কুড়িগ্রামে এবার স্কুলশিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিনব প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। বয়স গোপন করে চাকরিতে যোগদান ছাড়াও বিয়ে না করেই তিনি দীর্ঘদিন ধরে সন্তানের শিক্ষাভাতা তুলে আসছিলেন।
সরকারি নির্দেশনায় ইলেকট্রনিক ফান্ডস ট্রান্সফারের (ইএফটি) ফরম পূরণ করতে গেলে রুনা খাতুন নামে ওই শিক্ষকের প্রতারণার বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আসে।
অভিযুক্ত রুনা সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের আরাজি পিপুলবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক যুগ ধরে শিক্ষকতা করছেন। ২০১০ সালে স্কুলটি চারজন শিক্ষক নিয়ে রেজিস্টার্ড বেসরকারি হিসেবে যাত্রা শুরু করে। এই চারজনের একজন ছিলেন রুনা।
২০১৩ সালে সারা দেশের প্রায় ৩০ হাজার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করে সরকার। এভাবে ওই স্কুলের সব শিক্ষকই সরকারি বেতনভুক্ত হয়ে যান।
সরেজমিন যাত্রাপুর ঘাট থেকে প্রায় ২০-২৫ মিনিট নৌকায় গেলে আরাজি পিপুলবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেখা মেলে। বিদ্যালয়টি শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী রয়েছে প্রায় ২২৪ জন। বিদ্যালয়ের পাঁচটি পদের মধ্যে আছেন চারজন শিক্ষক। এর মধ্যে সহকারী শিক্ষক রুনা খাতুন।
স্থানীয়ভাবে অনুসন্ধান করে জানা যায়, অভিযুক্ত রুনা সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার চাকলি গ্রামের বখত জামান ও রেনু বেগমের মেয়ে। ২০১০ সালে সিরাজগঞ্জের আরিয়া মোহন স্কুল থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ-৩.৬৯ পয়েন্ট পেয়ে এসএসসি পাস করেন তিনি। এসএসসি সনদ অনুযায়ী, তার জন্মতারিখ- ১৩ আগস্ট ১৯৯৫। যদিও চাকরিতে প্রবেশের সময় এই তারিখটি গোপন করে আবেদনে ১৩ আগস্ট ১৯৯০ লিখেছিলেন তিনি।
এ ছাড়া অবিবাহিত হয়েও তিনি নিজেকে বিবাহিত পরিচয় দেন এবং ২০১৭ সাল থেকেই সন্তানের নাম ব্যবহার করে ৫০০ টাকা হারে মাসিক শিক্ষাভাতা তুলছেন।
প্রতারণার বিষয়টি ফাঁস হলে গত ৪ জুলাই সদর উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তা ভুয়া জন্ম সাল এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে শিক্ষাভাতা গ্রহণের বিষয়ে রুনাকে কারণ দর্শানোর চিঠি দেন।
অভিযুক্ত রুনা খাতুন
স্কুলটির স্থানীয় অভিভাবকদের একজন জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘নদীভাঙনের কারণে এখানে কোনো স্কুল ছিল না। এমনকি কোনো শিক্ষিত মানুষও ছিল না। পরে আমরা চারজন শিক্ষক নিয়ে এই স্কুলটি করি। রুনা আপা এখানকার বাসিন্দার সঙ্গে আত্মীয়তার সূত্রে চাকরিতে যোগ দেন। তার বয়স হয়েছিল কি না সেটা তো সরকারের দেখার বিষয়।’
অভিযুক্ত শিক্ষক রুনা খাতুন ভুয়া জন্ম সাল এবং অবিবাহিত থাকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘বয়স ঠিকঠাক করে শোকজের জবাব দিয়েছি।’
এ সময় তিনি সন্তান না থেকেও ২০১৭ সাল থেকে সন্তানের নামে ৫০০ টাকা হারে শিক্ষাভাতা তোলার বিষয়টিও স্বীকার করেন।
স্কুলটির প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তদন্ত করছেন।’
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘তদন্ত শেষ হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠিয়েছি।’