বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বালু কেনাবেচা ২০০ কোটির, সরকার পায় ৭ কোটি

  •    
  • ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১২:০৯

অভিযোগ আছে, এসব ইজারা বালু মহাল ছাড়াও উপজেলায় অন্তত ২০০ স্থানে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালীরা। সেগুলো থেকে সরকার এক টাকাও রাজস্ব আয় করতে পারে না।

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলায় সরকারের রাজস্ব আয়ের অন্যতম খাত মূল্যবান সিলিকা বালু মহাল ইজারা। নদীভাঙন, আবাদি জমির ক্ষতিসহ নানা ধরনের পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে একসময় সরকার বালু মহাল ইজারা বন্ধ রেখেছিল।

তবে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সবুজ সংকেত পাওয়ার পর চুনারুঘাট উপজেলা প্রশাসন সিলিকা বালু মহাল ইজারা দেয়া শুরু করে। এখন উপজেলায় খোয়াই নদীতে সাতটি বালু মহাল ইজারা দিয়ে সরকার রাজস্ব পায় ৭ কোটি ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

পাশাপাশি বিভিন্ন ছড়ায় আরও সাতটি বালু মহাল ইজারা দিয়ে রেখেছে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। তবে সেসব ইজারা থেকে কত টাকা রাজস্ব সরকার পায় সেটি বলতে পারেনি উপজেলা প্রশাসন।

কিন্তু অভিযোগ আছে, এসব ইজারা বালু মহাল ছাড়াও উপজেলায় অন্তত ২০০ স্থানে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করছে প্রভাবশালীরা। সেগুলো থেকে সরকার এক টাকাও রাজস্ব আয় করতে পারে না।

অবৈধ এসব বালু উত্তোলনে কেউ প্রতিবাদ করলে দেয়া হয় হুমকি, এমনকি কারও কারও বিরুদ্ধে স্থানীয়দের চাঁদাবাজির মামলায় ফাঁসানোরও অভিযোগ রয়েছে।

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলাকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বলা হয়। ৪২৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই উপজেলায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য পাহাড়ি ছড়া। সেসব ছড়াতেই পাওয়া যায় মূল্যবান সিলিকা বালু।

এসব বালু ভেসে আসে ভারতের ত্রিপুরা থেকে উৎপত্তি হওয়া খোয়াই নদী দিয়ে।

বালু ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, প্রতি বছর উপজেলায় অন্তত ২০০ কোটি টাকার বালুর ব্যবসা হয়।

তবে এসব ব্যবসার অধিকাংশই হচ্ছে অবৈধভাবে। ফলে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

জেলা প্রশাসনের দেয়া তথ্যে জানা গেছে, চলতি বছর খোয়াই নদীতে ছয়টি বালু মহাল ইজারা দেয়া হয়েছে। এতে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ৭ কোটি ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

ছড়া থেকে বালু উত্তোলনের কারণে চা-বাগান ও টিলার ক্ষতি হওয়ায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ২০১৩ সাল থেকে পাহাড়ি ছড়াতে বালুমহাল ইজারা দেয়া বন্ধ রাখে জেলা প্রশাসন।

২০১৪ সালে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় জেলা প্রশাসনের মতামত না নিয়েই সাত স্থানে সিলিকা বালুর মহাল দেখিয়ে গেজেটভুক্ত করে।

উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায়, খোয়াই নদী ও বিভিন্ন ছড়ায় অন্তত দুই শতাধিক স্থানে অবৈধ ড্রেজার মেশিন বসিয়ে তোলা হচ্ছে বালু। কোথাও কোথাও বালু উত্তোলনের কারণে ছড়া পরিণত হয়েছে বিশাল পুকুরে। ভেঙে পড়ছে ফসলি জমিসহ টিলা।

এমনকি ব্রিজের গোড়া থেকে বালু তোলার কারণে হুমকিতে রয়েছে বেশ কয়েকটি ব্রিজও। বালু বহনের জন্য ট্রাক্টর ব্যবহার করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদীর পাড়, গ্রামীণ রাস্তাঘাট ও ব্রিজ-কালভার্ট। কোথাও কোথাও রাস্তার পাশে বালু রেখে ব্যবসার কারণে ভোগান্তিতে পড়ছেন পথচারীরা।

চুনারুঘাটের উপজেলার রাজার বাজার এলাকার সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘দিনরাত খোয়াই নদীতে ড্রেজার চলে। মেশিনের শব্দে কান ঝালাপালা হয়ে যায়। এ ছাড়া নদীর পাড় দিয়ে বিকট শব্দ করে ট্রাক্টর চলে। অনেক সময় শিশুরা ভয়ে চিৎকার করে ঘুম থেকে উঠে যায়।’

একই এলাকার বৃদ্ধ মো. সানু মিয়া বলেন, ‘নদীর পাড় দিয়া বালুর গাড়ি গিয়া পাড় ভেঙে ফেলেছে। নদীতে গোলা (জোয়ার) আইলে আমরা ভয়ে থাকি। কখন নদীর পাড় ভাইঙা যায়। এ ছাড়া ট্রাক্টরগুলা রাস্তাঘাট ভাইঙা অবস্থা খারাপ কইরালায়।’

দুধপাতিল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ছড়া থেকে বালু তোলা হচ্ছে। কয়েকটি জায়গায় বালু তোলার কারণে ছড়া বড় বড় পুকুরে পরিণত হয়েছে। ভেঙে পড়েছে ফসলি জমি।

দুধপাতিল গ্রামের মোহন মিয়া বলেন, ‘এদিকে ছড়ার সব জায়গা থেকে বালু তোলা হয়। একসময় ছড়াগুলো লাফ দিয়ে পার হওয়া যাইত। এখন গিয়ে দেখেন কত বড় হইছে। ছড়ার পাড় ভাইঙা পড়তাছে। ধানক্ষেতও ভাঙতাছে।’

তিনি বলেন, ‘বালু তুললেও আমাদের প্রতিবাদ করার সাহস নেই। বড় বড় মানুষে বালু তোলে। কিছু কইলে আমাদের মারপিট করে। কোনো কোনো সময় চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে জেলে নিয়ে যায়।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন হবিগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, ‘যেহেতু খোয়াই একটি প্রবাহমান নদী, তাই বালু তুলতে হবে। তবে অবশ্যই নিয়ম মেনে সেটি করতে হবে। অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তোলার কোনো প্রশ্নই আসে না। এ জন্য প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে।’

জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘হবিগঞ্জে থেকে সরকারের রাজস্ব আয়ের অন্যতম একটি খাত বালু। মাঝেমধ্যে আমাদের কাছে কিছু অভিযোগ আসে। তখন আমরা অভিযান চালাই। আপনারা প্রায়ই দেখবেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল-জরিমানা করছি।’

এ বিভাগের আরো খবর