পদ্মা নদীতে পানি বেড়েই চলেছে। নদীর কুষ্টিয়ার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে গত ১৫ দিনে পানির উচ্চতা বেড়েছে ২ দশমিক ১৮ মিটার। পানি এখন বিপৎসীমার কাছাকাছি অর্থাৎ ৯১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সঙ্গে পানি বাড়ছে পদ্মার প্রধান শাখা নদী গড়াইয়েও। এতে পদ্মা-গড়াই অববাহিকার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাচ্ছে, দেখা দিয়েছে বন্যা পরিস্থিতি। তীব্র হচ্ছে নদীভাঙনও।
ভারতের গঙ্গা নদী বাংলাদেশে প্রবেশের পর নাম হয়েছে পদ্মা। নদীতে এখন ঘোলা পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এ নদীর পানি প্রথম পরিমাপ করা হয় কুষ্টিয়ার হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা তথ্যের দৈনিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ১৪ মিটার ২৫ সেন্টিমিটার। বুধবার সকালের পরিমাপে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল ১৩ দশমিক ৩৪ মিটার উচ্চতায়। বিপৎসীমা ছুঁতে বাকি ৯১ সেন্টিমিটার। আর কুষ্টিয়ার গড়াই নদীতে বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৭৫ মিটার। এখানে পানি এখন প্রবাহিত হচ্ছিল ১১ দশমিক ৬৬ মিটার উচ্চতায়।
পানি বাড়ায় পদ্মা ও গড়াই তীরবর্তী কিছু নিচু এলাকায় পানি ঢুকেছে। কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার চিলমারী, ফিলিপনগর, রামকৃষ্ণপুর ও মরিচা ইউনিয়নের ১৮টি গ্রামে পানি ঢুকেছে। ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। পানি ঢুকেছে চারটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও। এসব এলাকার মানুষ বন্যার আশঙ্কা করছেন।
মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তালবাড়িয়া বালুঘাট এলাকায় নদী ভেঙেই চলেছে। কদমতলায় নতুন করে আরও ছয়জনের বসতবাড়ি নদীতে চলে গেছে।
তিনি জানান, মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া, বহলবাড়িয়া, বারুইপাড়া ইউনিয়ন, ভেড়ামারা উপজেলার বাহিরচর ইউনিয়ন ও সদরের হরিপুর ইউনিয়নে নদীতীরের কৃষিজমি একের পর এক ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে। নদীর পানি বাড়ায় ভাঙন আরও তীব্র হয়েছে। এ ছাড়া ভাঙন দেখা দিয়েছে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এলাকাতেও। কুমারখালী উপজেলার পাথরবাড়িয়া, খোকসার ওসমানপুর ও বেতবাড়িয়াতেও নদী ভাঙন চলছে।
ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘এসব এলাকার মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছেন। গত বছর ভাঙন প্রতিরোধে যেসব জায়গায় পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করেছে, সেসব জায়গায়ও নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে আমি পানি উন্নয়ন বোর্ডে ভাঙন ঠেকানোর আবেদন করেছি।’
কুষ্টিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোলজি বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদ হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিদিনই পানি বাড়ছে। গত মাসের ২৩ তারিখে হার্ডিঞ্জ পয়েন্টে পানির উচ্চতা ছিল ১১ দশমিক ১৬ মিটার। ওইদিনই পানি বাড়ে ৪৫ সেন্টিমিটার। পরদিন বাড়ে ৩৭ সেন্টিমিটার। তার পরের দিন বাড়ে আরও ১৪ সেন্টিমিটার। এরপর কয়েক দিন ৩ থেকে ৬ সেন্টিমিটার করে পানি বেড়েছে।’
গড়ে প্রতিদিন ৫-৬ সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভারত থেকে পানি আসছে বেশি। এ ছাড়া বৃষ্টির পানি এসেও নদীর প্রবাহে যুক্ত হচ্ছে।’
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, ‘ভাঙন চলছে, আমাদের প্রতিরোধ কাজও চলছে। জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। অর্থ বরাদ্দে কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও কাজ থেমে নেই।’
তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল হামিদ বলেন, ‘এ সময় পানি বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। বন্যা বা ভাঙনের ব্যাপারে খোঁজখবর রাখছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি আছে।’
দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এসব এলাকায় ইতোমধ্যেই সরকারি ত্রাণ পাঠানো হয়েছে।’