চেক ডিজঅনারের মামলায় কোনো ব্যক্তিকে জেলে পাঠানো সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি বলে হাইকোর্টের রায় আগামী ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করেছে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত।
আগামী ১৪ নভেম্বর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হবে।
মঙ্গলবার বিচারপতি মো. ইনায়েতুর রহিমের চেম্বার জজ আদালত এ আদেশ দেয়।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন।
গত ২৮ আগস্ট এ-সংক্রান্ত বেশ কিছু মামলা নিষ্পত্তি করে বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেয়।
রায়ে চেক ডিজঅনারের মামলায় কোনো ব্যক্তিকে জেলে পাঠানো সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি বলে রায়ে পর্যবেক্ষণ দেয় হাইকোর্ট। সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘আইনানুযায়ী ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তি-স্বাধীনতা থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না।’
আদালত তার রায়ে বলে, `নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্টের ১৩৮ ধারা সংশোধন করে চেক ডিজঅনারের মামলায় জেলে পাঠানোর বিধান বাতিল করার জন্য জাতীয় সংসদকে পরামর্শ দিয়েছে। একই সঙ্গে নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্টের ১৩৮ ধারা সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত চেক ডিজঅনারের মামলা নিষ্পত্তির জন্য একটি গাইডলাইন করে দিয়েছে আদালত।
রায়ে বলা হয়, কোনো ব্যক্তিকে তার ব্যক্তিস্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা সংবিধান পরিপন্থি। নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্টের অধীনে চেক ডিজঅনারসংক্রান্ত মামলায় কোনো ব্যক্তিকে কারাগারে বন্দি রাখা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা হরণের নামান্তর। চেক ডিজঅনার মামলায় কোনো ব্যক্তিকে কারাগারে পাঠানো বা কারাগারে রাখা সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি এবং ইন্টারন্যাশনাল কনভেন্যান্ট অন সিভিল অ্যান্ড পলিটিক্যাল রাইটস (ওএইচসিএইচআর) এর ১১ অনুচ্ছেদের পরিপন্থি। বাংলাদেশ ওএইচসিএইচআর-এর স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে চেক ডিজঅনার মামলায় কোনো ব্যক্তিকে কারাগারে পাঠাতে পারে না।’
বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করে আদালত বলে, ‘সিঙ্গাপুর, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশে চেক ডিজঅনার মামলায় জেলে পাঠানোর বিধান নেই। এসব দেশে চেক ডিজঅনারের মামলাগুলোকে দেওয়ানি প্রকৃতির মামলা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশ নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্টের ১৯৯৪ সালে পেনাল কোড সংযোজনের মাধ্যমে আধা-ফৌজদারি হিসেবে পরিণত করা হয়েছে।
‘কন্ট্রাকচ্যুয়াল অব নেগোসিয়েশন বা চুক্তিগত দায়দায়িত্ব পূরণের ব্যর্থতার জন্য কোনো ব্যক্তিকে কারাগারে বন্দি রাখা যাবে না। চুক্তিগত দায়দায়িত্ব পূরণে ব্যর্থতার জন্য যদি কারাগারে পাঠানো হয়, তাহলে অচিরেই বাংলাদেশের বেশির ভাগ মানুষ কারাগারে চলে যাবে। এটা কারও কাম্য নয়।’
আদালত প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলে,‘ জাতীয় সংসদ অতি দ্রুত নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্টের ১৩৮ ধারা সংশোধন করবে বলে আমাদের (হাইকোর্ট) প্রত্যাশা।’
আদালত আরও বলে, মহান জাতীয় সংসদ যতদিন না ১৩৮ ধারার সংশোধন করেন বা সংশোধনী আনা হচ্ছে, ততদিন পর্যন্ত নেগোসিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্ট অ্যাক্টের ১৩৮ ধারার আওতায় চেক ডিজঅনারের মামলা আপসযোগ্য হবে। চেক ডিজঅনারের মামলা বিচারের এখতিয়ারসম্পন্ন দেশের সব আদালতে সাজার পরিবর্তে তিন গুণ পর্যন্ত জরিমানা দিতে পারবে।
আদালত তার এই রায়ের অনুলিপি দেশের সব আদালতে এবং আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোরও নির্দেশনা দেন।
পরে হাইহোর্টের রায়টি স্থগিত চেয়ে চেম্বার জজ আদালতে আবেদন জানায় রাষ্ট্রপক্ষ।