লাল-হলুদ-বেগুনি শাড়ি আর খোপায় বাহারি ফুল! ঢোল আর মাদলের তালে নাচে-গানে নওগাঁয় উদযাপিত হলো নৃগোষ্ঠীগুলোর ঐতিহ্যবাহী ক্যারম উৎসব।
শনিবার বিকেল ৫টার দিকে নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলা শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে ওই উৎসব পালিত হয়।
সমতল ভূমির ওড়াও, মুন্ডা, সাঁওতাল, মাহাতো, হাড়িসহ বিভিন্ন জাতিসত্ত্বার সবচেয়ে বড় পার্বন ক্যারম উৎসবে বর্ণিল সাজ আর নাচ-গানে নিজেদের ঐতিহ্য তুলে ধরে জেলার ২৫টি নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক দল।
এর আগে দুপুর থেকেই বিভিন্ন স্থান থেকে নেচে গেয়ে আসতে শুরু করেন বিভিন্ন সম্প্রতায়ের দলবদ্ধ নারী-পুরুষ। নিজ ভাষার গান আর নাচের ছন্দে অংশ নেন তরুণ-তরুণী ও যুবক-যুবতীরাও।
ভাদ্রের বিকেলে বৈচিত্র্যময় এ উৎসবটি দেখতে হাজির হয় নানা শ্রেণি-পেশার বিপুল সংখ্যক মানুষ।
অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া উজ্জল খালকো ও বসাক পাহান জানান, উপোসের মধ্য দিয়ে কারাম পূজা শুরু করেন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ। তারা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপোস থাকেন। সন্ধ্যার পর মাদল, ঢোল, করতাল ও ঝুমকির তালে তালে নেচে-গেয়ে এলাকা থেকে কারাম গাছের (খিল কদম) ডাল তুলে আনেন। পরে তারা একটি পূজার বেদি নির্মাণ করেন।
সূর্যের আলো পশ্চিমে হেলে গেলে সেই ক্যারম গাছের ডালটি পূজার বেদিতে রোপণ করা হয়। পুরোহিত উৎসবের আলোকে ধর্মীয় কাহিনী শোনান। সেই সঙ্গে চলে কাহিনির অন্তর্নিহিত ব্যাখ্যা। এরপরই বেদির চারপাশ ঘুরে ঘুরে যুবক-যুবতীরা নাচতে থাকেন।
পত্নীতলা আদিবাসী যুব পরিষদের সভাপতি পরেশ টুডু বলেন, ‘এই উৎসবের মূল উদ্দেশ্য আদিবাসীদের নিজেদের ভাষা সাংস্কৃতি আর ঐতিহ্য তুলে ধরা। পাশাপাশি সারা দেশে আদিবাসীদের ওপর অত্যাচার, উৎচ্ছেদ, নির্যাতন ও দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সংঘবদ্ধ করা।’
আদিবাসীদের ভাষা ও সংষ্কৃতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে দাবি করে এক্ষেত্রে সরকারের এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন পরেশ টুডু। তিনি জানান, প্রতি বছর ভাদ্র মাসের একাদশী তিথিতে জাঁকজমকপূর্ণভাবে কারাম উৎসব পালিত হচ্ছে। এই উৎসব ঘিরে শুধু নওগাঁতেই প্রতি বছর ২০টির বেশি স্থানে ক্যারম মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
ঐতিহ্যবাহী ক্যারম উৎসব উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন পত্নীতলা ক্যারম উৎসব ও আদিবাসী সাংস্কৃতিক মিলনমেলা উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক জতিন টপ্য। প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন, নওগাঁ-২ আসনের সাংসদ শহীদুজ্জামান সরকার।
এ সময় বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কারাম উৎসবের উদ্বোধন করেন নওগাঁ-৩ আসনের সাংসদ ছলিম উদ্দিন তরফদার।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পত্নীতলা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল গাফফার এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুমানা আফরোজাও।