নারায়ণগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের সময় রাইফেল দিয়ে গুলি করা গোয়েন্দা কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান কনকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে তাকে গোয়েন্দা শাখা থেকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে। তার গুলি করার বিষয়টি নিয়েও তদন্ত হবে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোয়েন্দা পুলিশ পরিদর্শক ফখরুদ্দিন ভূইয়া।
গত ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নারায়ণগঞ্জে দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় কনক তাদের দিকে সরাসরি অস্ত্র তাক করে গুলি করেছিলেন।
সংঘর্ষের সময় মারা যান শাওন প্রধান নামে এক যুবক, যাকে যুবদল কর্মী উল্লেখ করে দেশজুড়ে ধারাবাহিক বিক্ষোভ করছে বিএনপি। তারা অভিযোগ করছে, কনকের গুলিতেই এই প্রাণহানি হয়েছে।
গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক হিসেবে কাজ করা কনক ঘটনাস্থলে যাওয়ার সময় তার হাতে ছিল একটি লাঠি। অন্য একজন পুলিশ সদস্যের হাতে থাকা রাইফেল তুলে নিয়ে তিনি গুলি করেন।
গত ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় কনকের অবস্থান
অন্যের অস্ত্র তুলে নিয়ে গুলি করার সুযোগ নেই। পাশাপাশি সেদিন গুলি করার মতো পরিস্থিতি আদৌ ছিল কি না, এ নিয়েও আছে বিতর্ক। তবে এসব বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় সমালোচনাও হচ্ছিল।
নারায়ণগঞ্জের গোয়েন্দা পুলিশ পরিদর্শক ফখরুদ্দিন ভূইয়া এটাও নিশ্চিত করেন যে, কনকের বিরুদ্ধে তদন্তও তো হবে।
তবে পুলিশ কক্ষ থেকে কোনো তদন্ত কমিটি হয়েছে কি না তা জানেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আর জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে কিছুই বলছেন না।
এ বিষয়ে এক প্রশ্নে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তাফা রাসেলসহ একাধিক কর্মকর্তা ‘কিছুই জানেন না’ বলে ফোন কেটে দেন।
ভীষণ আক্রমণাত্মক ছিলেন কনক, অস্ত্র তুলে নেন অন্যের হাত থেকে
একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, সংঘর্ষের আগে মাহফুজ কনক অন্য ডিবি পুলিশদের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছেন। কনকের ডান হাতে একটি লাঠি আর বাম হাতে ওয়্যারলেস। আরেক অংশে দেখা যায় কনকের হাতে চাইনিজ রাইফেল। তিনি গুলি করছেন বিএনপির নেতাকর্মীদের দিকে।
সেদিনের ঘটনার ভিডিও ও স্থিরচিত্রে দেখা যায়, বিএনপির নেতাকর্মীরা যখন পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ছিলেন, তখন কনক দাঁড়িয়ে, নিচের দিকে খানিকটা ঝুঁকে এবং হাঁটু গেড়ে সরাসরি নেতাকর্মীদের দিকে গুলি করছেন।
গত ১ সেপ্টেম্বর বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের সময় কনক ছিলেন আক্রমণাত্মক
কনক সেই ঘটনার চার বা পাঁচ দিন আগে ভোলা থেকে নারায়ণগঞ্জে বদলি হয়ে আসেন। তিনি ভোলায় থাকাকালেও পুলিশের গুলিতে বিএনপির মিছিলে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। তবে সেই গুলি কে বা কারা ছুড়েছিল, সেটি প্রকাশ পায়নি।
একজনের অস্ত্র আরেকজন ব্যবহার করতে পারেন না বলে নিউজবাংলাকে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ পুলিশের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। তবে তিনি নাম প্রকাশে রাজি হননি।
নারায়ণগঞ্জ জজকোর্টে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মনিরুজ্জামান বুলবুল বলেন, ‘আইনে বলা হয়েছে যে পুলিশ সদস্যের দায়িত্বে অস্ত্র থাকবে, তিনি আত্মরক্ষার্থে তা ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু একজনের অস্ত্র আরেকজন ব্যবহার করতে পারেন না।’
গুলি করার মতো পরিস্থিতি ছিল কি?
নারায়ণগঞ্জ পুলিশের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, সেদিন কনক গুলি করেছিলেন চায়নিজ এসএমজি সেভেন পয়েন্ট সিক্স টু রাইফেল দিয়ে। বড় ধরনের কোনো সংঘাত হলে ব্যবহার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
কিন্তু নারায়ণগঞ্জে বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশের দিকে যে ইটপাটকেল ছুড়ছিলেন, তাকে বড় সংঘাত বলা যায় কি না, এ নিয়ে প্রশ্ন আছে।
বিএনপি এমনও দাবি করেছে, সেখানে সরাসরি বুলেট ব্যবহারের মতো কোনো পরিস্থিতিই ছিল না। তার পরও কার নির্দেশে এই ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে, সেটি জানতে চান নেতারা।
কনক সেদিন রাইফেল নিয়ে ঘটনাস্থলে যাননি। অন্যের রাইফেল হাতে তুলে নিয়ে গুলি করেন তিনি
সম্প্রতি নিউজবাংলার সঙ্গে আলাপকালে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমির খসরু সেদিন গুলি করার পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে প্রথমে কী পরিস্থিতি ছিল তা সকলে দেখেছে। বরগুনা ও নারায়ণগঞ্জের দুটি দুই রকম প্রেক্ষাপট। আমরা প্রায় ১ ঘণ্টা পর সেখানে গিয়েছি। তখনও দেখেছি পুলিশ বক্সের ভেতরে ইটপাটকেল, বিএনপি নেতাকর্মীরা সড়কে। তাদের হামলায় আমাদের ২০ জন পুলিশ সদস্য আহত। এই পরিস্থিতিতে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছুড়তে পারে।’
তাহলে রাইফেল দিয়ে গুলি করার বিষয়টি তদন্তের আওতায় আনা হবে না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। একটি তদন্ত তো হবেই। তবে কখন এ তদন্ত শুরু হবে, তার সিদ্ধান্ত জানাবেন পুলিশ সুপার।’
তবে পুলিশ সুপার এখন পর্যন্ত কিছু জানাননি।