মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিরাজ শরীফকে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে ওই প্রতিষ্ঠানেরই প্রধান শিক্ষক ও তার স্বজনদের বিরুদ্ধে।
বুধবার বেলা ১১টার দিকে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার রাধাগোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
মিরাজ শরীফের অভিযোগ, তিন শিক্ষার্থীকে প্রহারের প্রতিবাদ করায় রাগান্বিত হয়ে প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান ও তার লোকজন তাকে লাঠিসোঁটা ও লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে আহত করে।
এ বিষয়ে আহত শিক্ষক গাংনী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এদিকে সহকারী শিক্ষককে পেটানোর কথা স্বীকার করলেও শিক্ষার্থীদের মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্র জানিয়েছে, ঘটনাটি তদন্তে দুই সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়েছে। সত্যতা পেলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অভিযোগ থেকে জানা গেছে, গত ৫ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির গণিত ক্লাসে যান প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান। ক্লাসে অঙ্ক না পারায় তিন শিক্ষার্থীকে ডাস্টার দিয়ে মাথায় আঘাত করেন তিনি।
এ ঘটনায় ওই তিন শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা বিদ্যালয়ে আসেন। প্রধান শিক্ষককে না পেয়ে তারা সহকারী শিক্ষকদের কাছে বিষয়টি জানতে চান। সহকারী শিক্ষকরা অভিভাবকদের সান্ত্বনা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেন।
বুধবার সকালে সহকারী শিক্ষক মিরাজ শরীফ শিক্ষার্থীদের প্রহারের বিষয়টির প্রতিবাদ করেন এবং বিদ্যালয়ে অভিভাবকদের আসার বিষয়টি প্রধান শিক্ষককে জানান।
এ ঘটনায় রাগান্বিত হয়ে প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান তার স্বজনদের খবর দিয়ে বিদ্যালয়ে ডেকে আনেন এবং মিরাজকে মারধর করেন। পরে আহত মিরাজকে উদ্ধার করে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন অন্য শিক্ষকরা।
মিরাজ শরীফ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক ক্লাসে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ভয়-ভীতি দেখান এবং অকথ্য গালিগালাজ করেন। এতে শিক্ষার্থীরা ভয় পেয়ে স্কুলে আসা বন্ধ করে দেয়। অনেক কষ্ট করে হোম ভিজিটের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের স্কুলে নিয়ে আসা হয়। এই নিয়েও মাঝেমধ্যেই প্রধান শিক্ষক আমাদের ওপর রাগান্বিত হন এবং মারমুখী আচরণ করেন।’
সহকারী শিক্ষক মিরাজ শরীফকে মারধরের বিষয়টি স্বীকার, এবং এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন বিদ্যালয়ের অপর সহকারী শিক্ষক আব্দুর রশিদ।
এদিকে অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক হাবিবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি শিক্ষক হলেও রক্তে-মাংসে গড়া একটি মানুষ। আমাকে সমস্ত শিক্ষক মিলে বিভিন্ন সময় হেয় করার চেষ্টা করেন। আমি বিদ্যালয় থেকে বদলি নিতে চেয়ে শিক্ষা অফিসে দরখাস্ত করেছি। আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটেছে। তবে কোনো শিক্ষার্থীকে মারধর করিনি। অভিভাবকরা যদি আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করতে পারেন, তবে স্বেচ্ছায় বিদ্যালয় ছেড়ে চলে যাব।’
এ বিষয়ে গাংনী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাজাহান রেজা জানান, শিক্ষক মিরাজ শরীফের অভিযোগের ভিত্তিতে দুই সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এই কমিটি তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। প্রতিবেদন অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেবেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।