ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে নওগাঁয় প্রায় আড়াই কোটি টাকা মূল্যের ৯ শতক সরকারি সম্পত্তি বেহাত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ওই সম্পত্তিকে ব্যক্তির নামে দেখিয়ে খাজনাও পরিশোধ করা হয়েছে।
সম্প্রতি জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরে এ বিষয়ে অভিযোগও করা হয়েছে।
অভিযোগকারী নওগাঁ শহরের বাসিন্দা মৃত শেখ আব্দুল কুদ্দুসের নাতনি সাহানা হক ও আরজি-নওগাঁ মহল্লার বাসিন্দা সঞ্জয় কুমার দাস। তাদের দাবি, এসব অভিযোগ সুষ্ঠুভাবে তদন্ত হলে ভূমি অফিসের আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য বের হবে।
দুটি ক্ষেত্রেই সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, এটা ভুল করে হয়ে গেছে। এই আদেশ বাতিল করে দেয়া হবে। তবে অভিযোগ আছে, সরকারি সম্পত্তি ব্যক্তির হাতে তুলে দেয়ার পেছনে আছে অবৈধ অর্থের লেনদেন।
একজনের নামে খারিজ করে পরে আরেকজনের নামে
সদর উপজেলার সদর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অধীন নওগাঁ মৌজার ১৫৪৮ নম্বর হাল দাগে শহরের প্রাণকেন্দ্র সাবেক মাছ বাজারের ৫ শতক জমি সরকারের ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত ও শ্রেণি হিসেবে ’হাটখোলা’ দেখানো আছে।
প্রায় ২ কোটি টাকা মূল্যের সরকারি ওই সম্পত্তিটি ব্যক্তিমালিকানায় মৃত শেখ আব্দুল কুদ্দুসের নামে খারিজের আদেশে ৫ হাজার ৮৩৫ টাকার খাজনা আদায় করা হয় মৃত ব্যক্তির নাতনি সাহানা হকের কাছ থেকে।
সাহানা হক বলেন, তার দাদা শেখ আব্দুল কুদ্দুস ২০১২ সালে মারা যান। এরপর তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে দলিলমূলে ওই সম্পত্তি খারিজের জন্য আবেদন করেন। এরপর ইউনিয়ন ভূমি উন্নয়ন কর্মকর্তা সালেহ উদ্দিন ও তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাহারুল ইসলাম ওই সম্পত্তি খারিজের আদেশ দিয়ে তার কাছ থেকে খাজনা আদায় করে। পরে এই আদেশ বাতিল করে অন্য একজনের নামে তা খারিজ করা হয়।
তবে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা যায় না। সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও ওই সম্পত্তিটি ‘হাটখোলার’ বদলে ‘দোকান ঘর’ উল্লেখ করে এবং নতুন হোল্ডিং খুলে গত ১৪ ডিসেম্বর খাজনা আদায় করা হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে ইউনিয়ন ভূমি উন্নয়ন কর্মকর্তা সালেহ উদ্দিন বলেন, তিনি ভুল করে সরকারের ১ নং খাস খতিয়ানভুক্ত সম্পত্তিটি খারিজের আদেশ দিয়েছেন। সেটি আবার বাতিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সরকারের লিজ দেয়া জমিও ব্যক্তির নামে
সদর উপজেলার হাপানিয়া এর ডাফইল/৬১ মৌজার ৭০ নম্বর খতিয়ানভুক্ত আরএস ১৩ নম্বর দাগে প্রায় ৩ কোটি টাকা মূল্যের ২৭ শতক সম্পত্তি রয়েছে।
২০১২ সালের ৮ এপ্রিল প্রকাশিত গেজেটে এটি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে উল্লেখ করা আছে। এরপর একটি ভিপি কেসে সেটি লিজ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে তা সরকারের পক্ষে লিজ গ্রহীতার দখলে আছে।
অভিযোগকারী সঞ্জয় কুমার দাস জানান, সম্পত্তি লিজ গ্রহীতার মাধ্যমে সরকারের দখলে এবং সংশ্লিষ্ট হোল্ডিংয়ের কার্যক্রম বন্ধ থাকা সত্ত্বেও অবৈধভাবে ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর ২২৪৩/২০-২১ নম্বর খারিজ কেসের আদেশ দেয়া হয়েছে।
অভিযোগের সঙ্গে সংযুক্ত কাগজপত্রে দেখা যায়, ডাফইল মৌজার ২৮০ নম্বর খতিয়ানে ১৩ নম্বর দাগে মোট ২৭-এর মধ্যে ৪ শতাংশ জমি হাট নওগাঁর বাসিন্দা মোমতাজ হোসেনের নামে খারিজ করে দিয়েছেন কর্মকর্তারা।
উপজেলা ভূমি অফিসের তৎকালীন এসিল্যান্ড নাহারুল ইসলাম আদেশটি দিয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি নওগাঁ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নিউজবাংলাকে তিনি বলেন, ‘নওগাঁ সদর এসিল্যান্ড অফিসে ৮ মাস আগে কর্মরত ছিলাম। ওখানে প্রতিদিন অনেক শুনানি হয়েছে, অনেক কেস হয়েছে। এতদিন পর এই ধরনের কোনো ঘটনার কথা আমার মনে পড়ছে না, জানাও নেই। কোনো অভিযোগও পাইনি।’
অবৈধভাবে খারিজ করার জন্য তৎকালীন সার্ভেয়ার মিজানুর রহমান ও হাপানিয়া-বক্তারপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিনকে দায়ী করেছেন অভিযোগকারী সঞ্জয় কুমার দাস।
খারিজের বিষয়ে জানতে চাইলে মোমতাজ হোসেন পরে জানাবেন বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।
‘ভুলবশত হয়ে গেছে’
হাপানিয়া-বক্তারপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা নাজিম উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভুলবশত প্রস্তাবের মাধ্যমে সরকারি জমিটি খারিজ হয়ে গেছে। সামান্য জমি, তাই খুব একটা গুরুত্ব দেয়া হয়নি।’
নওগাঁ সদর উপজেলার এসিল্যান্ড রফিকুল ইসলাম অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘হয়তো ভুলক্রমে তৎকালীন কর্মকর্তা দুটি খারিজের আদেশ দিয়েছেন। ইতোমধ্যে একটি খারিজের আদেশ বাতিল করা হয়েছে এবং অন্যটির খারিজটি বাতিল প্রক্রিয়াধীন।’