কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ সাত শিক্ষার্থীর সন্ধান ১৭ দিনেও মেলেনি। সন্তানের খোঁজে প্রতিদিনই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে ধরনা দিচ্ছেন স্বজনরা।
পুলিশের ধারণা, তারা কোনো জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িয়েছেন। কুমিল্লার পুলিশ সুপার (এসপি) আবদুল মান্নান এই শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জঙ্গিসংশ্লিষ্টতা উঠে এসেছে, তবে তাদের সন্ধান পাওয়ার আগে নিশ্চিত কিছু বলা যাবে না।
নিখোঁজ শিক্ষার্থীরা হলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ইমরান বিন রহমান, সামি, কুমিল্লা সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী হাসিবুল ইসলাম, নিহাল, ভিক্টোরিয়া কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ইমতিয়াজ আহমেদ রিফাত, একই কলেজের তৃতীয় বর্ষের আমিনুল ইসলাম আলামিন ও ঢাকা ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে অনার্স শেষ করা নিলয়।
নিখোঁজদের ডায়েরি আর পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৩ আগস্ট কোচিংয়ে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে যান সাতজনের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী। যাওয়ার সময় তেমন টাকা-পয়সা, মোবাইল ফোন কিংবা বাড়তি পোশাকও নেননি তারা। একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের হলেও নিখোঁজ প্রত্যেকেই ছিলেন পরস্পরের পরিচিত। তাদের বয়স ১৭ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে।
স্বজনদের দাবি, পড়াশোনার বাইরে অন্য কোনো বিশেষ বিষয়ের প্রতি কখনও তারা সন্তানদের আগ্রহ দেখেননি। কলেজ, কোচিংয়ের বাইরে যে সময়টি পেতেন তার বেশির ভাগটাই বাসায় বই পড়ে কিংবা মোবাইল ফোনে তারা সময় কাটাতেন।
ইমরান বিন রহমানের বাবা মজিবুর রহমান মুকুল বলেন, ‘ফোন বেজে উঠলে তাড়াতাড়ি রিসিভ করি। এই বুঝি আমার ছেলে ফোন করল। কই আছে আমার সন্তান , আমার মন তো আর মানে না।’
রিফাতের মা জেসমিন আক্তারের মোবাইল নাম্বারে ফোন করলে তিনি রিসিভ করেই ‘হ্যালো রিফাত বাবা তুমি কই’ বলে কান্নাজুড়ে দেন। পরিচয় পাওয়ার পর রিফাতের মা বলেন, ‘আজ ১৭ দিন চলে আমার গলা দিয়ে ভাত নামে না। আমার ছেলেটা কই আছে, কেমন আছে কিচ্ছু জানি না। আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দেন সবাই মিলে।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলছে, সাত শিক্ষার্থীর খোঁজে পুলিশের বেশ কয়েকটি ইউনিট কাজ করছে।
বুধবার কুমিল্লা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে নিখোঁজ সাত শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের সঙ্গে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ৪ ঘণ্টা বৈঠক করেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের সদস্যরা।
এদিন বিকেলে কুমিল্লা র্যাব কার্যালয়ে আরেকটি বৈঠক করেন নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের অভিভাকরা। তাদের ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার, পিসি, ল্যাপটপ সম্পর্কিত সব ধরনের তথ্য দিয়েছেন অভিভাবকরা।
কুমিল্লা র্যাব-১১-এর কমান্ডার মেজর সাকিব হোসেন বলেন, ‘আমরা সম্ভব সব রকম চেষ্টা করছি।’
কুমিল্লার এসপি আবদুল মান্নান বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সমন্বিতভাবে কাজ করছেন। আমরা অনেক বিষয় ঠিক রেখে এগিয়ে যাচ্ছি।’
তারা জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে গেছেন কি না- এমন প্রশ্নের উত্তরে এসপি বলেন, ‘আমাদের প্রাথমিক তদন্তে তাই মনে হচ্ছে। যতক্ষণ না তাদের উদ্ধার করতে পারছি, ততক্ষণ পর্যন্ত পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারছি না।’