ভূমি কমিশনের বৈঠক স্থগিত করায় রাঙ্গামাটিতে ৩২ ঘণ্টার হরতাল প্রত্যাহার করেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ।
মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে রাঙ্গামাটি শহরে একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলনে হরতাল প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মুজিবুর রহমান।
এর আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের বুধবারের বৈঠক বাতিল দাবিতে রাঙ্গামাটি শহরে মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে হরতাল শুরু করে নাগরিক পরিষদ।
এই হরতাল বুধবার বেলা ৩টা পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা ছিল।
সংবাদ সম্মেলন শেষে নাগরিক পরিষদের কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান কাজী মুজিবুর রহমান বলেন, ‘হরতাল কর্মসূচি সফল হয়েছে। ভূমি কমিশনের বৈঠক স্থগিত করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে যদি বৈঠক করার তথ্য পাওয়া যায়, তবে আবারও কর্মসূচি দেয়া হবে।’
সকাল থেকে রাঙ্গামাটি শহরের মোড়ে মোড়ে পিকেটিং করেন নাগরিক পরিষদের নেতাকর্মীরা। তারা বিভিন্ন সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন। এ সময় শহরে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ ছিল, দোকানপাটও বন্ধ রাখা হয়।
হরতালে শহরে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। মোড়ে মোড়ে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল।
সাত দফা দাবি
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের সাত দফা হলো, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনে জনসংখ্যা অনুপাতে সব জাতিগোষ্ঠী থেকে সমানসংখ্যক সদস্য নিশ্চিত করতে হবে, পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির কার্যক্রম শুরুর আগে ভূমির বর্তমান অবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভূমি জরিপ শেষ করতে হবে।
এ ছাড়া রয়েছে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব সম্প্রদায়ের মানুষের ভূমির ওপর ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ভূমি কমিশন সংশোধনী আইন ২০১৬-এর ধারাগুলো বাতিল করতে হবে; পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি ব্যবস্থাপনা দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী প্রবর্তন এবং সমতলের ন্যায় জেলা প্রশাসকগণকে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির অধিকার দিতে হবে; কমিশন কর্তৃক ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির কারণে কোনো ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাকে পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকারি খাস জমিতে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
তাদের দাবির মধ্যে আরও রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামে তথাকথিত রীতি, প্রথা ও পদ্ধতির পরিবর্তে দেশে বিদ্যমান ভূমি আইন অনুসারে ভূমি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনা; বাংলাদেশ সরকারের আদেশ অনুযায়ী জেলা প্রশাসক কর্তৃক বন্দোবস্তীকৃত বা কবুলিয়তপ্রাপ্ত মালিকানা থেকে কাউকে উচ্ছেদ করা যাবে না।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির নিন্দা
রাঙ্গামাটিতে ৩২ ঘণ্টা হরতাল কর্মসূচির নিন্দা জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক কমিট। নাগরিক কমিটির বিবৃতিতে সই করেন সংগঠনটির সভাপতি গৌতম দেওয়ান।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে বিবদমান ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান, এর নেতৃত্বে আছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি।
‘কমিশন গঠনের প্রায় দুই যুগ পরও এই কমিশন নানা কারণে তার ন্যূনতম অভীষ্ট লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি। এর অন্যতম কারণ কমিশনের কার্যক্রমে পার্বত্য চট্টগ্রামের কতিপয় পাহাড়ি বিদ্বেষী বাঙালি সংগঠনের বাধা প্রদান, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আড়াই বছর পর ৭ সেপ্টেম্বর রাঙ্গামাটিতে কমিশনের বৈঠকে বাধা দেয়ার উদ্দেশ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের ডাকা হরতাল এবং সাত দফা দাবির প্রতি আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।’