অটোরিকশায় অপরিচিত যাত্রীর সম্মোহনের শিকার হয়ে ফরিদপুরের এক দম্পতি স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান মালামাল তুলে দিয়েছেন তাদের হাতে। প্রতারণার এ কাজে স্কোপোলামিন বা ‘শয়তানের শ্বাস’ নামের মাদক ব্যবহার হয়েছে বলে সন্দেহ পুলিশের।
পুলিশ ও স্বজনদের মাধ্যমে জানা গেছে, সম্প্রতি ফরিদপুরে সম্মোহন করে মালামাল ছিনিয়ে নেয়ার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে দুটি ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় জিডি হয়েছে। অপরাধীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ।
গত মঙ্গলবার শহরের গোয়ালচামট গৌর গোপাল আঙিনা এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্য ইদ্রিস তালুকদার ও তার স্ত্রী আলেয়া বেগম প্রতারণার শিকার হন।
৭৫ বছর বয়সী ইদ্রিস পেনশনের টাকা তুলে বাড়ি ফেরার সময় প্রতারকদের খপ্পরে পড়েন। তখন সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী আলেয়া বেগমও।
তাদের নাতনি কাজী জেবা তাহসিন বলেন, ‘মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নানা ও নানু ব্যাংকে গিয়েছিলেন। পেনশনের টাকা তুলে বাড়ি ফেরার জন্য তারা শহরের ইমাম স্কয়ার থেকে একটি অটোরিকশায় ওঠেন।
‘অটোরিকশায় চালক ছাড়াও দুজন যাত্রী ছিলেন। নানা বসেন চালকের পাশে। আর পেছনের সিটে অন্য যাত্রীদের পাশে বসেন নানু। যাত্রা শুরু হতেই পাশের যাত্রী নিচে পড়ে থাকা কাগজের মোড়ক দেখিয়ে নানুর কাছে জানতে চান সেটি তার কি না। চশমা না থাকায় নানু তা বুঝতে পারছেন না বলে জানান। তখন কাগজটি তার চোখের কাছাকাছি ধরেন একজন। এ সময়েই নানু সম্মোহিত হয়ে পড়েন।’
জেবা তাহসিন জানান, প্রতারকদের কথামতো আলেয়া বেগম গলার চেইন, কানের দুল ও হাতের আংটি খুলে তাদের দিয়ে দেন। এরপর বৃদ্ধ এ দম্পতিকে মিয়াপাড়া সড়কের কাছে ফেলে রেখে চলে যায় প্রতারকরা।
বাড়ি ফেরার পরও আলেয়া বেগম অনেকটা ঘোরের মধ্যে ছিলেন। এরপর ছেলের প্রশ্নে সব বিষয় জানান তিনি। তার হাতে থাকা কাগজের মোড়কে সোনালি রঙের একটি প্লাস্টিক টুকরো পাওয়া যায়, যা স্বর্ণবারের আকৃতির। ঘটনা শুনে স্বজনরা বুঝতে পারেন প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েছিলেন তারা। এরপর কোতোয়ালি থানায় জিডি করা হয়।
পুলিশ জানায়, ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে এ রকম আরেকটি ঘটনার অভিযোগ পেয়েছে তারা। সেখানে এক নারী টাকা ও মোবাইল ফোন তুলে দেন প্রতারকদের হাতে।
আঁখি ইসলাম শওরিন নামে একজন জানান, তার মায়ের সঙ্গে কয়েক দিন আগে এমন প্রতারণার ঘটনা ঘটেছে।
পুলিশ জানায়, প্রতারকরা এর আগে ঢাকায় স্কোপোলামিন ব্যবহার করে সম্মোহনের মাধ্যমে মানুষের স্বর্ণ, টাকাসহ মূল্যবান মালামাল লুট করেছে। এমন ঘটনা ফরিদপুরে নতুন। অন্তত তিন প্রতারক এ ঘটনায় জড়িত বলে ধারণা পাওয়া গেছে। তবে তাদের পরিচয় জানা যায়নি।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, ‘অভিযোগের তদন্ত চলছে গুরুত্ব দিয়ে। বিভিন্ন স্থানের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে অপরাধীদের শনাক্ত করার কাজ চলছে। অভিনব প্রতারণার বিষয়ে জনসাধারণকে সচেতন হতে হবে। কারণ এসব অপরাধে জড়িতরা একটি অপরাধ করে দ্রুত অন্যত্র চলে যায়।’