বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

যমজ নবজাতকের মৃত্যু: ধাত্রীই চালাতেন সেই ক্লিনিক

  •    
  • ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৩:২৩

‘ধাত্রীবিদ্যায় রেড ক্রিসেন্ট থেকে ২০ দিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে ওই ক্লিনিক খুলছে। তারা চিকিৎসক না, ধাত্রী। আমরা তাদের মিডওয়াইফ বলি। তাদের কোনো লিগ্যাল ডকুমেন্টস ছিল না, সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই ক্লিনিক চালাতেন।’

চট্টগ্রামে অপরিণত যমজ নবজাতক মারা যাওয়া ডবলমুরিং থানা এলাকার মাতৃসেবা নরমাল ডেলিভারি সেন্টারে সেদিন কোনো চিকিৎসকই ছিলেন না। এমনকি ছিলেন না প্রশিক্ষিত কোনো নার্সও।

বৃষ্টি রাণী দে নামের এক ধাত্রী নাসরিন নামের আরেক ধাত্রীর সহযোগিতায় ওই ক্লিনিক চালাতেন। ইমম্যাচিউর (অপরিণত) নবজাতকের জন্মের পর কী চিকিৎসা দিতে হয় তার কিছুই জানতেন না তারা।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াস চৌধুরী নিউজবাংলাকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার প্রসববেদনা শুরু হলে ডবলমুরিং থানার ঝরনাপাড়া এলাকার ওই ডেলিভারি সেন্টারে দুপুরে ভর্তি করা হয় প্রসূতি একই এলাকার লাভলীকে। সেখানে যমজ শিশুর জন্ম দেন তিনি। কিন্তু ঘণ্টা দুয়েক পর মারা যায় শিশু দুটি।

পরে লাভলীর স্বামী অটোরিকশাচালক মনির আহমেদ অভিযোগ করেন, বিলের সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ না করায় সদ্যোভূমিষ্ঠ সংকটাপন্ন যমজ নবজাতককে সেখানে আটকে রেখে অক্সিজেন খুলে নেয় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। এতে মারা যায় তার সদ্যোভূমিষ্ঠ সন্তান দুটি।

চিকিৎসক, প্রশিক্ষিত নার্স ছাড়াই চলছিল ক্লিনিকটি

ঘটনার পর মাতৃসেবা নরমাল ডেলিভারি সেন্টারে গিয়েছিলেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াস চৌধুরী। শুক্রবার রাতে নিউজবাংলাকে তিনি জানান, ক্লিনিকটি চিকিৎসক ও প্রশিক্ষিত কোনো নার্স ছাড়াই চলছিল।

তিনি বলেন, ‘ঘটনার পর আমরা ওই ক্লিনিকে গিয়ে বন্ধ পেয়েছিলাম। পরে তাদের আমার অফিসে ডেকেছিলাম। ওই ক্লিনিকে কোনো চিকিৎসক তো ছিলই না, কোনো নার্স পর্যন্ত ছিল না।

‘ধাত্রীবিদ্যায় রেড ক্রিসেন্ট থেকে ২০ দিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে ওই ক্লিনিক খুলছেন। তারা চিকিৎসক না, ধাত্রী। আমরা তাদের মিডওয়াইফ বলি। তাদের কোনো লিগ্যাল ডকুমেন্টস ছিল না, সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স নিয়েই ক্লিনিক চালাতেন।’

ইমম্যাচিউর নবজাতকের পরিচর্যা বা চিকিৎসা সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণাই ছিল না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একটা বাচ্চাকে মায়ের পেটে অন্তত ৯ মাস সাত দিন থাকতে হয়। সেই জায়গায় মাত্র ছয় মাসের বাচ্চা ডেলিভারি হলে কী কী অসুবিধা হয় তা তো তারা জানে না। ছয় মাসের ইমম্যাচিউর বেবি জন্ম নেয়া মাত্রই ওয়ার্মারে নিতে হয়। নয়তো শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়, খিঁচুনি হয়। ওয়ার্মারে না নিলে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে মারা যায়। মৃত্যু যে হবে, এটা তো জানা কথা।’

