দক্ষিণের জেলা বরগুনার বাসযাত্রীরা পদ্মা সেতু ব্যবহার করে রাজধানীতে যাতায়াত করতে পারছে না। কারণ, বাসগুলো চলছে ঘুরে অন্য পথ দিয়ে যে কারণে যাত্রীদের সময় লাগছে অনেক বেশি।
দেশের সবচেয়ে বড় সেতু চালু হওয়ার পর থেকে বরগুনা-বাকেরগঞ্জ সড়ক ধরে চলতে দেয়া হচ্ছে না ঢাকা-বরগুনা রুটের বাসগুলোকে। বরিশালের রুপাতলী বাস মালিক সমিতির বাধায় রাজধানীর সঙ্গে যোগাযোগ হচ্ছে পটুয়াখালীর সুবিদখালী ও আমতলী ফেরি পার হয়ে।
রুপাতলীর বাসমালিকদের দাবি, বরগুনার বাসমালিকদের এই রুট দিয়ে চলার অনুমতি নেই। বরগুনার বাসমালিকরা বলছেন, তারা সাত মাস আগে রুট পারমিটের জন্য আবেদন জমা দিয়েছেন। বারবার তাগাদা দিচ্ছেন, তবে অনুমোদন পাচ্ছেন না।
বরগুনা থেকে বরিশালের বাকেরগঞ্জ পর্যন্ত ৫৭ কিলোমিটার সড়ক চালু হয় ২০১৯ সালে। তখন থেকে এই পথ দিয়েই ঢাকা-বরগুনা রুটে বাসগুলো চলত।
সাকুরা পরিবহনের বরগুনা কাউন্টারের ব্যবস্থাপক নাসির মোল্লা বলেন, ‘তিন বছর ধরে এই সড়কে আমাদের বাস চলছে। পদ্মা সেতু চালুর পর আগস্ট মাসের শুরু থেকে বাস বন্ধ করে দেয় বরিশালের রুপাতলী বাস মালিক সমিতি। তারা বাকেরগঞ্জে পাহারা বসিয়ে চলাচল বন্ধ করে দেয়।’
এই রুটের শ্রাবণী পরিবহনের বরগুনার কাউন্টার ম্যানেজার কবির হোসেন বলেন, ‘ঢাকা-বাকেরগঞ্জ-বরগুনা বাস চলাচলে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা লাগলেও বিকল্প রুটে ১০ ঘণ্টা সময় লাগছে। ফলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন যাত্রীরা। পাশাপাশি পদ্মা সেতুর সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এ রুটের যাত্রীরা।’
সোহেল নামের এক যাত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর বরগুনা-বাকেরগঞ্জ সড়ক দিয়ে বরগুনা থেকে ঢাকা পৌঁছাতে সময় লাগত সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার মতো। কয়েক দিন ধরে এ সড়ক দিয়ে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এতে পদ্মা সেতুর সুফল থেকে এখন আমরা বঞ্চিত হচ্ছি।’
তানজিনা নিপা নামের অপর এক যাত্রী বলেন, ‘ছোট বাচ্চা নিয়ে বাসে ঢাকা থেকে বরগুনা এসেছি। সড়কপথে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থাকলেও আমতলী ফেরি পার হয়ে বরগুনা আসতে হয়েছে আমাদের। অথচ কয়েক দিন আগে আমি বাসে পাঁচ ঘণ্টায় বরগুনা থেকে ঢাকা পৌঁছেছি। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর পরও আমাদের দুর্ভোগ কমেনি। আগের মতোই আছে।’
কেন এই রুটের বাসকে বাধা দেয়া হচ্ছে- জানতে চাইলে বরিশালের রুপাতলী বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওসার হোসেন শিপন বলেন, ‘সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী গাড়ি চলাচলের অনুমতি যেখানে আছে সেখান দিয়েই চলাচল করবে। তাদের রুট পারমিট আছে এক পথে, তারা যাবে অন্য সড়কে- এটা তো ঠিক না।’
বেশ কয়েক বছর ধরে তো এই পথ ধরে বাস চলত, তখন তো বাধা আসেনি- এমন মন্তব্যের জবাবে বরিশালের এই বাসমালিক বলেন, ‘হাতে গোনা কিছু ব্যবসায়ী আছেন যারা এই পথে গাড়ি চলাচল করিয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী সব কিছু হবে।’
বরগুনার বাসমালিক ও বরিশাল বিভাগীয় আঞ্চলিক সড়ক পরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য ফেডারেশনের সভাপতি সাহাবুদ্দিন সাবু বলেন, ‘রুপাতলী বাস মালিক সমিতি বাধা দেয়ার পর আমরা সড়ক জনপথ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারি বরগুনা-বাকেরগঞ্জ সড়কটি বিআরটিএর আওতাভুক্ত হয়নি। আওতাভুক্ত করতে সাত মাস আগে সওজ বিআরটিএর কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠিয়েছে। কিন্ত এখনও আওতাভুক্ত হয়নি।
‘গত সপ্তাহে আমরা বরগুনা জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছি। গতকালও আমি জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে আপডেট জানতে চেয়েছি। তিনি জানিয়েছেন বিষয়টি আন্ডার প্রসেসিং।’
বরগুনা জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ঢাকা-বরগুনার গাড়িগুলোর এই পথে চলাচলের অনুমতি না থাকায় তারা এই হয়রানি করে আসছে। ইতোমধ্যে বিষয়টি আমি বিভাগীয় কমিশনার স্যারকে জানিয়েছি।’