অসময়ে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে মানিকগঞ্জের ঘিওরে ইছামতী নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষেরা।
গত কয়েক দিনের ভাঙনে ইতোমধ্যেই নদীগর্ভে চলে গেছে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু স্থাপনা। হুমকিতে আছে হাট-বাজার, রাস্তাঘাট, কালভার্ট, সেতু, বসতভিটাসহ আরও অসংখ্য স্থাপনা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক সপ্তাহ ধরে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ঘিওরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। এর মধ্যে ইছামতী নদীতে স্রোত বেশি হওয়ায় এর পাড়ে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রতিনিয়ত ফুলেফেঁপে উঠছে এই নদীর পানি।
সরেজমিন দেখা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে ঘিওর উপজেলার ঘিওর ইউনিয়নের কুস্তা, বেগুন নার্চী ও নার্চী এলাকার ইছামতী নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনের ফলে ঐতিহ্যবাহী ঘিওর গরুর হাট, কুস্তা ও বেগুন নার্চী এলাকার কিছু বসতভিটা ও ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
এ ছাড়া ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে ঘিওর-ঠাকুরকান্দি এলাকার যোগাযোগের একমাত্র সেতুটিও। ভাঙনরোধে বস্তায় ভরে নদীতে বালু ফেলেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
কুস্তা এলাকার বাসিন্দা হেনা সূত্রধর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নদীতে যখন ভাঙন শুরু হয়, তখন মেম্বার-চেয়ারম্যানকে জানাই। কিন্তু তারা শুধু দেখে গেছে, কিছু করেনি। এখন তো নদী সব নিয়ে গেছে, এখন আমাগো কী হবে! ছেলেমেয়ে নিয়ে কোথায় থাকুম আর কী করুম। সরকার যদি সাহায্য না করে, তাহলে আমাদের কিছুই করার নাই।’
একই এলাকার পারভিন আক্তার বলেন, ‘আমার আশপাশের মানুষের বাড়িঘর নদীতে চলে গেছে। এ বাড়িটা ছাড়া আমার আর কিছুই নাই। বাড়ির চিন্তায় তাই রাতে আমার ঘুম আসে না।’
হুমকিতে আছে হাট-বাজার, রাস্তাঘাট, কালভার্ট, সেতু, বসতভিটাসহ অসংখ্য স্থাপনা
ফুলহারা এলাকার রঞ্জিত সূত্রধর বলেন, সম্পত্তির মধ্যে আমার চার ডেসিমেলের বাড়িটাই ছিল। কিন্তু সেটুকুও নদী নিয়ে গেল। টাকা-পয়সার অভাবে একটা ঘরের ভেতরে দুই ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে থাকতাম। মাঠে কাজ করে যা পাইতাম, তা দিয়ে সংসার চালাতাম। সরকার যদি না দেখে, তাহলে মরা ছাড়া কোনো পথ থাকবে না আমার।’
ঘিওর সদরের বাবুল হোসেন বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে নদীর পানি বেড়ে আমাদের এলাকায় প্রচুর ভাঙন দেখা দিয়েছে। কুস্তা, বেগুন নার্চী ও নার্চী এলাকায় ভাঙন বেশি হচ্ছে। বিশেষ করে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী ঘিওর গরুর হাটের আংশিক নদীতে চলে গেছে। এ ছাড়া স্থানীয় হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ, মন্দির-মসজিদ, বসতভিটা ও ফসলি জমি ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হামিদুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকতে চেষ্টা করছি। এ ছাড়া ঐতিহ্যবাহী ঘিওর গরুর হাটের অভ্যন্তরীণ পথ থেকে নদী শাসন করার জন্য আড়াই কোটি টাকার কাজ হাতে নেয়া হয়েছে।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাঈন উদ্দিন জানান, ভাঙনরোধে বুধবার থেকেই ঘিওরের গরুর হাট এলাকায় বালুর বস্তা ফেলার কাজ শুরু হয়েছে।