‘ওদের তো সেখানে ডেলিভারি করানোই উচিত হয়নি। আর একান্তই করালে অভিভাবককে জানিয়ে দেয়া উচিত ছিল যে, সেখানে ডেলিভারি হলে বাচ্চা মারা যাবে। এ রকম ইমম্যাচিউর বাচ্চা স্পেশিয়ালাইজড হাসপাতালেও ডিল করা কঠিন। সেখানে এ রকম ডেলিভারি করানোর অনুমতি কে দিয়েছে?’

‘বিলের টাকা না দেয়ায় অক্সিজেন খুলে নেয়’

সেদিন বিলের জন্য অক্সিজেন খুলে নেয়ায় যমজ নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে।

যমজ শিশু দুটির বাবা মনির আহমেদ ঘটনার দিন অভিযোগ করেছিলেন, ১০ হাজার টাকা বিলের মধ্যে ৫ হাজার টাকা তৎক্ষণাৎ দিতে না পারায় যমজ নবজাতকদের সংকটাপন্ন অবস্থায় আটকে রাখে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। এ সময় নবজাতকদের মুখে লাগানো অক্সিজেনও খুলে নেয়া হয়।

সে সময় মনির আহমেদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘দুপুর ২টার দিকে আমার স্ত্রীর প্রসববেদনা শুরু হলে তাকে মাতৃসেবা নরমাল ডেলিভারি সেন্টারে ভর্তি করাই। ৩০ মিনিট পর আমাদের যমজ শিশু জন্মগ্রহণ করে। এর আধাঘণ্টা পর তারা জানায় যে বাচ্চাদের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

‘এ সময় তারা আমাদের ১০ হাজার টাকার বিল দেয়। আমি বললাম যে এটা তো নরমাল ডেলিভারি, ৫ হাজার টাকা রাখেন। বাচ্চার চিকিৎসা শেষে বাকি ৫ হাজার দেব। কিন্তু তারা বাচ্চাদের বের করতে দেয়নি। অক্সিজেনও খুলে ফেলছে। তিন ঘণ্টা পর টাকা নিয়ে গেলে তারা আমাদের মৃত বাচ্চা দেয়।’

খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ক্লিনিকটি বন্ধ করে দেয় পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয় চারজনকে। পরে নবজাতকের পরিবারের কেউ মামলা না করায় তাদের ছেড়ে দেয়া হয়।

পরে মামলা, গ্রেপ্তার ২

ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে অনুরোধ জানানো হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এসব বিষয় জানার পর আমরা ওই বাচ্চাদের বাবার সঙ্গে কথা বলেছি। ওনি গরিব মানুষ, মামলা করবেন না। কিন্তু এসব অপরাধীদের বিরুদ্ধে তো ব্যবস্থা নিতে হবে। তাই আমরা পুলিশকে চিঠি দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করেছি।’

সিভিল সার্জনের চিঠি পাওয়ার পর পুলিশ বাদী হয়ে বৃষ্টি রাণী দে ও নাসরিন বেগমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের ও গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছেন ডবলমুরিং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাখাওয়াৎ হোসেন।

নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা তখনই ওই শিশুদের বাবাকে অনুরোধ করেছিলাম লিখিত অভিযোগ দায়েরের জন্য। তিনি খেটে খাওয়া মানুষ, ঝামেলার ভয়ে করেননি। তাই সিভিল সার্জনের চিঠি অনুযায়ী বৃহস্পতিবার মামলা করা হয়েছে। মামলার পরপরই তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে তোলা হয়েছে।’

তবে শুক্রবার রাতে মুঠোফোনে মনির আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

ক্লিনিকটি পরিচালনাকারী বৃষ্টি দে ও তার সহযোগী নাসরিন কারাগারে থাকায় তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

এ বিভাগের আরো খবর