ঢাকা ওয়াসার সরবরাহ করা পানি ফুটিয়ে ছাড়া পান করা যায় না। আর বোতলের বিশুদ্ধ পানির দাম অনেক বেশি– ৩০ টাকার ওপরে লিটার।
মাত্র ৪০ পয়সা লিটারে মানুষের দোরগোরায় সুপেয় পানি পৌঁছে দেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। চালু করেছে অভিনব এক উদ্যোগ– পানির এটিএম বুথ। বিভিন্ন মহল্লায় এ রকম পানির দোকান চালু হচ্ছে। এলাকাবাসী প্রিপেইড কার্ড ব্যবহার করে এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলার মতো বিশুদ্ধ পানি বোতল বা জারে ভরে নিয়ে যাচ্ছেন।
২০১৭ সাল থেকে এই পদ্ধতিতে গ্রাহকদের পানি সরবরাহ করছে ঢাকা ওয়াসা। প্রতিষ্ঠানটির বেশির ভাগ পানির পাম্পের সঙ্গে রয়েছে এ রকম ওয়াটার এটিএম বুথ।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলা একাডেমির পাশে ওয়াসার পাম্পের পাশে এ রকম একটি বুথ ঘুরে দেখেন নিউজবাংলার প্রতিবেদক। দেখা যায়, গ্রাহকরা আগ্রহ নিয়ে সেখান থেকে পানি কিনছেন।
এ বুথে পানি নিতে আসা জুলহাস নামে এক গ্রাহক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি প্রায় সাত মাস ধরে এখান থেকে পানি নিচ্ছি। পানির মান খুব ভালো। বাসায় সাপ্লাইয়ের পানি ভালো না হওয়ায় এখান থেকে নিয়মিত পানি নেই। এ পানি শুধু খাওয়ার কাজে ব্যবহার করি। ফুটাতে হয় না। সাশ্রয়ী হওয়ায় রান্নার কাজেও ব্যবহার করা যায়।’
এটিএম বুথের নির্দিষ্ট অংশে সুনির্দিষ্ট একটি জায়গায় কার্ড পাঞ্চ করে গ্রাহকরা পানি সংগ্রহ করছেন। কেউ কেউ বড় জারে এবং কেউ কেউ বোতলে পানি নিয়ে যাচ্ছেন। পানির জার রিকশায় তুলে সেগুলো বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন গ্রাহকেরা।
মাসুদ নামে এক গ্রাহক এসেছেন তার মাকে সঙ্গে নিয়ে। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন আমরা খাওয়ার পানি এখান থেকে নেই। প্রায় এক বছর ধরে নিচ্ছি। কোনো সমস্যা হয়নি।’
ড্রিংকওয়েল নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) চুক্তির মাধ্যমে এ এটিএম বুথগুলো চালু করা হয়েছে।
ড্রিংকওয়েলের অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার (অপারেশন অ্যান্ড কো-অর্ডিনেশন) সাদ্দাম হোসেন রনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘২০১৭ সালে মুগদা-২ ওয়াটার এটিএমে আমরা পাইলটিং শুরু করি। প্রথমে ১০টি সিস্টেম নিয়ে পাইলট করি। এরপর ৩০০টি ওয়াটার এটিএম চালুর পরিকল্পনা করি। গত বছর সেটি কার্যকর হওয়ার পর আরও ২০০ অর্থাৎ পুরো ঢাকায় আমরা ৫০০টি বুথ চালু করার পরিকল্পনা হাতে নেই। ওয়াসার আওতায় এটি ২০২৩ সালের মধ্যে কার্যকর করার লক্ষ্যে কাজ চলছে।’
এখন কতগুলো বুথ চালু আছে জানতে চাইলে রনি বলেন, ‘এখন ২৮৫টি চালু আছে। বাকিগুলোর কাজ চলছে। ঢাকা ওয়াসার কনস্ট্রাকশন এবং পাম্পের বোরিংয়ের জন্য আপাতত সেগুলো বন্ধ আছে। কাজ শেষ হলে আবার চালু করা হবে।’
ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামেও এ রকম ছয়টি পানির এটিএম বুথ আছে। সেগুলোর নাম বিএসটিআই কমপ্ল্যান্ট। যেখান থেকে ২০ লিটার পর্যন্ত পানির জারে পানি দেয়া হয়। রাজশাহীতে চালু রয়েছে চারটি এটিএম বুথ।
সাদ্দাম হোসেন রনি জানান, তারা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সঙ্গেও কাজ করছেন। এর আওতায় মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, কুলাউড়া, বাঞ্ছারামপুর এবং মানিকগঞ্জের পাঁচটি গ্রামে বসানো হয়েছে এ রকম এটিএম বুথ।
এ উদ্যোগে ওয়াসা সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভূমি এবং পানির সংযোগ দেয়। ড্রিংকওয়েল প্রযুক্তি, ওয়াটার এটিএম এবং অপারেশনের সার্ভিস দেয়।
সাদ্দাম হোসেন রনি জানান, ওয়াসার সংযোগের মাধ্যমে পানি সংগ্রহ করে দুটি ভেসেল ব্যবহার করে পানি বিশুদ্ধ করা হয়। এর একটির মাধ্যমে পানি আয়রনমুক্ত করা হয়। আরেকটি মাইক্রো ফিল্টারের মাধ্যমে পানিকে ক্ষুদ্র ময়লা ও জীবাণুমুক্ত করা হয়। এর পরের ধাপে আলট্রাভায়োলেট রশ্মির মাধ্যমে পানির ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস অপসারণ করা হয়।
গ্রাহকের প্রচুর সাড়া পাওয়ায় পরবর্তীতে এগুলোর আওতা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
সেগুনবাগিচার পাম্প অপারেটর মারিয়া আক্তার নিউজবাংলাকে জানান, এখানে ওয়াটার বুথ চলছে এক বছর ধরে। এই এলাকার কার্ডধারী গ্রাহকরা নিয়মিত পানি সংগ্রহ করছেন।
আগ্রহী ব্যক্তি তার জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি এবং দুই কপি ছবি নিয়ে যে কোনো ওয়াটার পাম্প থেকে নিজ নামে এটিএম কার্ড ইস্যু করতে পারেন। একটি কার্ডের দাম ৫০ টাকা। আর সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে ৯৯৯ টাকা পর্যন্ত রিচার্জ করা যায়।
পাম্প থেকেই অ্যাপের মাধ্যমে কার্ডে টাকা ভরা যায়। পাম্প অপারেটর রিচার্জ করে দেন। এ ছাড়া বিকাশের মাধ্যমেও টাকা ভরা যায়।