লাগাতে হবে। যেন গন্ধে ম-ম করে চারপাশ। এখানে দুই পাশে নান্দনিক সবুজ চত্বর থাকবে। সবাইকে এই ব্যাপারে উৎসাহিত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমাদের এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’