আমনের মৌসুম। বন্যার কারণে ভাটি এলাকার অনেকেই করতে পারেননি বীজতলা। পানি নেমে যাওয়া জমিতে আবাদ করতে এখন কিনতে হচ্ছে ধানের চারা। এমন অবস্থায় হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় জমজমাট হয়ে উঠেছে আমন ধানের চারার অস্থায়ী হাট। সে হাটে দিনে অন্তত ৩০ লাখ টাকার চারা কেনাবেচা হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
বানিয়াচং উপজেলার চিলাপাঞ্জায় হবিগঞ্জ-বানিয়াচং সড়কের দুই পাশে গত এক মাস ধরে বসছে রোপা-আমন ধানের চারার অস্থায়ী হাট। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। তবে সারা দিনের তুলনায় বিকেল ৪টার পর বেশি জমে হাটটি। ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে মুখরিত হয়ে ওঠে এলাকা।
হবিগঞ্জের বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ, লাখাই, নবীগঞ্জ ছাড়াও সুনামগঞ্জের শাল্লা ও দিরাই, কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম ও মিঠামইন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা এখানে ধানের চারা কিনতে আসেন।
চিলাপাঞ্জা বাজারে প্রতিদিন অন্তত ৪০ জন বিক্রেতা ধানের চারা নিয়ে বসেন।
বানিয়াচং উপজেলার কামারখালি এলাকার মনু মিয়া সেখানে ধানের চারা বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা চুনারুঘাট, বাহুবল, মাধবপুর, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন এলাকার ক্ষেত থেকে এসব চারা কিনে এনে এখানে বিক্রি করি। প্রতিদিন ভালো টাকার বেচাবিক্রি করতে পারি। গতকাল আমার বিক্রি হয়েছে এক লাখ ২০ হাজার টাকার চারা।’
আরেক বিক্রেতা আফতাব মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন আমি ৮০ থেকে ৮৫ আঁটি চারা বিক্রি করতে পারি। প্রতি আঁটি ১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে আমি যেসব চারা আনি সেগুলোর মান অনেক ভালো। দেশের অনেক স্থানে ঘুরে দেখে ভালো চারা সংগ্রহ করি। যাতে কেউ না ঠকেন।’
আজমিরীগঞ্জ উপজেলার কাকাইলছেও এলাকা থেকে চারা কিনতে চিলাপাঞ্জায় আসছেন কৃষক ফরিদ আহমেদ। তিনি বলেন, ‘অন্য বছর আমরা নিজেরাই চারা করি। এ বছর বন্যার কারণে বীজতলা করতে পারিনি। তাই এখন চারা কিনতে হচ্ছে। এর আগেও আমি এখান থেকে চারা নিয়েছি, আজ আবার আসছি।’
শাল্লার কৃষক মতিন মিয়াও গিয়েছেন চারা কিনতে। বলেন, ‘কিছু জমিতে চিটা আমন করছিলাম। সেগুলো বন্যায় নিছেগা। এখন রোপা আমন করমু, কিন্তু আমাদের এলাকায় চারা নাই। তাই এত দূর থাইক্বা আইছি চারা নেয়ার জন্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘একে তো এখান থেকে চারা নিতে আমাদের খরচ বেশি হবে। তার মধ্যে আবার এখানে দাম বেশি।’
বিক্রেতাদের দাবি, বেশি দামে চারা কিনতে হয়েছে তাদের। তার ওপর রয়েছে চারা সংগ্রহে শ্রমিকের মজুরি ও পরিবহন খরচ, তাই দামটা বেশি মনে হচ্ছে।
ব্যবসায়ী সুমন মিয়া বলেন, ‘চুনারুঘাট, বাহুবল, মাধবপুর, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন এলাকার ক্ষেত থেকে এসব চারা কিনি। তারপর সেগুলো ক্ষেত থেকে তোলার জন্য শ্রমিকের মজুরি লাগে ৭০০ টাকা করে। পরে পরিবহন খরচ। সব মিলিয়ে আমাদের খরচ বেশি হয়, তাই দাম একটু বেশি পড়ে।’
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, চিলাপাঞ্জা ছাড়াও জেলার আরও অন্তত পাঁচ স্থানে ছোট-বড় এমন হাট বসে। আগামী এক সপ্তাহ বসবে এই হাট।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ আশেক পারভেজ জানান, চলতি বছর হবিগঞ্জে ৮০ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। তবে তা অতিক্রম করে ৮৫ হাজার হেক্টর ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন তারা।