কুড়িগ্রামে নিত্যপণ্যের পাশাপাশি ওষুধের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই হঠাৎ করে দাম বাড়িয়ে দেয়ায় ব্যবসায়ীদেরও বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি দেশেও মূল্যস্ফীতির বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতির প্রভাবে নিম্ন আয়ের মানুষকে পড়তে হচ্ছে চরম দুরবস্থায়।
এ অবস্থায় ওষুধের দাম বৃদ্ধি তাদের জীবনে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অনেক কোম্পানির প্যাকেটে মূল্য, উৎপাদন এবং মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ অস্পষ্ট থাকায় সাধারণ মানুষ বুঝতে পারছে না। এতে অনেক সময় বেশি টাকার সঙ্গে বিবাদেও জড়াচ্ছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
ওষুধের পাশাপাশি চিকিৎসকের ভিজিট, ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা-নিরীক্ষার টাকাও বাড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন কুড়িগ্রামের সাধারণ মানুষ।
সম্প্রতি কুড়িগ্রামের উলিপুরে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে ওষুধ বিক্রি করার অভিযোগে দুটি ফার্মেসিকে ১২ হাজার টাকা জরিমানা করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
এরপর ওষুধ ব্যবসায়ীরা ক্ষুব্ধ হয়ে সাত ঘণ্টা ধর্মঘট পালন করে। সে সময় ফার্মেসি বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়তে হয়েছে রোগীদের।
ওষুধ কোম্পানিগুলো প্রথমে সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে ওষুধের সংকট তৈরি করেছে। এরপর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ সেখানকার মানুষের।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলার জয়মনিরহাট গ্রামের রোগী সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘১৫ দিন আগেই যে ওষুধ ৮০ টাকা দিয়ে কিনেছি, সেটি এখন ১০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। ভূরুঙ্গামারী থেকে আসতে ১০০ টাকা খরচ। এখানে এসে দেখি ওষুধের দাম বেড়েছে। বাড়তি টাকা ঋণ করে ওষুধ কিনে যেতে হচ্ছে।’
কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নিজের শিশুসন্তানকে ভর্তি করিয়েছেন সদর উপজেলার কাঁঠালবাড়ি ইউনিয়নের সন্যাসী গ্রামের রুহুল আমিন।
তিনি বলেন, ‘আমার সন্তানের ডায়রিয়া হয়েছে। হাসপাতাল থেকে একটি জিংক সিরাপ কিনতে দিয়েছে। সিরাপের প্যাকেটে অস্পষ্টভাবে উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণ তারিখ আর দাম লেখা। প্যাকেটে ৩৫ টাকা লেখা থাকলেও কিনতে হলো ৫০ টাকায়। দোকানদার বলল, নতুন দাম কোম্পানি বাড়িয়েছে। কিছু করার নেই। বিপদে পড়েই তো ওষুধ নিতে হয়। এখন কে যায় তাদের সঙ্গে ঝগড়া করতে?’
শহরের ধরলা সেতু বাঁধের পাড় এলাকার বাসিন্দা আলেমা বেগম বলেন, ‘সব জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, ডাক্তারের ভিজিট, টেস্ট ও ওষুধ। এগুলো কিনতে এসে কষ্ট হচ্ছে। এখন সন্তানদের মুখে খাবার দেই নাকি জীবন বাঁচাতে ওষুধ কিনি? হামার মতো গরিব মানুষের খুবই কষ্ট হচ্ছে।’
ফার্মেসি ব্যবসায়ী লাতিফুর রহমান বলেন, ‘হঠাৎ করে বেশ কিছু ওষুধের দাম বেড়েছে, ফলে কিছু ওষুধ সংকটও রয়েছে। রোগীর লোকজন ওষুধ কিনতে এলে বাকবিতণ্ডা লেগে যাচ্ছে অনেক সময়।’
কুড়িগ্রাম জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত বাজার তদারকি চলছে। ওষুধের অতিরিক্ত দাম নেয়ার বিষয়ে কোনো ক্রেতা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’