বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

তুরুপের তাস ‘ইভিএম’

  •    
  • ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১১:১০

ইসি আংশিকভাবে ইভিএমে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছে। শাসক দল আওয়ামী লীগ ইভিএমে নির্বাচন চায়। কিন্তু বিএনপি চায় না। ইভিএমের বিরুদ্ধে জাতীয় পার্টিও। ইভিএম চান না দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের একটি অংশও। দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের মতের বিপক্ষে গিয়ে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হলে সেটি নিয়ে জটিলতা তৈরি হবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা।

আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে প্রধান দুই দলের সমাঝোতা আটকে আছে মূলত একটি ইস্যুতে। সেটি হলো নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন নাকি সংবিধান অনুযায়ী বিদ্যমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির এই মতভেদের মধ্যেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন তথা ইভিএমে নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ সৃষ্টি হয়েছে। প্রধান দুই দল ছাড়াও নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অবস্থান এবং সুশীল সমাজের বেশ কিছু ব্যক্তি তাতে আপত্তি করে বিবৃতি দেয়ার ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে তুমুল আলোচনা শুরু হয়েছে। পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে রাজনৈতিক সমঝোতা হলেও শেষ পর্যন্ত ‘ইভিএম’ হয়ে উঠতে পারে আগামী জাতীয় নির্বাচনের ‘তুরুপের তাস’।

কেননা ইসি আংশিকভাবে ইভিএমে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছে। শাসকদল আওয়ামী লীগ ইভিএমে নির্বাচন চায়। কিন্তু বিএনপি চায় না। ইভিএমের বিরুদ্ধে জাতীয় পার্টিও। ইভিএম চান না দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের একটি অংশও। দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের মতের বিপক্ষে গিয়ে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হলে সেটি নিয়ে জটিলতা তৈরি হবে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা।

সম্প্রতি জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘জাতীয় নির্বাচনে ইভিএমের উপযোগিতা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। ছবি: নিউজবাংলা

জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক ‘সুজন’ এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার নিউজ বাংলাকে বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনা এবং অন্যান্য কমিশনারদের ওপর মানুষের অনাস্থা আছে। তেমনি অনাস্থা আছে ইভিএম নিয়েও। তিনি দাবি করেন, প্রযুক্তিগতভাবে ইভিএম একটি দুর্বল যন্ত্র।

এতে ‘ভোটার ভেরিফায়েড পেপার অডিট ট্রেইল’ (ভিভিপিএটি) নেই, যার ফলে কমিশন ভোটের যে ফলাফল ঘোষণা করবে, তা-ই চূড়ান্ত হিসেবে গ্রহণ করতে হবে এবং এটি পুনর্গণনা বা নিরীক্ষা করার সুযোগ থাকবে না। আর প্রযুক্তির কারণে ইভিএম ব্যবহার করে ডিজিটাল জালিয়াতিও করা যায়। যেকোনো ইলেকট্রনিক যন্ত্রের মতো প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে ইভিএমের ফলাফল নিয়েও কারসাজি করা যায়। এ ছাড়া নির্বাচনের সময়ে মাঠপর্যায়ে নিয়োজিত কারিগরি টিমও নির্বাচনী ফলাফল বদলে দিতে পারেন। বদিউল আলম উল্লেখ করেন, তার সংগঠনের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে ইভিএমে নির্বাচন না করার জন্য বিবৃতি পাঠানো হয়েছে।

গত ২৭ জুলাই রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) দিয়ে কারচুপির সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পায়নি কমিশন। ছবি: নিউজবাংলা

প্রসঙ্গত, ইসি প্রথমে ১৫০টি আসনে ইভিএমে ভোট গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছিল। যদিও পরবর্তী সময়ে ৭০ থেকে ৮০টি আসনে এ পদ্ধতিতে ভোট হতে পারে বলে জানানো হয়। গত চার সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, ইসি সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ইভিএমে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু প্রকল্প পাস না হলে বা বৈশ্বিক ক্রাইসিস পরিস্থিতিতে যদি অর্থ ছাড় না হয় কিংবা এ মেশিন আমদানি করতে না পারলে, ইসির যে সক্ষমতা আছে তা দিয়েই ৭০-৮০টি আসনে ভোটগ্রহণ করার বিষয়টি নিশ্চিত। তবে সচিবালয় যদি ইভিএম সরবরাহ করে দিতে পারে তবে সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে এ মেশিনে ভোট হবে।

