ট্রান্সফরমার চুরির মহৌৎসব শুরু হয়েছে জামালপুর জেলায়। এই জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ইতোমধ্যেই ৩২টি ট্রান্সফরমার চুরি হয়ে গেছে।
গত এক মাসে জামালপুর সদর উপজেলার গোপালপুর, দখলপুর ও মির্জাপুর গ্রাম থেকে চুরি হয়েছে ১৯টি ট্রান্সফরমার। এ ছাড়া জেলার সরিষাবাড়ী, মেলান্দহ, ইসলামপুর, বকশীগঞ্জ ও মাদারগঞ্জ উপজেলায় চুরি হয়েছে আরও ১৩টি ট্রান্সফরমার।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাতের আঁধারে মহাসড়কের পাশে থাকা বৈদ্যুতিক খুঁটি থেকে ট্রান্সফরমার চুরি করে খালি বক্স ফেলে রেখে যায় চোরচক্র। এরপর থেকেই বিদ্যুৎবিহীন থাকতে হচ্ছে তাদের।
সদর উপজেলার গোপালপুর বাজার এলাকার স’মিলের শ্রমিক শিল্পীন মিয়া নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২৭ তারিখ সকালে এসে দেখি- বিদ্যুৎ নেই। কিসের জন্য নেই, বুঝতে পারছিলাম না। পরে খাম্বার কাছে গিয়ে দেখি ওপরে ট্রান্সফরমার নাই। নিচে খালি বাক্স পড়ে আছে।’
শিল্পীন মিয়ার সন্দেহ, এই চুরির পেছনে পল্লী বিদ্যুতের লোকজনই জড়িত। কারণ যখন বিদ্যুৎ থাকে না, তখনই ট্রান্সফরমারগুলো চুরি হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘তাহলে চোরেরা কিভাবে জানল যে, কারেন্ট থাকবে না। পল্লী বিদ্যুতের লোক জড়িত না থাকলে এমন চুরি সম্ভব নয়।’
ট্রান্সফরমার চুরির কারণে বর্তমানে ভরা মৌসুমেও জেলার বিভিন্ন এলাকায় জমিতে সেচ বন্ধ থাকায় আমন আবাদ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা।
দখলপুর এলাকার কৃষক হাজি রফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ট্রান্সফরমার চুরির পর থেকে এদিকে বিদ্যুৎ নাই। তাই গ্রামের কৃষকরা ক্ষেতে পানি দিতে পারছে না। তারা হাহাকার করছে।’
ব্যবসায়ীরাও জানিয়েছেন, ট্রান্সফরমার চুরির পর বিদ্যুৎ না থাকায় বন্ধ রয়েছে অনেক দোকানপাট, মুরগির খামারসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এতে করে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। বিভিন্ন দপ্তর ঘুরেও সুফল মিলছে না। দ্রুত নতুন ট্রান্সফরমার লাগানোর দাবি তাদের।
গোপালপুর বাজার এলাকার স’মিল ব্যবসায়ী এমরান মিয়া বলেন, ‘ট্রান্সফরমার চুরি যাওয়ার পর থেকে আমরা কষ্টে আছি। এখন আর চলতে পারছি না। মিল-কারখানা সব বন্ধ। দ্রুত নতুন ট্রান্সফরমারগুলো লাগালে আমরা ব্যবসা করে মোটামুটি চলতে পারব।’
মির্জাপুর গ্রামে মুরগির খামারি কুদরত বলেন, ‘আমার মুরগি ছিল। বিদ্যুৎ না থাকার কারণে এগুলো একদম অল্প বয়সে, সময় না হতেই বিক্রি করে দিতে হয়েছে। দ্বারে দ্বারে ঘুরেও এ বিষয়ে কারও কোনো সাড়া পাচ্ছি না।
ট্রান্সফরমার চুরির পর এভাবেই পড়ে থাকে খালি বাকশোগুলো
ব্যবসায়ী নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘এদিকে ট্রান্সফরমার চুরির হিড়িক পড়ছে। এসব চোরের বড় সিন্ডিকেট। এদের দ্রুত গ্রেপ্তার করলে আমরা খুশি হতাম।’
জেলার সচেতন নাগরিকরা বলছেন, জ্বালানি ও বিদ্যুতের এই সংকটে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ট্রান্সফরমার চুরি করে সরকারকে বিব্রত করার চেষ্টা করছে একটি বিশাল চক্র। এই চক্রকে দ্রুত আইনের আওতায় না আনলে বড় ক্ষতি হতে পারে।
জেলার বিশিষ্ট মানবাধিকারকর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব এই চোরচক্রটিকে আটক করতে আমরা স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় প্রশাসনকে আহ্বান জানাচ্ছি।’
এসব বিষয়ে জামালপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মো. আলমগীর হোসেন বলেন, অতি সম্প্রতি জামালপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অধীন পূর্বাঞ্চলে ট্রান্সফরমার চুরি যাচ্ছে। চুরির সঙ্গে সঙ্গে এসব ঘটনা আমরা নিজেদের লোকবল দিয়ে তদন্ত করাই। পরে তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে আমরা থানায় এফআইআর করি।’
তিনি জানান, ট্রান্সফরমার চুরি ঠেকাতে বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা ছাড়াও উঠান বৈঠকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের সচেতন করার কাজ অব্যাহত রয়েছে।
জামালপুর জেলায় পল্লী বিদ্যুতের গ্রাহক প্রায় ৬ লাখ ৭২ হাজার। এর মধ্যে সেচ ও শিল্প গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার।