তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন ক্ষমতাসীন দলের জোটসঙ্গী বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি সভাপতি রাশেদ খান মেনন। গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির মেয়াদ শেষ হতে চললেও এটি নিয়ে আলোচনা না করাও তার হতাশার কারণ।প্রধানমন্ত্রী চার দিনের সফর শেষে দেশে ফেরার পর বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, এই সফরের অর্জন শূন্য। এই অবস্থায় মেননের মূল্যায়নও অনেকটাই সে রকমই।
চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতা মাও সে তুংয়ের ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণে শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ওয়ার্কার্স পার্টির আয়োজনে এক আলোচনায় অংশ নেন মেনন। আলোচনার বিষয় ছিল, ‘জনগণতন্ত্র: তত্ত্ব ও প্রয়োগ’।
গত সোমবার ভারত সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী সে দেশের সরকারপ্রধান নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ;দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ছাড়াও নানা আনুষ্ঠানিকতায় ব্যস্ত ছিলেন।এই সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দুই দেশের অমীমাংসিত বিষয়গুলোর পাশাপাশি নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা আর সহযোগিতার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ ছাড়া কুশিয়ারা নদীর পানি প্রত্যাহার, রেলের আধুনিকায়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে ভারতের সঙ্গে সাতটি সমঝোতা স্মারকে সই করে বাংলাদেশ।
দুই প্রধানমন্ত্রীর এই সফর শেষে যৌথ বিবৃতিতে ভারতের মাটি ব্যবহার করে বিনা মাশুলে বাংলাদেশের ট্রানজিট সুবিধা, সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামানোসহ নানা বিষয় উল্লেখ ছিল।
তবে বাংলাদেশের বহুল আকাঙ্ক্ষিত তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি আবারও আশ্বাসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।
মেনন বলেন, ‘ভারত থেকে প্রধানমন্ত্রী ঘুরে এলেন, কিন্তু মূল সমস্যাগুলোর কোনো আশাবাদী সমাধান দেখছি না। তিস্তার সমস্যা ঝুলে রইল, একইভাবে কুশিয়ারা থেকে পানি প্রত্যাহারের অনুমতি নিলাম।
‘এখন আনন্দ হচ্ছে যে কুশিয়ারা থেকে পানি প্রত্যাহার করতে পারব। কিন্তু মেঘনা বেসিনে গিয়ে এটা কতখানি সংকট সৃষ্টি করবে কি করবে না, তা নিয়ে কোনো সমীক্ষায় কিন্তু আমরা যাইনি।’
নব্বইয়ের দশকে আওয়ামী লীগের শাসনামলে গঙ্গার পানিবণ্টনে ২৫ বছর মেয়াদি যে চুক্তি হয়েছিল, তার মেয়াদ শেষ হতে চললেও সেটি নিয়ে আলোচনা না হওয়াকে ভালো চোখে দেখছেন না ক্ষমতাসীন দলের জোটসঙ্গী।
তিনি বলেন, ‘গঙ্গা চুক্তি ২০২৬ সালে শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু পানিপ্রবাহ নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনো যৌথ সমীক্ষা করতে পারিনি।’
দেশে খাদ্য পরিস্থিতি ও সার সংকট নিয়েও উদ্বেগের কথা বলেন ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা। তিনি বলেন, ‘তাদের কাছে যদি জিজ্ঞেস করি, তাহলে বলবে ১৯ লাখ টন খাদ্য আছে। যদি কৃষিমন্ত্রীর কথা বলেন, তিনি বলবেন গুদামে পর্যাপ্ত সার মজুত আছে। কিন্তু মাঠে যখন যান, দেখবেন আমাদের কৃষক সে সার পাচ্ছেন না। সে কারণে খরায় জমি শুকিয়ে যাচ্ছে, ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। তারা পরিমাণমতো সার পাচ্ছেন না।
‘একইভাবে খাদ্যের জোগানের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে সংকট। যেখানে টিসিবির মতো মোটা চালের কেজি ৬০ টাকা। এই হচ্ছে সমাজের আসল চিত্র। এটা যদি সমাধান করতে না পারি তাহলে রাশিয়া-ইউক্রেন অথবা আমেরিকাকে গালি দিয়ে অথবা তাদের যুদ্ধ কেন শেষ হচ্ছে না- এর অপেক্ষা করে লাভ হবে না।‘
মেনন বলেন, ‘বলা হচ্ছে সারের সংগ্রহ আছে কিন্তু তলিয়ে দেখছি সারের সংকট হচ্ছে। সবচেয়ে বড় সংকটে আছেন কৃষক। আর কৃষককে বাদ দিয়ে কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্ভব হবে- এটা ভুল কথা।’