দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক ও তার চাচা দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে সাঁওতালদের জমি দখল করে স্বপ্নপুরী নামের বিনোদনকেন্দ্র স্থাপনের অভিযোগ উঠেছে। সাঁওতাল ও মাহালিদের কবরস্থানের ওপর বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণের অভিযোগও করা হয়েছে।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ তুলেছে ‘সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর বসতবাড়ি, জমি ও জীবনরক্ষা আন্দোলন’ নামের একটি সংগঠন।
অভিযোগকারীরা দিনাজপুর-৬ সংসদীয় আসনের বাসিন্দা। তারা এও বলছেন, দেলোয়ার হোসেন তার গুন্ডাবাহিনী দিয়ে সাঁওতালদের খুন করার হুমকির পাশাপাশি ভারতে চলে যাওয়ার জন্য নানাভাবে চাপ দিচ্ছেন।
তারা বলছেন, জমি ফেরত চাওয়ায় তাদের জীবননাশের হুমকি দেয়া হয়েছে। জমি ফেরতের পাশাপাশি জীবনের নিরাপত্তাও চেয়েছেন তারা।
সাঁওতালরা দিনাজপুরেও এই অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন। এরপর প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় তারা ঢাকায় এসেছেন।
তাদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এমপি সাদিকের মোবাইল ফোনে কল করা হলে একাধিকবার ফোন রিসিভ না করেই তিনি কেটে দেন। তবে সাঁওতালরা দিনাজপুরে মানববন্ধন করার পর তিনি নিউজবাংলাকে বলেছিলেন, তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হয়েছেন। জেলার এই সম্মেলনকে ঘিরে তার বিরুদ্ধে একটি গোষ্ঠী উঠেপড়ে লেগেছে। তারাই এসব ছড়াচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে যেসব বক্তব্য
লিখিত বক্তব্যে বিশুরাম মরমু বলেন, ‘দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলায় স্বপ্নপুরি নামে বিনোদনকেন্দ্রটি তাদের পূর্বপুরুষদের জমি দখল করে তোলা হয়েছে। প্রায় ৩০০ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এই কেন্দ্রে সাঁওতাল ও মাহালিদের ৩টি কবরস্থান আছে। একটি কবরস্থানের ওপর এমপি শিবলীর বাড়ি করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বাইরে থেকে দেখতে অত্যন্ত সুন্দর এবং আকর্ষণীয় এই বিনোদনকেন্দ্র। কিন্তু এই স্বপ্নপুরি যে শত শত সাঁওতালের জীবনের স্বপ্ন ও আশা আকাঙক্ষা কেড়ে নিয়েছে তা কেউ জানে না। কবরস্থানের ওপরে গড়ে ওঠা বিলাসবহুল বাড়িটি প্রতিনিয়ত সাঁওতাল সম্প্রদায়কে কষ্টের অনুভূতিতে আচ্ছন্ন করে রাখে।’
সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক এবং তার চাচা দেলোয়ার হোসেনকে ‘ভূমিদস্যু’ ও ‘সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয়দাতা’ উল্লেখ করে বিশুরাম বলেন, ‘সাঁওতালদের জমিই শুধু তারা দখল করে নাই, বন বিভাগের বিপুল পরিমাণ জমিও তারা আত্মসাৎ করেছেন।’
ভুক্তভোগী গণেশ হেমরম বলেন, ‘আমার জমির ওপরে ওরা ময়লা ফেলে। আমার বাপ-দাদার কেউই তার কাছে জমি বিক্রি করে নাই। তাও তারা একই কথা বারবার বলে। এক জমি আমরা কয়বার বিক্রি করছি তাহলে? গ্রামের মানুষ ভয়ে কথা বলে না। আমার বাপ-দাদার জমি আমি ফেরত চাচ্ছি।’
সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়ে তাদের দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান সংবাদ সম্মেলনে থাকা বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির- সিপিবি সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স ও বাসদ নেতা রাজেকুজ্জামান রতন।