ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝেও। প্রবাসী নারীদের কয়েকজন জানিয়েছেন, রানির চলে যাওয়া তাদের এতটাই মর্মাহত করেছে যে কেউ কেউ নিজের কাজেও মনঃসংযোগ করতে পারছিলেন না।
অন্যদিকে সাত দশক পর ব্রিটেনে নতুন রাজার অভিষেক ঘটল, এমন দুর্লভ ঘটনার সাক্ষী হতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন প্রবাসীরা। ৭৩ বছর বয়সী চার্লস রাজা হিসেবে অধিষ্ঠিত হওয়ায় প্রবাসীদের উঠতি বয়সী সন্তানরা মনে করছে তারা হয়তো আরও একটি নতুন রাজা বা রানির রাজকীয় অভিষেক অনুষ্ঠান নিজের চোখে দেখতে পারবেন।
এদিকে ব্রিটিশ রাজপরিবারের সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যুর পর তার শাশুড়ি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও স্বামী প্রিন্স চার্লসের বৈরিতাপূর্ণ আচরণ এখনও মেনে নিতে পারছেন না অনেক প্রবাসী।
ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যু ও তার জ্যেষ্ঠপুত্র প্রিন্স চার্লসের রাজা হিসেবে অভিষেক হওয়াসহ রাজপরিবারের এমন ঐতিহাসিক পালাবদল নিয়ে বিশ্ববাসীর মনোযোগ যখন যুক্তরাজ্যকে ঘিরে তখন এসব বিষয়ে প্রবাসীদের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছে নিউজবাংলা।
যুক্তরাজ্যে প্রবাসী বাংলাদেশির সংখ্যা পাঁচ লাখের মতো। বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে তাদের।
দুই দশকের বেশি সময় যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা চিকিৎসক আসমা আক্তার মিতা বলেন, ‘রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর ঘটনাটি এখনও বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। আমি ভেবেছিলাম উন্নত ও রাজকীয় চিকিৎসায় এ যাত্রায়ও সেরে উঠবেন রানি। তবে তা আর হয়ে ওঠেনি। কঠিন এক সত্যের মুখোমুখি হয়েছি। আমরা সত্যি সত্যি হারিয়ে ফেলেছি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে।
‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হাসপাতাল থেকে ফিরে এসে রানির মৃত্যুর খবর শুনে আর কাজে মনোযোগ দিতে পারছিলাম না। ভীষণ আপসেট লাগছে। রানি অনেক বেশি হাসি-খুশি ও জনবান্ধব ছিলেন।’
যুক্তরাজ্যের সাউদার্ন হ্যাম্সট্যাডে নিজের বাড়ির ফুলবাগানে চিকিৎসক আসমা আক্তার মিতা (বাঁয়ে), তার স্বামী ও অতিথিরা। ছবি: ফেসবুক
১৯৮৩ সালে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের বাংলাদেশ সফরের কথা স্মরণ করে মিতা বলেন, ‘রানিকে একপলক দেখতে আমরা অনেকে (ভিকারুন নিসা নূন স্কুলের শিশু শিক্ষার্থী) ছুটে গিয়েছিলাম। আমি দৌড়ে একদম কাছে চলে গিয়েছিলাম রানির। আমার দিকে হাত তুলে মিষ্টি হাসি দিয়েছিলেন রানি। এখনও স্পষ্ট সেই স্মৃতি।’
রানির মৃত্যুর ঘটনায় লন্ডনে সফটওয়্যার কোয়ালিটি অ্যানালিস্ট হিসেবে কর্মরত ফাহমিদা আক্তার জানান, ‘কমনওয়েলথ দেশভুক্ত হিসেবে আমরা একজন অভিভাবককে হারালাম। রানিকে বিদায় জানাতে হবে বলে কষ্ট হচ্ছে। রানির শেষকৃত্যের দিন এখানে সরকারি ছুটি থাকতে পারে। আমরা পরিবার নিয়ে সেখানে যেতে পারি।’
