বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

আউশের ফলনে খুশি, অস্বস্তি দামে

  •    
  • ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১০:০৬

জেলার মহাদেবপুরের ধান ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম জানান, এবার আউশের আবাদ ভালো হয়েছে। তবে থেমে থেমে বেশ কয়েক দিন বৃষ্টি হওয়ার কারণে ধান কিছুটা ভেজা রয়েছে, এতে দাম কম। প্রকারভেদে ৮০০, ৮৫০ ও ৯০০ টাকা মণ দরে চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনা হচ্ছে।

উত্তরের কৃষিপ্রধান জেলা নওগাঁয় চলতি মৌসুমে আউশ ধানের ফলন ভালো হয়েছে। বিঘাপ্রতি ১৫ থেকে ১৬ মণ হারে ফলন পাচ্ছেন চাষিরা। তবে বাজারে মনমতো দাম পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ চাষিদের। তাই তাদের মুখে নেই স্বস্তির হাসি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, নওগাঁয় চলতি মৌসুমে ৫৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আউশ ধান আবাদ হয়েছে। কৃষকরা সবচেয়ে বেশ চাষি করেছেন ব্রি-৪৮ জাতের ধান। অন্য জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্রি-২৮, ৫৬, ৬৫, ৮২, ৮৫, বিআর-২১, বিনা-১৯, পারিজা ও জিরাশাইল।

জেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা যায়, চাষিরা ধান কাটা, মাড়াই ও বিক্রি করতে ব্যস্ত। তবে দাম ভালো না পাওয়ায় হতাশ এই চাষিরা। ধানের উৎপাদন খরচ ও পরিশ্রমের সঠিক মূল্য না পাওয়ায় ব্যাবসায়িক সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন তারা।

মহাদেবপুরের ওসমান গনি নামের এক ধান চাষি বলেন, ‘তিন মাস ফসলের পরিচর্চা করে, ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা খরচ করে ফসল উৎপাদন করে যদি ৩-৪ হাজার টাকা লাভ হয়, তাহলে ধান উৎপাদন করে কী লাভ। এ লাভ দিয়ে আমাদের মতো চাষিদের সংসার চলবে কী করে?’

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার সরস্বতীপুর গ্রামের চাষি ওসমান গনি বলেন, ‘৩ বিঘা জমিতে পারিজা জাতের ধানের আবাদ করেছিলাম। ধান কাটা ও মাড়াই করে ইতোমধ্যে ১৬ মণ ধান বিক্রি করেছি ৮০০ টাকা মণ দরে। যেখানে প্রতি বিঘায় সার, সেচ, ওষুধ, শ্রমিকসহ উৎপাদন খরচ হয়েছে ৯ হাজার টাকার মতো।

‘আর এক বিঘা জমির ধান বিক্রি করে পেয়েছি ১২ হাজার ৮০০ টাকা। সব খরচ বাদ দিয়ে লাভ হয়েছে তিন হাজার ৮০০ টাকা। তাহলে এই লাভ দিয়ে কীভাবে সংসার চালাব?’

ঘোষনগর গ্রামের চাষি হামিদুর রহমান বলেন, ‘এবার ৭ বিঘা জমিতে জিরাশাইল জাতের ধানের আবাদ করেছি। ৫ বিঘা জমির ধান কাটা, মাড়াই করে বিক্রি করেছি ৯০০ টাকা মণ দরে। প্রতি বিঘায় তো ৯ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। ধানের দাম এখন থেকে ৯০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। বিঘাপ্রতি যদি মাত্র ৩-৪ হাজার টাকা লাভ হয়, তবে ধান চাষ করে কী লাভ বলেন।’

বদলগাছী উপজেলার ভান্ডারপুর গ্রামের চাষি বকুল হোসেন বলেন, ‘আমরা হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে ধানের আবাদ করে থাকি। আমাদের মতো চাষিদের উৎপাদিত ধানের চাল সবাই খেয়ে থাকে, আর আমরা পাইনা ন্যায্যমূল্য। ধানের দাম কমায় ব্যবসায়ীদের একটা সিন্ডিকেট। এ ব্যাপারে সরকারের বিশেষ নজর দেয়া প্রয়োজন।

‘যদি ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা মণ দরে ধানের দাম পেতাম তাহলে একটু ভালো লাভ হতো। বর্তমান বাজারদরে খুবই হতাশ আমরা। এত শ্রম দিয়ে ধান উৎপাদন করে যদি ভালো দাম না পাই তবে পরিবার নিয়ে খেয়ে-পড়ে চলব কীভাবে। ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকারের কাছে অনুরোধ করছি।’

তবে ধানের দাম কমার পেছনে অন্য যুক্তি তুলে ধরলেন স্থানীয় ধান ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, ফলন ভালো হলেও ধান কিছুটা ভেজা থাকার কারণে দাম কিছুটা কম।

জেলার মহাদেবপুরের ধান ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম জানান, এবার আউশের আবাদ ভালো হয়েছে। তবে থেমে থেমে বেশ কয়েক দিন বৃষ্টি হওয়ার কারণে ধান কিছুটা ভেজা রয়েছে, এতে দাম কম। প্রকারভেদে ৮০০, ৮৫০ ও ৯০০ টাকা মণ দরে চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনা হচ্ছে।

বদলগাছীর ভান্ডারপুর এলাকার ধান ব্যবসায়ী এমদাদুল হক বলেন, ‘ধানের আবাদ ভালো হয়েছে এবার। বৃষ্টির কারণে ধান ভেজা। এ ছাড়া মিলারদের চাহিদা অনুযায়ী ধান দিতে হয়, যার কারণে তাদের চাহিদা কম থাকলে ধানের দামে কিছুটা প্রভাব পড়ে।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা এ কে এম মনজুরে মাওলা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নওগাঁয় চলতি মৌসুমে ৫৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আউশ ধান আবাদ হয়েছে। ফলনও বেশ ভালো হয়েছে। ধান উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৫৬ হাজার ৪১০ টন। সেখানে চালের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৭০ হাজার ৯৪০ টন।

‘এরই মধ্যে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা-মাড়াই হয়েছে। মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে আর চাষিরা ধান কাটা-মাড়াই করে তাৎক্ষণিকভাবে বিক্রি করে দিচ্ছে। যদি ধান কিছুদিন রাখে, তারপর বিক্রি করে দেয়, তাহলে আশা করছি দাম ভালো পাবে।’

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, নওগাঁ সদর উপজেলায় ৩ হাজার ৬৯৫ হেক্টর, রানীনগরে এক হাজার ১৫০ হেক্টর, আত্রাইয়ে এক হাজার ৭২০ হেক্টর, বদলগাছীতে এক হাজার ৫৬০ হেক্টর, মহাদেবপুরে ১৩ হাজার ১১০ হেক্টর, পত্নীতলায় ৬ হাজার ৮৫০ হেক্টর, ধামইরহাটে ২ হাজার ২৮০ হেক্টর এবং মান্দা উপজেলায় ১৪ হাজার ৩১০ হেক্টর , সাপাহার উপজেলায় ৭৯৫ হেক্টর, পোরশায় ৯১০ হেক্টর এবং নিয়ামতপুরে ৯ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের আবাদ হয়েছে।

এ বিভাগের আরো খবর