‘প্রতিদিন বাজার করতি গিলি কিছু দেনা হয়ে যাচ্ছে। কম রোজগার, তাই বাজার কুলাতে পারি নে। বাকি খাই, তাই আবার শোধ করতি গিলি পরের দিন বাজারে টান পড়ে। তাই ধার করি মাসের ত্রিশ দিন। কিন্তু মানসে এহন ধারও দিতি চায় না। এরাম করেই কোনো রকমে দিন যাচ্ছে।’
বললেন ডাব বিক্রেতা সুরমান আলী। ভোজ্য ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার প্রভাবে বাজারের নিত্যপণ্যসহ প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনযাপনে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। সুরমান আলীর জীবনে অনেক কিছুই আর আগের মতো নেই।
তিনি জানান, ‘আগে গ্রাম থেকে ডাব কিনতাম প্রতি পিস ২০-৩০ টাকায়। এখন সেই সব গাছি (গাছ মালিক) জানায়, সব জিনিসের দাম বেশি, তাই ডাব আর ওই টাকায় হবে না। কিনতে হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়, যা বিক্রি হয় ১০ টাকা লাভে। এতে ৫০০ টাকা হতি ডাব বিক্রি করা লাগে ৫০টে।
‘সারা দিন রোদে পুড়ে ভ্যানে বিক্রি করি এই ডাব। দিনশেষে ৫০০ টাকায় বাজারে যাই। ৬৫ টাকা কেজি দরে দুই কেজি চাল, ১২০ টাকায় এক পোয়া মাছ, ১০০ থেকে ২০০ টাকায় সবজি ও তেল কিনতে বাকি রাখতে হয়।
‘শর্ত থাকে পরের দিন বাকির টাকা দিয়ে দেব। তাহলে প্রতিদিন আমাকে দেনা শোধ করতে হয়, বাজার করি আসলে ৩০০ টাকার, যা দিয়ে পাঁচজনের পরিবারের লোকের কোনোমতে খাওয়া জোটে।
বেশি বাকি পরি গিলি ধার করি। ধারও যারা দিত তারা দিতি চায় না। বলে তুই বাকি করে খাস তোরে ধার দিলি টাকা শোধ হবে না। তবু অনুনয় বিনয় করে অল্প কিছু ধার নিয়মিত করি। না হলে পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতি হবি।’
সুরমান আলী বলেন, ‘একটু জমি আছে, ধান লাগিইছি অনেক কষ্টে, কিন্তু সেচ দিতে গিলি ৫০ টাকার থেকে এহন ১২০ টাকা নিচ্ছে শতকে। এত টাকা সেচে দিলি আমার ভিক্ষা করে চলতে হবে। তাই পানির অভাবে ধান হলদে হয়ে গেছে। আবার ধার করব ভাবছি। কিছু টাকা ধার না করলে সার ও ডিজেল কিনে সেচ দিতি পারব না।’
সুরমান জানান, তার ছেলে স্কুলে পড়ে। ছেলে কয়েক দিন ধরে একটা লুঙ্গি চায়। কারণ তার নামাজ পড়ার লুঙ্গি ছিঁড়ে গেছে। এক মাস ধরে ছেলেকে তা কিনে দিতে পারছেন না তিনি। এক আত্মীয়ের কাছে ধার চেয়েছেন ১ হাজার টাকা। কিন্তু ৫০০ টাকার প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন। সবাই ধারের মধ্যে আছে।
সুরমান বলেন, ‘যার কাছেই টাকা ধার চাই, সবাই কয় বাজারের পিছনে খরচা বেশি, তাই তারাও ধার করে জীবন চালাচ্ছে। ভাবতেছি, ধার যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে তো আমার মতো দিন আনে দিন খায় মানুষগুলো পাগল হয়ে যাবে নে।’