রাজধানীর মৎস্য ভবন মোড়ের আগে ফুটপাতে একটি যাত্রীছাউনি স্থাপনের পর সেটি নিয়ে তুমুল সমালোচনা। ছাউনিতে আসন সাধারণত ফুটপাতের এক প্রান্তে থাকে। কিন্তু এখানে আসন স্থাপন করা হয়েছে ফুটপাতের মাঝামাঝি। সামনে এবং পেছনে ফাঁকা। আবার ফুটপাতে যে রেলিং দেয়া আছে, সেটিও অটুট।
সামাজিক মাধ্যমে এই ছবি ভাইরাল হওয়ার পর ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে রেলিংটি ভেঙে দেয়া হয়েছে। তবে ফুটপাতের সামনে-পেছনে জায়গা রেখে বসানো বেঞ্চটি পথচারীদের চলাচলের জন্য বাধা হয়ে রয়েছে। নগরীর অন্য যাত্রীছাউনিগুলো এমন নয়।
ফেসবুকে অনেকে লিখেছেন, দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের চলাচলের জন্য বিশেষ টাইলস বসিয়ে চলাচলের পথ সুগম করা হয়। আর সেখানে যাত্রীছাউনি বসিয়ে তাদের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। অনেকে লিখেছেন, মোড়ের আগে যাত্রীছাউনি বসানোর ফলে যানজট বাড়বে।
যাত্রীছাউনিটি করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এ বিষয়ে ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাসেরের সঙ্গে কথা হয় নিউজবাংলার।
আবার ছাউনিটি এমন জায়গায় করা হয়েছে, সেখানে যাত্রীদের ওঠানামা কম। অবশ্য আবু নাসের দাবি করেছেন, তারা পরিকল্পনা করেই জায়গা সুনির্দিষ্ট করেছেন।
তিনি বলেন, ‘যাচাই-বাছাই করে আমাদের কারিগরি কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী যাত্রীছাউনিটি করা হয়েছে। মন চাইল দিয়ে দিলাম- বিষয়টি এমন নয়। এ ছাড়া মৎস্য ভবনের মোড়ের পর যাত্রীছাউনি দেয়ার জায়গাও নেই। আর ওখানে বাস থামবে। যাত্রীও ওঠানামা করবে।’
এখানে বাস থামলে যানজট বাড়বে। সে ক্ষেত্রে কী ব্যবস্থা নেবেন আপনারা- এমন প্রশ্নের উত্তরে আবু নাসের বলেন, ‘যাত্রীসেবার জন্যই তো এখানে যাত্রীছাউনি করা হয়েছে।’
রাজধানীর যানজট নিয়ন্ত্রণে মুখ্য ভূমিকা পালন করে ট্রাফিক পুলিশ। সে ক্ষেত্রে যাত্রীছাউনি করার আগে তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে নিতে হয়।
মৎস্য ভবন মোড়ে যাত্রীছাউনি বসানোর ক্ষেত্রে তেমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কি না সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ট্রাফিক রমনা বিভাগের উপকমিশনার জয়নুল আবেদীনের কাছে।
তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনেক সময় পরামর্শ করে। যখন সাজেশন চায় তখন আমরা সাজেশন দিই। নরমালি সমন্বয় করেই করা হয়।’
মৎস্য ভবনের আগে নতুন যে যাত্রীছাউনি করা হয়েছে, সে পরামর্শ চাওয়া হয়েছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারছি না। খোঁজ নিয়ে বলতে হবে।’
যাত্রীছাউনি একটি বৈজ্ঞানিক বিষয় বলে জানান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক হাদিউজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘এটি জোর করে চাপানোর বিষয় না। জাংশন (মোড়) থেকে ন্যূনতম ৫০ ফুট দূরে যাত্রী ওঠানামার ব্যবস্থা করতে হবে। জাংশন রাস্তার হৃৎপিণ্ড। জাংশনের কাছে এসে যাত্রীছাউনি করে যাত্রী ওঠানামা করলে ট্রাফিক-প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হবে। প্রয়োজনের তাগিদে আমরা যা-ই করি না কেন, ট্রাফিক-প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করা যাবে না।’
সমন্বয়ের কথা উল্লেখ করে বুয়েটের এই অধ্যাপক বলেন, ‘ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে একটা সমন্বয়ের বিষয় আছে। ট্রাফিক পুলিশ জাংশনগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের জাংশন কন্ট্রোল করতে একটা প্ল্যান থাকে। যখন জাংশনের কাছে এসে যাত্রী নামানো হবে, তখন এই যাত্রীদের তাদের ম্যানেজ করতে হবে। অর্থাৎ ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় না করে এমন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করলে তাদের ওপর বোঝা চাপিয়ে দেয়া হবে।’