ইভিএমে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে নির্বাচন কমিশনের যুক্তি হলো এ পদ্ধতিতে সুষ্ঠু ভোট হয়। দ্রুত ভোট হয়। আর যেহেতু সব কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা লাগানো হবে তা ভোট ডাকাতির সুযোগও থাকবে না। সার্বিকভাবে বলা যায়, নির্বাচনী জটিলতা এড়াতে এমন সিদ্ধান্ত।

গত ২৮ জুন আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ৩০০ আসনে ইভিএমে ভোট হলে দলটির কোনো আপত্তি নেই।

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতারাও বলছেন, ইভিএম পরীক্ষিত। দেশে ইতিমধ্যে বেশ কিছু নির্বাচন এ পদ্ধতিতে হয়েছে। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্ল্যাহ নিউজ বাংলাকে বলেন, জাতীয় এবং স্থানীয় নির্বাচনে বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে ইভিএম ব্যবহার হয়েছে। কোথাও থেকে এর বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠেনি। এটি স্বচ্ছ পদ্ধতি এবং ভোট দেয়া ও গণনার কাজ দ্রুত করা যায়। তাছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশে ডিজিটালই নির্বাচন হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এদিকে শুরু থেকেই বিএনপি ও শরিকদের পাশাপাশি জাতীয় পার্টিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ইভিএমের বিরোধিতা করে আসছে। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে গিয়ে জাতীয় পার্টিসহ ১৪টি দল ইভিএম এ ভোটের বিষয়ে আপত্তি তুলেছে। আর শাসক দল আওয়ামী লীগসহ ১৪টি দল ইভিএমে ভোট অনুষ্ঠানের পক্ষে মত দিয়েছে। আর সংলাপে অংশ না নেয়া বিএনপি ও এর শরিকরা গণমাধ্যমে বারবারে ইভিএমে ভোট হওয়ার বিরোধিতা করছেন। তাদের সঙ্গে সম্প্রতি ইভিএমের বিরোধিতা করে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৩৯ জন নাগরিক। এতে যেমন নির্বাচন বিশেষজ্ঞ আছেন, তেমিন আছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক, আইনজীবী, শিক্ষাবিদরাও।

গত ২৬ আগস্ট বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের যে সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশন নিয়েছে তা জনগণ মানবে না।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদের কাছে বিরোধিতার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিবৃতিতে যা বলা হয়েছে সেটাই তার বক্তব্য।

ঐ বিবৃতিতে মোটা দাগে বলা হয়, ‘রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়াই নির্বাচন কমিশন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনে ভোট গ্রহণে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কমিশনের এ সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। এটি রাজনৈতিক বিতর্ককে আরও উসকে দেবে এবং কমিশনের বর্তমান আস্থার সংকটকে আরও প্রকট করে তুলবে। আমরা আবারও একটি ব্যর্থ নির্বাচনের কবলে পড়ব, যা জাতি হিসেবে আমাদের চরম সংকটের দিকে ধাবিত করবে।’ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ইভিএমে বিশ্বাস করছে না। তাই আগামী নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক করার পথে একটি বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়াবে। তাছাড়া প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা ও ভোটারদের আস্থাহীনতার কারণে পৃথিবীর অনেক দেশই এখন ইভিএম ব্যবহার থেকে সরে আসছে।

বদিউল আলম মজুমদারের সংগঠন ‘সুজন’ এর পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো বিবৃতিটিও একই রকম। বলা যায়, ৩৯ নাগরিকের বিবৃতির সংক্ষিপ্ত রূপ।

ইভিএমে নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং মত পার্থক্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক হারুনুর রশীদ নিউজবাংলাকে বলেন, ইভিএম নতুন পদ্ধতি। ডিজিটাল পদ্ধতি। অনেক জায়গায় ইতিমধ্যে এ পদ্ধতিতে ভোট হয়েছে। ভোটাররা এ পদ্ধতিকে গ্রহণ করেছে, তারা এভাবে ভোট দিতে পেরে খুশি। তাই ইসি যদি ইভিএমে কিছুসংখ্যক আসনে ভোটগ্রহণের উদ্যোগ নেয়, তাতে আপত্তি করার কিছু দেখছি না। আর যারা ইভিএমের বিরোধিতা করে বিবৃতি দিয়েছেন তাদের গুটিকয়েক ব্যক্তি ছাড়া সবাই বিএনপি-জামায়াত মনা অথবা এনজিও ব্যক্তিত্ব বলে মন্তব্য করেন এই শিক্ষক। তিনি বলেন, এ দেশে সত্যিকারের সুশীল সমাজ বলে কেউ নেই, তাই বিএনপি-জামায়াত যা চাইবে তারা সেই সুরে কথা বলবে, এটাই স্বাভাবিক।

এ বিভাগের আরো খবর