দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জোট গঠনের চেষ্টা করছে কয়েকটি ইসলামি দল। এই উদ্যোগে নেতৃত্ব দিচ্ছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। চরমোনাই পীরের দলটি ইতোমধ্যে ধর্মভিত্তিক কয়েকটি দলের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা চালিয়েছে।
ধর্মভিত্তিক দলটি বলছে, দেশের ইসলামি দলগুলো জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এখন অতীতের তিক্ততা মিটিয়ে একই ছাতার নিচে আসা যায় কি না তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
ইসলামী আন্দোলনের দলীয় সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে খেলাফত আন্দোলন, বিএনপির সাবেক শরিক খেলাফত মজলিশ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, কল্যাণ পার্টি, মুসলিম লীগ ও নেজামে ইসলাম পার্টির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ইসলামী আন্দোলন দেশের রাজনীতিতে নতুন গতিপথ তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে।
ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনূস আহমাদ জানিয়েছেন, এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আরও কয়েকটি ইসলামি দলের সঙ্গে তারা আলোচনা চালাবেন।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে রয়েছে খেলাফত মজলিস ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ (একাংশ)। আর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে রয়েছে তরিকত ফেডারেশন। ইসলামী ঐক্যজোট ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস একসময় ২০ দলীয় জোটে ছিল। এখনও দল দুটির খণ্ডিত অংশ ২০ দলীয় জোটে রয়েছে। বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট এবং জাকের পার্টিও কোনো জোটে নেই।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২৯৯টি আসনে প্রার্থী দেয় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। সরকারবিরোধী বিভিন্ন ইস্যুতে কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে দলটি। ধর্মীয় ইস্যু ছাড়া জনসম্পৃক্ত ইস্যুগুলোতেও দলটির নিয়মিত কর্মসূচি থাকছে। সম্প্রতি জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ইস্যুতে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে ছিল দলটি।
ধর্মভিত্তিক এসব দলের অধিকাংশই বরাবর বিএনপি ঘেঁষা। সেই দলগুলো নিয়ে চরমোনাই পীরের দলের পৃথক জোট গঠনের চেষ্টা রাজনীতির মাঠে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে তাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নিয়ে।
এ সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তরে ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব নিউজবাংলাকে বলেন, ‘অনেকেই তো বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট থেকে বের হয়ে এসেছে। যারা জোটের বাইরে আছে তাদের কোনো সমস্যা নেই। আমরা তো সমঝোতার ভিত্তিতে জোট করতে চাচ্ছি। আমরা চাই ইসলামি দলগুলোর মধ্যে যে দূরত্ব আছে সেটা দূর হোক।’
বিএনপি ঘেঁষা দলগুলোর সঙ্গে দলটির সংলাপ নিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা জাতীয় রাজনীতিতে সংশ্লিষ্ট তাদের সঙ্গে সংলাপ করলে তো কিছু ভাল পরামর্শ আসে। যদি তাদের সঙ্গে সমঝোতা হয় তখন আমরা বিষয়গুলো দেখব। যারা জোট ছাড়তে পারবে না তাদের তো নতুন জোটে টানতেও পারব না।’
মাওলানা ইউনূস আহমাদ বলেন, ‘আমরা আগামী নির্বাচন পর্যন্ত প্রক্রিয়াটি চালু রাখব। এটাকে ইসলামি দলগুলোকে পরস্পরের কাছাকাছি আনার প্রক্রিয়া বলা যেতে পারে। তবে জোট কোন নামে কিংবা কোন প্রক্রিয়ায় হবে তা চূড়ান্ত হয়নি।
‘আগে সংলাপ শেষ হোক। তারপর সবার সঙ্গে পরামর্শ করে কর্মসূচি কিংবা নির্বাচনের প্রস্তুতি বিষয়ে সবার ইচ্ছার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আপাতত এর ক্ষেত্র তৈরি করা হচ্ছে।’
ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমরা ইসলামি দলগুলোকে নিয়ে একটি জোট করার চেষ্টা করছি। সে উদ্দেশ্য নিয়ে সংলাপ চলছে। এখনই কিছু বলা যাবে না। সম্মিলিতভাবে যে সিদ্ধান্ত আসবে, সেদিকেই আমরা এগুবো। সে ক্ষেত্রে ঐক্য কিংবা সমাঝোতা যে কোনো কিছু হতে পারে।’
জোট হলে তার নেতৃত্বে কারা থাকবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এই জোটের উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। তবে সেটা যে কোনো দলের নেতৃত্বে হতে পারে। সবাই একমত হলে আমাদের নেতৃত্বেই জোট হবে।’
নির্বাচন সামনে রেখে খেলাফত মজলিস কোনো জোটে যোগ দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে কি না জানতে চাইলে দলটির মহাসচিব ড. আহমেদ আব্দুল কাদির নিউজবাংলাকে বলেন, ‘জোটের বিষয়ে এখনও আলোচনা হয়নি। ওনারা আমাদের অফিসে এসেছিলেন। ইসলামি দলগুলোর মধ্যে সুসম্পর্ক রাখা উচিত- এ বিষয়ে আমরা সম্মত হয়েছি।’
জোট হলে যাবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগে জোটের পরিবেশ তৈরি করা দরকার। সম্পর্ক ভালো করা দরকার। প্রাথমিক কাজটা হোক। তারপর রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে সেটা দেখে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ওয়ালি উল্ল্যাহ আরমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ২০ দলীয় জোটে আছি। একটি জোটে থেকে তো আমরা আরেকটি জোটে যেতে পারি না। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আমাদের চা-পানের দাওয়াত দিয়েছিল এবং আমরা গিয়েছি। রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। ওই পর্যন্তই।
দেশে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল ৩৯টি। এর মধ্যে ধর্মভিত্তিক দল ১১টি। নিবন্ধনের বাইরেও ধর্মভিত্তিক বেশ কিছু দল রয়েছে। নিবন্ধিত ইসলামি দলগুলো হলো- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, জাকের পার্টি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ ও মুসলিম লীগ।
একাত্তরে পাকিস্তানিদের পক্ষে অস্ত্র ধরার দায়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন।
খেলাফত মজলিস দীর্ঘদিন বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক ছিল। গত বছরের ১ অক্টোবর সংবাদ সম্মেলন করে তারা জোট ছাড়ার ঘোষণা দেয়। এরপর থেকে তারা এককভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছে।