বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে কী পেল বাংলাদেশ

  •    
  • ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১১:১০

এবারের সফর নিয়ে প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশটির সব বন্দর, সড়ক, নৌপথ ব্যবহার করে বিনা মাশুলে তৃতীয় কোনো দেশে পণ্য রপ্তানি করতে পারবে বাংলাদেশ। বিষয়টি ছিল বাংলাদেশের জন্য বহুল কাঙ্ক্ষিত। আঞ্চলিক ও উপআঞ্চলিক ট্রান্সশিপমেন্ট ও ট্রানজিটের ভারতীয় এ প্রস্তাবকে বাংলাদেশের জন্য বড় প্রাপ্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ভারতে চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দেশে ফিরছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সময়ের হিসাবে সফরের বেশ কয়েক ঘণ্টা বাকি থাকলেও এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে বাংলাদেশের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বলছেন, এবারের সফরটি অন্য সফরের চেয়ে ভিন্ন। কেননা এবার প্রকাশিত ও প্রকাশিতব্য অনেক অর্জন নিয়েই ঢাকা ফিরছেন শেখ হাসিনা।

এবারের সফর নিয়ে প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে ভারত জানিয়েছে, দেশটির সব বন্দর, সড়ক, নৌপথ ব্যবহার করে বিনা মাশুলে তৃতীয় কোনো দেশে পণ্য রপ্তানি করতে পারবে বাংলাদেশ। বিষয়টি ছিল বাংলাদেশের জন্য বহুল কাঙ্ক্ষিত।

আঞ্চলিক ও উপআঞ্চলিক ট্রান্সশিপমেন্ট ও ট্রানজিটের ভারতীয় এ প্রস্তাবকে বাংলাদেশের জন্য বড় প্রাপ্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এর বাইরে ভারত বাংলাদেশকে তৃতীয় দেশে পোশাক পণ্যসহ অন্যান্য পণ্য রপ্তানিতে মাল্টিমোডাল কানেকটিভিটির প্রস্তাব দিয়েছে, যা দুই দেশের রেল মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বাস্তবায়ন হবে। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ থেকে প্রথমে ট্রাকে করে ভারতে প্রবেশ করবে রপ্তানি পণ্য। এরপর ট্রেনে করে তা যাবে সমুদ্র বন্দরে। সেখান থেকে জাহাজে করে পণ্য যাবে ইউরোপ বা আমেরিকার বন্দরে।

বিশ্লেষকদের ভাষ্য

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কবিষয়ক ধারাভাষ্যকার ও অল ইন্ডিয়া প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি, বর্ষীয়ান সাংবাদিক গৌতম লাহিড়ী বলেন, ‘এই সফরে তিস্তা চুক্তি না হলেও তার চেয়ে বড় প্রাপ্তি আছে বাংলাদেশের। তা হলো ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট, যা দীর্ঘদিন বাংলাদেশ দাবি করে আসছিল। নেপাল ও ভুটানে পণ্য রপ্তানিতে এটা খুব কাজে আসবে।’

সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ও দিল্লি ইউনিভার্সিটির বঙ্গবন্ধু চেয়ার শহীদুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ভারতের বিভিন্ন প্রস্তাব কার্যকর হলে বাংলাদেশের জন্য বৃহত্তর অর্থনৈতিক অঞ্চলে যুক্ত হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।

তিনি বলেন, ‘এই বিবৃতি (যৌথ বিবৃতি) ধরে দুই পক্ষের মধ্যে অনেক কিছুর আদান-প্রদান হয়ে থাকে। আলোচনা ও দরকষাকষি হবে। যেমন: বছরে কোন ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ভারত কতটা দেবে, তাতে নিশ্চয়ই মোটামুটি সন্তুষ্ট। এর চেয়ে বেশি জোরালো অঙ্গীকার থাকে না। এটাকে সহযোগিতার রূপরেখা ধরে নেয়া যেতে পারে। ভারত বাংলাদেশের অনুরোধে সাড়া না দিলে তো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বিষয়ে বিবেচনার আশ্বাস দিত না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরটি পর্যালোচনার নিরিখে ফলপ্রসূ হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব বর্তমানে খাদ্য ও জ্বালানি সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সেখানে ভারত এ সংকট মোকাবিলায় বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছে। জ্বালানি আমদানি করাসহ বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে ও দুই দেশের বাণিজ্য প্রসারে সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি নিয়ে বোঝাপড়া শুরু হয়েছে।

