বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের টরন্টো ফ্লাইটে আগ্রহ বাড়ছে বিদেশি যাত্রীদের। প্রায় প্রতিটি ফ্লাইটেই ৭৫ থেকে ৮০ জন বিদেশি যাত্রী পাচ্ছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী প্রতিষ্ঠানটি। এসব যাত্রীর অধিকাংশই ভারত, নেপাল ও ভুটানের নাগরিক।
বিমানের জনসংযোগ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বাণিজ্যিকভাবে ২৭ জুলাই ফ্লাইট চালুর পর থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত এক মাসে ঢাকা থেকে ২ হাজার ১২৯ জন যাত্রী বহন করা হয়েছে। এ সময়ে কার্গো পরিবহন করা হয়েছে ৬৭ হাজার ৪৪১ টন।
টরন্টো থেকে ফিরতি ফ্লাইটে এ সময়ে পরিবহন করা হয়েছে মোট ৮৪৬ জন যাত্রী। তবে কানাডা থেকে কার্গো পরিবহন-সংক্রান্ত চুক্তি না থাকায় দেশটি থেকে কোনো কার্গো দেশে আনতে পারেনি বিমান।
ঢাকা থেকে টরন্টো যাওয়া যাত্রীদের একটি বড় অংশই বিদেশি। তারা প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশ থেকে ঢাকায় ট্রানজিট নিয়ে টরন্টো যাওয়া-আসা করছেন।
বিমানের তথ্য বলছে, ২৮ আগস্টের ফ্লাইটে এ ধরনের ট্রানজিট যাত্রী ছিলেন ৪২ জন এবং ৩১ আগস্ট ছিলেন ১০২ জন। আর ৩ সেপ্টেম্বর ৫১ জন যাত্রী ঢাকায় ট্রানজিট নিয়ে টরন্টো গেছেন।
ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৭০ জন যাত্রী নিয়ে ২৬ মার্চ টরন্টোর পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের উদ্দেশে উড়াল দেয় বিমানের প্রুভেন (পরীক্ষামূলক বাণিজ্যিক) ফ্লাইট। টানা সাড়ে ১৮ ঘণ্টা আকাশে থেকে কানাডায় পৌঁছে বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ।
দেশি এয়ারলাইনসগুলোর মধ্যে টানা এতক্ষণ আকাশে ওড়ার নজির আর নেই। বিশ্বেও এমন নজির খুব কম। যুক্তরাষ্ট্রের উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং বলছে, যাত্রী নিয়ে ৭৮৭ উড়োজাহাজের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ একটানা ওড়ার রেকর্ড এটি।
ঢাকা থেকে আকাশপথে টরন্টোর যে দূরত্ব, এটিকে এভিয়েশনের পরিভাষায় বলা হয় ‘আল্ট্রা লং হউল’। বিশ্বে এ ধরনের গন্তব্যে সরাসরি ফ্লাইট চলার নজির খুব বেশি নেই।
এই রুটে বিমানের বাণিজ্যিক ফ্লাইট শুরু হয় ২৭ জুলাই। ওইদিন ১৫৪ যাত্রী নিয়ে ঢাকা ছাড়ে বিমানের টরন্টো ফ্লাইট। এর মধ্য দিয়ে উত্তর আমেরিকার সঙ্গে আকাশপথে সরাসরি যুক্ত হয় বাংলাদেশ।
বিমানের জনসংযোগ বিভাগের মহাপরিচালক তাহেরা খন্দকার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ফ্লাইটটি দেশি যাত্রীদের পাশাপাশি বিদেশিদেরও আকৃষ্ট করছে। এর একটি কারণ হলো এটি ঢাকা থেকে কোনো ট্রানজিট ছাড়াই পরিচালিত হচ্ছে। ফলে কম সময়ে যাত্রীরা টরন্টো পৌঁছাতে পারছেন।’
ফিরতি ফ্লাইটে যাত্রী কম থাকার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘কানাডায় এখন অফ-সিজন চলছে। কোভিডের কারণে শিক্ষার্থী বা অভিবাসী যারা দেশটিতে থাকেন তারা দীর্ঘদিন ধরে ফিরতে পারছিলেন না। মূলত তারাই এখন বেশি যাচ্ছেন। সামনে শীতকালীন ছুটি, বড়দিন ও নতুন বছরের ছুটিতে ফিরতি ফ্লাইটেও উল্লেখযোগ্য যাত্রী পাওয়া যাবে বলে আমরা আশা করছি।’
