শেখ হাসিনার ভারত সফরে দেশটির সঙ্গে যেসব বিষয়ে চুক্তি হয়েছে, সেগুলো করতে একজন সরকারপ্রধানের যাওয়ার দরকার পড়ে কি না, সে প্রশ্ন তুলেছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। তার দাবি, একজন যুগ্ম সচিবকে পাঠালেই এসব চুক্তি করা সম্ভব।
শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ ব্যাখ্যা চান।
আগের দিন চার দিনের ভারত সফর শেষ করে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সোমবার যান দেশটিতে। এই সফরে মোট সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা হয়েছে। দুই প্রধানমন্ত্রীর এই সফর শেষে যৌথ বিবৃতিতে ভারতের মাটি ব্যবহার করে বিনা মাশুলে বাংলাদেশের ট্রানজিট সুবিধা, সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামানোসহ নানা বিষয় উল্লেখ ছিল।
তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি না হলেও কুশিয়ারা নদীর পানি প্রত্যাহার নিয়ে সমঝোতা হয়েছে।মান্না মনে করেন, এসব চুক্তি ও সমঝোতা করতে একজন প্রধানমন্ত্রীর সফরের দরকার পড়ে না। তিনি বলেন, ‘ভারত সফরে কী পেয়েছেন, একটা স্মারকলিপি সই করেছেন, সেগুলোর মধ্যে এক নদীর পানিবণ্টন ছাড়া তো আর কিছু নাই। তাও কত কিউসেক পানি বণ্টন করেছেন? হাজারের কোটাও যায়নি। কয় বিঘা জমি সেচ দেয়া যাবে তার মাধ্যমে। ওই নদী তো আমাদেরই। এর বাইরে যে সমস্ত চুক্তি করেছেন, তা একজন জয়েন্ট সেক্রেটারি গেলেই পারতেন।’
চার দিনের সফরে ভারতে গিয়ে ‘আসলে’ কী বৈঠক করে এসেছেন, সেটারও ব্যাখ্যা চান মান্না। বলেন, ‘চার দিন ধরে কী মিটিং করল বলেন তো। কেউ কোনো ব্যাখ্যা জানেন না। আমি ব্যাখ্যা চাই। কেন পার্লামেন্টে ব্যাখ্যা দেবেন না। জনগণ ব্যাখ্যা চাওয়ার অধিকার রাখে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের সাম্প্রতিক একটি বক্তব্যের কথা তুলে ধরে মান্না বলেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) গেছেন এ কারণে যে আমাকে আরেকটা টার্ম থাকতে দেন।
প্রধানমন্ত্রী ভারতে গিয়ে অপমানিত হয়ে এসেছেন বলেও মনে করেন নাগরিক ঐক্যের নেতা। তিনি বলেন, ‘আমাদের খারাপ লাগে কি। চুরি করেন ডাকাতি করেন, গায়ের জোরে ক্ষমতায় থাকেন, আপনি তো আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী। আমার দেশে আমি আপনাকে জবরদখলদারি বলি। কিন্তু বিদেশের মাটিতে আপনি অপমানিত হন, তা চাই না।’
‘পুলিশ ছাড়া ১২ ঘণ্টা টিকতে পারবে না’
পুলিশের সহায়তায় আওয়ামী লীগ সরকারে টিকে আছে বলে মনে করেন মান্না। তিনি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছেন, পুলিশকে বাদ দিয়ে ১২ ঘণ্টাও টিকতে পারবে না ক্ষমতাসীনরা।
তিনি এও বলেছেন, শেখ হাসিনার ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই। কারণ তার ভাষায় প্রধানমন্ত্রী সারা বিশ্বে জাতির মাথা নত করে দিয়েছেন।মান্না বলেন, ‘অনেকে বলেন, পারছেন না তো আওয়ামী লীগের সঙ্গে। তারা তো আছেই। আওয়ামী লীগকে কি হারাতে পারবেন? আমি মনে করি, আওয়ামী লীগ হেরে গেছেন৷ যেই আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়ার গৌরব অর্জন করেছিল, সেই আওয়ামী লীগ মানে বাংলাদেশে এখন পুলিশ লীগ। পুলিশ নাই, আওয়ামী লীগ নাই। পুলিশ নাই, ১২ ঘণ্টাও আওয়ামী লীগ থাকতে পারবে না। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নাগরিক ঐক্যকে চ্যালেঞ্জ করতে পারে। একটা ডিবেট হতে পারে।’প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে নাগরিক ঐক্যের নেতা বলেন, ‘আপনি বলছেন বাসায় আসেন, চা খাওয়াব। আবার বাসার আসার আগেই পথের মধ্যে লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকবেন। এ রকম ৪২০ করার দরকার কী? না পারলে বলবেন, পারছি না। দ্রব্যমূল্য কমাতে পারছেন না, জীবনের নিরাপত্তা দিতে পারেন না। গুম-খুন বন্ধ করতে পারেন না। সারা পৃথিবীর সামনে মাথা হেট করে ফেলেছেন, আপনার তো ক্ষমতায় থাকার অধিকার নাই।’
‘ইভিএমে লেবুতে ভোট দেবেন, পড়বে নৌকায়’
ইভিএমে ভোট কারচুপি করা যায় দাবি করে মান্না বলেন, ‘আমেরিকায় ইভিএমে ভোট হয়। কিন্তু আমেরিকার আর বাংলাদেশ ইভিএম যন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য আছে। ‘বাংলাদেশের ইভিএমে আপনি কমলা লেবু মার্কায় ভোট দেবেন, ওটা নৌকা মার্কায় ছাপ পড়বে। বানিয়েছে এভাবে। সবচেয়ে বড় বড় কথা এতে কোনো পেপার ট্রেলার নাই।’