‘আরেকটি খুবই ইতিবাচক বিষয় সামনে এসেছে। সেটি হচ্ছে, ভারতের ভূমি ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে বিনা মূল্যে পণ্য রপ্তানি করা। নেপাল, ভুটান বা অন্য দেশে পণ্য ট্রানজিটে ভারত সম্মতি দিয়েছে। ফলে বলা যায়, এ সময়ে সফরটি দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন মাত্রা নেবে।’

সফরে বড় কোনো চুক্তি না হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ সফরে বড় কোনো চুক্তি হওয়ার আভাস ছিল না। এটি মূলত কূটনৈতিক ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার সফর। দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ককে ঝালিয়ে নেয়ার বিষয় ছিল সফরের মধ্য দিয়ে। সম্পর্কে আরও আস্থা ও গতি সঞ্চারই ছিল প্রধান বিষয়।

‘সেই চেষ্টাই করা হয়েছে। দুই দেশ সাতটি সমঝোতা সই করেছে। আর গঙ্গার পর প্রথমবারের মতো কুশিয়ারা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে সমঝোতা সই হয়েছে। এটি খুবই ইতিবাচক বিষয়।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অধ্যাপক বলেন, ‘দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী খোলামেলা অনেক বেশি আলোচনা করার সুযোগ পেয়েছেন, যেখানে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের সব বিষয় নিয়েই আলোচনা হয়েছে। ভবিষ্যতে এ বৈঠকের ওপর ভিত্তি করে আরও অগ্রগতি দেখব।

‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে ডজনখানেকের বেশি সাক্ষাৎ হয়েছে। ফলে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে যে যোগাযোগের মাত্রা, যেকোনো পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের জন্য একটি মাইলফলক। এখন বিষয় হচ্ছে, সম্পর্কে যে গতি সঞ্চার হয়েছে, তা এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ কতটুকু অর্জন করতে পারে সেটি একটি বিষয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভূরাজনৈতিক যে বিষয়গুলো রয়েছে, রোহিঙ্গাসহ জঙ্গিবাদের সমস্যা, এগুলো একযোগে মোকাবিলা করার বিষয়ে দুই দেশ একমত হয়েছে। সব মিলিয়ে নতুন বিশ্ব পরিস্থিতিতে নতুনভাবে এগিয়ে চলার গতি সঞ্চার করেছে।

‘দুই দেশের নিরাপত্তার দিক থেকে এক প্রকার সামরিক সহযোগিতা রয়েছে। তা মূলত কৌশলগত দিক থেকে। বাণিজ্যের দিক থেকে বিষয়টি মাত্র শুরু হলো। ভারত নিজেই এখনও এ ক্ষেত্রে অন্য দেশের ওপর নির্ভরশীল। ফলে এটি মাত্র শুরু হয়েছে।

‘সামনের দিনে এ খাতে বাণিজ্য সম্পর্ক কতটা বাড়বে তা সময়ই বলে দেবে। এর মাধ্যমে দুই দেশের একটি বোঝাপড়া তৈরি হয়েছে। দুই পক্ষই আরও পদক্ষেপ নিয়ে বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নিয়ে যেতে পারে।’

সাবেক কূটনীতিক তৌহিদ হোসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরটিকে ধারাবাহিক হিসেবে দেখছেন।

তার ভাষ্য, ‘প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকে আমি একটি ধারাবাহিক সফর হিসেবেই দেখি। এটি বিশেষভাবে আলাদা কোনো সফর নয়। আমাদের প্রধানমন্ত্রী এর আগেও ভারতে গেছেন। নরেন্দ্র মোদি আমাদের দেশে এসেছেন।

‘এবার আবার আমাদের প্রধানমন্ত্রী গেলেন। হয়তো ভারতের প্রধানমন্ত্রী আবারও আসবেন। ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের এমন সফর হয়েই থাকে।’

তৌহিদ বলেন, ‘প্রতিটি সফরেই যে বড় বড় অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, অনেক কিছুর প্রাপ্তি ঘটবে, এমন নয়, তবে এ ধরনের উচ্চ পর্যায়ের সফরের আগে বাংলাদেশের মানুষের মাঝে এক ধরনের প্রত্যাশা দেখা দেয়। এবারের এই সফরের আগে প্রত্যাশা কিছুটা কম ছিল।

‘কারণ তিস্তার বিষয়ে কোনো সমাধান যে আসবে না, তা আগেই জানা হয়েছিল। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ২০১১ সালে সম্মত খসড়ার ভিত্তিতে একটি চুক্তি চেয়েছিলেন। এবারে ভারত কোনো আশার বাণী শোনায়নি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, এবার সাতটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। এগুলোর দিকে যদি তাকাই ১. রহিমপুর হয়ে বাংলাদেশের সিলেটে কুশিয়ারা নদী থেকে সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পের আওতায় ১৫৩ কিউসেক পানি বণ্টনে সমঝোতা স্মারক; ২. ভারতের কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (সিএসআইআর) এবং বাংলাদেশ কাউন্সিল অফ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চের (বিসিএসআইআর) মধ্যে বৈজ্ঞানিক সহযোগিতায় সমঝোতা স্মারক; ৩. ভারতের ভোপালের ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমি এবং বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের মধ্যে সমঝোতা স্মারক; ৪. বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মীদের ভারতীয় রেলওয়ের ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের প্রশিক্ষণের জন্য ভারত ও বাংলাদেশের রেল মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক; ৫. বাংলাদেশ রেলওয়ের আইটিবিষয়ক সহযোগিতার জন্য ভারত ও বাংলাদেশের রেল মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক; ৬. প্রসার ভারতী ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের মধ্যে সমঝোতা স্মারক এবং ৭. মহাকাশ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতার মধ্যে সমঝোতা স্মারক। এর মধ্যে একটিকে আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে। সেটি হচ্ছে, কুশিয়ারা নদীর পানিবণ্টনবিষয়ক স্মারকটি। ফলে কুশিয়ারা নদী থেকে ১৫৩ কিউসেক পানি উত্তোলনের যে বিষয়টি রয়েছে, তাতে ভারত সম্মত হয়েছে।

‘এতে বাংলাদেশ উপকৃত হবে। আমি যতটুকু শুনেছি, ওখানে বাংলাদেশ গত তিন-চার বছর ধরেই সেচ প্রকল্পের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে আসছে। এতদিন সেটি করা যায়নি। কারণ ভারত সম্মত হচ্ছিল না। এখন ভারত সম্মতি দিয়েছে। তাই পানি পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়। ফলে ওই অঞ্চলে শুকনো মৌসুমে চাষাবাদের পানির সমস্যা কমে আসবে বলে ধারণা করা হয়। এটা ছোট হলেও একটি পজিটিভ অর্জন বলা যায়। বাকি যে ছয়টি রয়েছে, তার মধ্যে কিছু পুরোনো, কোনোটি আবার নতুন। তাই এগুলো খুব বেশি যে গুরুত্বপূর্ণ, তা নয়।’

তৌহিদ হোসেন মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরে সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার বিষয়ে দুই দেশের একমত হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, ‘আরেকটি বিষয় সীমান্ত হত্যা। বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী ভারত। বন্ধুত্বপূর্ণ দুটি দেশের মাঝে একমাত্র সীমান্ত, যেখানে গুলি করে মানুষ হত্যা করা হয়। হত্যার শিকার হয়ে থাকেন বাংলাদেশিরা। এ জন্য অভিযোগের তির থাকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের দিকে।