প্রাথমিকভাবে এই রুটে সপ্তাহে দুটি করে ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান। পরিকল্পনা অনুযায়ী ফ্লাইটটি নন-স্টপ হওয়ার কথা থাকলেও ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে নিরাপত্তা বিবেচনায় আপাতত রাশিয়ার আকাশসীমা ব্যবহার করা হচ্ছে না। এ জন্য ফ্লাইটটি রি-ফুয়েলিংয়ের জন্য তুরস্কের ইস্তাম্বুলে ১ ঘণ্টার যাত্রাবিরতি করছে।
অবশ্য এই যাত্রাবিরতির সময় যাত্রীরা কেউই উড়োজাহাজ থেকে নামতে পারেন না। তুরস্ক থেকে কোনো যাত্রীও এই ফ্লাইটে নেয়া হচ্ছে না।
বিমান প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমরা টরন্টো ফ্লাইট অপারেট করা শুরু করেছি। এটা নিয়ে সবার মধ্যেই একটা সন্দেহ ও উদ্বেগ ছিল যে এই ফ্লাইটটি লাভজনক হবে কি না, বিশেষ করে জ্বালানি তেলের এই চড়া মূল্যের মধ্যে। আমরা কিন্তু অনেক চেষ্টা করে এই অনুমতি পেয়েছি এবং সেটাকে কাজে লাগিয়েছি।
‘আমাদের টরন্টো ফ্লাইট অলমোস্ট ফুল যাত্রী নিয়েই যাচ্ছে। প্রতি ফ্লাইটে ভারত থেকে ৭৫-৮০ জন যাত্রী আমরা পাচ্ছি। ভুটান ও নেপাল থেকেও যাত্রী পাচ্ছি।’
ঢাকা থেকে সরাসরি টরন্টো যেতে সময় লাগে প্রায় ১৬ ঘণ্টা। এই রুটে বিমান ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্রের নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের তৈরি ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ। এই উড়োজাহাজগুলোর জ্বালানি খরচ অন্যগুলোর চেয়ে অন্তত ২০ শতাংশ কম। আর এ কারণে এগুলো পূর্ণ যাত্রী নিয়ে একটানা ১৬ ঘণ্টারও বেশি সময় আকাশে উড়তে পারে।
ঢাকা থেকে জাপানের নারিতা হয়ে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং কানাডার টরন্টো হয়ে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে আকাশপথে যুক্ত হতে বেশ কয়েক বছর ধরেই চেষ্টা চালিয়ে আসছে বিমান। কিন্তু করোনার কারণে সে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যায়নি।
এ রুটে বিমানের ফ্লাইট চলাচল পুরোদমে শুরু হওয়ায় এয়ারলাইনসটি তার বহরে থাকা দূরপাল্লার উড়োজাহাজগুলোর পূর্ণ সক্ষমতা ব্যবহার করতে পারবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিমানের বহরে দীর্ঘ দূরত্বে উড়তে সক্ষম অন্তত ১০টি উড়োজাহাজ থাকলেও রুট না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে সেগুলোর সক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ছয়টি বোয়িং-৭৮৭ ও চারটি বোয়িং-৭৭৭ মডেলের উড়োজাহাজ। এর প্রতিটি টানা ১৬ ঘণ্টার বেশি উড়তে সক্ষম।
বর্তমানে বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনা করা কোনো এয়ারলাইনসেরই ঢাকা থেকে টরন্টোয় সরাসরি ফ্লাইট নেই। বিমান আশা করছে, অদূর ভবিষ্যতে এই ফ্লাইটে মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার অনেক আন্তর্জাতিক যাত্রী পাওয়া যাবে।