যুক্তরাজ্যের একটি স্টেডিয়ামে সফটওয়্যার কোয়ালিটি অ্যানালিস্ট ফাহমিদা আক্তার ও তার ছেলে। ছবি: ফেসবুক
নতুন রাজার অভিষেক প্রসঙ্গে দুই সন্তানের মা আসমা আক্তার মিতা বলেন, ‘আমার দুই ছেলেমেয়েই নতুন রাজার রাজকীয় অভিষেক নিয়ে খুবই উচ্ছ্বসিত। তারা মনে করছে এমন দুর্লভ অভিষেক অনুষ্ঠান হয়তো আরও কয়েকটি দেখতে পারবে।’
এদিকে ব্রিটিশ রাজপরিবারের সদস্যদের বিতর্কিত জীবনযাপন-বিয়ে ও প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যুতে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও তার ছেলে এবং ডায়ানার স্বামী প্রিন্স চার্লসের রহস্যময় ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন লন্ডনপ্রবাসী শেখ চৌধুরী।
১৯৮৫ সালে সিলেট থেকে লন্ডনে পাড়ি দেয়া শেখ চৌধুরী আরও বলেন, ‘প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যুর দায় রানি ও প্রিন্স চার্লস এড়াতে পারেন না। রাজপরিবারের সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্র প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যুর ঘটনায় ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের প্রতি অনেক প্রবাসীরই ক্ষোভ ও ঘৃণা জন্মেছে।’
যুক্তরাজ্যে ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে ১৯৮৫ সালে সিলেট থেকে লন্ডনে পাড়ি দেয়া শেখ চৌধুরী। ছবি: ফেসবুক
বামিংহাম সিটি কাউন্সিলে কর্মরত শেখ চৌধুরী আরও বলেন, ‘ব্রিটিশ আইন অনুযায়ী, কোনো ডিভোর্সি (তালাকপ্রাপ্ত) নারী (ক্যামিলা পারকার) কখনই রানি হতে পারেন না। তবে তারা নিজেদের সুবিধামতো আইন, এমন একজনকে রানি করেছেন যিনি ডায়ানা হত্যায় পরোক্ষ দায় এড়াতে পারেন না।’
নতুন রাজা চার্লস প্রসঙ্গে ফাহমিদা আক্তার আরও বলেন, ‘অভিষেকের দিনে চার্লসের দেয়া বক্তব্যে সবার জন্য সম-অধিকার গুরুত্ব পাওয়ায় মনে হচ্ছে তিনি রানির আদর্শ ও শিক্ষাকে কিছুটা হলেও ধারণ করতে পেরেছেন।’
মা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর এক দিন পর শনিবার ব্রিটেনের রাজা হিসেবে সিংহাসনে বসেন প্রিন্স চার্লস ফিলিপ আর্থার জর্জ। তিনি পরিচিতি পাবেন যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লস হিসেবে।
যুক্তরাজ্যে প্রবাসী নারীদের সঙ্গে সফটওয়্যার কোয়ালিটি অ্যানালিস্ট ফাহমিদা আক্তার (ডানে)। ছবি: ফেসবুক
স্থানীয় সময় শনিবার সকালে লন্ডনের সেন্ট জেমসেস প্রাসাদে এক সাড়ম্বরপূর্ণ আয়োজন ‘অ্যাকসেশন কাউন্সিলের’ মাধ্যমে চার্লসকে রাজা হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। আজ যুক্তরাজ্যজুড়ে রাজার অভিষেক অনুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে।
যুক্তরাজ্যে দীর্ঘ ৭০ বছর সিংহাসনে থাকা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের কোহিনূরখচিত মুকুটটি পেতে যাচ্ছেন রাজা তৃতীয় চার্লসের দ্বিতীয় স্ত্রী ক্যামিলা পারকার।