‘এর আগেও দুই দেশের এমন শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, কিন্তু বিএসএফের চরিত্র খুব একটা বদলাতে দেখা যায়নি। এবারের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরে যে যৌথ বিবৃতি পাওয়া গেল, সেখানে দেখা গেল সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে দুই দেশের সরকারপ্রধান একমত হয়েছেন। আশা করব এর ফল সীমান্তে দেখা যাবে।’

তিনি বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে এ সফর অভিনব কিছু নয়, তবে বাংলাদেশ এবং ভারতের যে সম্পর্ক, দুই দেশের যে ঘনিষ্ঠতা তাতে এমন শীর্ষ পর্যায়ের সফর হওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। এই সফরের কিছুদিন আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য ঘিরে সমালোচনা হয়েছিল। এই সফরে দেখা গেল শেষ মুহূর্তে এসে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীর তালিকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী নেই। পরে মন্ত্রীর দপ্তর অবশ্য জানিয়েছে, অসুস্থতাজনিত কারণে মন্ত্রী শেষ মুহূর্তে ভারত সফর থেকে বিরত থেকেছেন।

‘যদিও জনমনে একটি আলোচনা রয়েছে, মন্ত্রীর আগের বক্তব্যের সূত্র ধরেই তাকে সফর থেকে বিরত রাখা হয়েছে, তবে আমরা যদি ধরেও নিই অসুস্থতার কারণে তিনি যেতে পারেননি, এই সফর ঘিরে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি নিয়ে আলোচনার বাইরে এই সমালোচনা যেন বড় হয়ে না ওঠে, সেটিই প্রত্যাশিত।’

কী আছে যৌথ বিবৃতিতে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর নিয়ে বুধবার প্রকাশিত দুই দেশের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, দুই সরকারপ্রধান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার করতে তাদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

এতে বলা হয়, ভারত তার ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে বিশেষ স্থল শুল্ক স্টেশন, বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানির জন্য বিনামূল্যে ট্রানজিট সুবিধার প্রস্তাব দিয়েছে। এ বিষয়ে তৃতীয় দেশে ট্রান্সশিপমেন্টের জন্য বন্দর অবকাঠামো ব্যবহার করার জন্য বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারত।

নেপাল ও ভুটানে পণ্য রপ্তানির জন্য বাংলাদেশকে ভারত বিনা মূল্যে ট্রানজিট দিয়েছে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ সদ্য উদ্বোধন হওয়া চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রুটের মাধ্যমে ভুটানের সঙ্গে রেল যোগাযোগের অনুরোধ করেছে। ভারত সে অনুরোধ কার্যকারিতা ও সম্ভাব্যতার ভিত্তিতে বিবেচনা করতে সম্মত হয়েছে।

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, দুই নেতা বিবিআইএন (বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল) মোটরযান চুক্তি দ্রুত কার্যকর করার মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় ও উপ-আঞ্চলিক সংযোগ উন্নত করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করতে সম্মত হয়েছেন।

ভারত পশ্চিমবঙ্গের হিলি থেকে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে মেঘালয়ের মহেন্দ্রগঞ্জ পর্যন্ত একটি মহাসড়কসহ নতুন উপআঞ্চলিক সংযোগ প্রকল্প শুরু করতে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছে। এ বিষয়ে একটি বিশদ প্রকল্প প্রতিবেদন তৈরির প্রস্তাব করেছে। একই চেতনায় ভারত-মিয়ানমার-থাইল্যান্ড ত্রিপক্ষীয় হাইওয়ে প্রকল্পের চলমান উদ্যোগে অংশীদার হওয়ার জন্য বাংলাদেশ তার আগ্রহের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের দুই প্রধানমন্ত্রী একটি যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষার সাম্প্রতিক চূড়ান্তকরণকে স্বাগত জানিয়েছেন। এ সমীক্ষায় সুপারিশ করা হয়েছে, ব্যাপক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি উভয় দেশের জন্য কল্যাণকর হবে। তারা উভয় দেশের বাণিজ্য কর্মকর্তাদের ২০২২ সালের মধ্যে আলোচনা শুরু করতে এবং এলডিসি মর্যাদা থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের জন্য যথাসময়ে এগুলো দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং নরেন্দ্র মোদি সব ধরনের সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে তাদের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তারা এই অঞ্চলে এবং এর বাইরে সন্ত্রাসবাদ, সহিংস চরমপন্থা এবং মৌলবাদের বিস্তার রোধে তাদের সহযোগিতা আরও জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

যৌথ বিবৃতিতে সীমান্তে প্রাণহানির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে বলে সন্তোষ প্রকাশ করে উভয় পক্ষ এই সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে কাজ করতে সম্মত হয়েছে।

উভয় পক্ষ অস্ত্র, মাদকদ্রব্য ও জাল মুদ্রার চোরাচালানের বিরুদ্ধে এবং বিশেষ করে নারী ও শিশুদের পাচার রোধে দুই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ক্রমবর্ধমান প্রচেষ্টা প্রশংসার সঙ্গে উল্লেখ করেছে।

মঙ্গলবার উভয় প্রধানমন্ত্রী একান্ত বৈঠক করার পর প্রতিনিধিদল পর্যায়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

দুই নেতা গভীর ঐতিহাসিক ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ বন্ধন এবং গণতন্ত্র ও বহুত্ববাদের অভিন্ন মূল্যবোধের ভিত্তিতে দ্বিপক্ষীয় ‘চমৎকার সম্পর্ক’ বিরাজ করায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। এতে সার্বভৌমত্ব, সমতা, আস্থা ও সমঝোতার ব্যাপকভিত্তিক দ্বিপক্ষীয় অংশীদারত্ব, বিশেষ করে একটি কৌশলগত অংশীদারত্ব প্রতিফলিত হয়েছে।

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী উভয়েই রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য ও সংযোগ, পানিসম্পদ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, উন্নয়ন সহযোগিতা, সাংস্কৃতিক ও জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগসহ দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার পুরো বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।

এতে আরও বলা হয়, তারা পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন, সাইবার নিরাপত্তা, আইসিটি, মহাকাশ প্রযুক্তি, পরিবেশসম্মত জ্বালানি এবং সুনীল অর্থনীতির মতো সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্রগুলোতে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছেন।

তারা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধার কথা মাথায় রেখে নেতারা এই অঞ্চলের সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য বন্ধুত্ব ও অংশীদারত্বের চেতনায় বৃহত্তর সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

শেখ হাসিনা এবং নরেন্দ্র মোদি দ্বিপক্ষীয় এবং উপআঞ্চলিক রেল, সড়ক এবং অন্যান্য সংযোগ উদ্যোগ বাস্তবায়নের গুরুত্বের ওপর জোর দেন।

উভয় পক্ষই চলমান দ্বিপক্ষীয় উদ্যোগগুলোকে স্বাগত জানিয়েছে। যেমন: টঙ্গী-আখাউড়া লাইনের ডুয়েল-গেজে রূপান্তর, রেলওয়ে রোলিং স্টক সরবরাহ, বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি, বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নত পরিষেবার জন্য আইটি সমাধান বিনিময় করা ইত্যাদি।

বাংলাদেশ ও ভারত বেশ কিছু নতুন উদ্যোগকেও স্বাগত জানিয়েছে। যেমন: কাউনিয়া-লালমনিরহাট-মোগলঘাট-নতুন গীতালদহ সংযোগ, হিলি ও বিরামপুরের মধ্যে সংযোগ স্থাপন, বেনাপোল-যশোর লাইন বরাবর ট্র্যাক ও সিগন্যালিং সিস্টেম এবং রেলস্টেশনের আপগ্রেডেশন, বুড়িমারী ও চেংরাবান্ধার মধ্যে সংযোগ পুনঃস্থাপন এবং সিরাজগঞ্জে কনটেইনার ডিপো নির্মাণ।

দুই দেশ দ্বিপক্ষীয় উন্নয়ন সহযোগিতার অধীনে বিভিন্ন অর্থায়ন ব্যবস্থার মাধ্যমে এই প্রকল্পগুলোর অর্থায়ন অন্বেষণ করতে সম্মত হয়েছে।

দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রশংসা করেন, যেখানে ভারত এশিয়ায় বাংলাদেশের জন্য বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। বাংলাদেশ ভারত থেকে চাল, গম, চিনি, পেঁয়াজ, আদা এবং রসুনের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের অনুমানযোগ্য সরবরাহের জন্য ভারতীয় পক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছে।

ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়ে, ভারতের বিদ্যমান সরবরাহের অবস্থার ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের অনুরোধগুলো অনুকূলভাবে বিবেচনা করা হবে এবং এই বিষয়ে সব ধরনের প্রয়াস চালানো হবে।

ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে শান্তিপূর্ণ ব্যবস্থাপনা একটি অভিন্ন অগ্রাধিকার। তা স্বীকার করে শান্ত ও অপরাধমুক্ত সীমান্ত বজায় রাখার লক্ষ্যে দুই নেতা কর্মকর্তাদের ত্রিপুরায় বেড়া নির্মাণসহ জিরো লাইনের ১৫০ গজের মধ্যে মুলতবি থাকা সব উন্নয়নমূলক কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য নির্দেশ দেন।

পূর্বের আলোচনার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তা নদীর পানিবণ্টন সংক্রান্ত অন্তর্বর্তী চুক্তি করার জন্য বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের অনুরোধ পুনর্ব্যক্ত করেন, যার খসড়া ২০১১ সালে চূড়ান্ত করা হয়েছিল। উভয় নেতা নদীগুলোর দূষণ এবং অভিন্ন নদ-নদীর ক্ষেত্রে নদীর পরিবেশ এবং নদীর নাব্যতা উন্নত করার মতো সমস্যাগুলো সমাধান করার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।

উপআঞ্চলিক সহযোগিতা বাড়ানোর চেতনায় দুই নেতা কাটিহার (বিহার) থেকে বাংলাদেশের পার্বতীপুর হয়ে বোরনগর (আসাম) পর্যন্ত প্রস্তাবিত উচ্চ ক্ষমতার ৭৬৫ কেভি ট্রান্সমিশন লাইনসহ দুই দেশের পাওয়ার গ্রিডগুলোকে একযোগে সংযুক্ত করার প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নে সম্মত হন।

উভয় দেশ বিদ্যুৎ খাতে উপআঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করতে সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের মাধ্যমে নেপাল ও ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির অনুরোধ জানানো হয়। ভারতীয় পক্ষ জানিয়েছে, এর জন্য নির্দেশিকা ভারতে বিবেচনাধীন রয়েছে।

দুই নেতা ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন সংক্রান্ত অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন, যা বাংলাদেশের জ্বালানি চাহিদা পূরণে অবদান রাখবে। তারা দ্রুত প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

বাংলাদেশ তরল জ্বালানি পণ্যের জন্য তার অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে সহায়তা করার জন্য ভারতকেও অনুরোধ করেছে। ভারত উভয় পক্ষের অনুমোদিত সংস্থাগুলোর মধ্যে আলোচনা করতে সম্মত হয়েছে।

উভয় নেতা উন্নয়ন অংশীদারিত্বের ক্ষেত্রে দুই পক্ষের মধ্যে জোরদার সহযোগিতার পরিপ্রেক্ষিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সহজতর করার গুরুত্ব পুনর্ব্যক্ত করে ‍দুই নেতা স্থল শুল্ক স্টেশন/স্থল বন্দরগুলোতে অবকাঠামো এবং স্থাপনাগুলোর উন্নয়ন এবং বিশেষ স্থল শুল্ক স্টেশনগুলোতে বন্দর বিধিনিষেধ এবং অন্যান্য অশুল্ক বাধা অপসারণের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সম্পর্ক নিবিড়করণে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং প্রতিরক্ষার জন্য ক্রেডিট লাইনের অধীনে প্রকল্পগুলো দ্রুত চূড়ান্ত করতে সম্মত হন।

উভয় নেতাই ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইনের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছেন, যা বাংলাদেশের জ্বালানি শক্তির চাহিদা পূরণে অবদান রাখবে। দ্রুত এই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।

এ বিভাগের আরো খবর