তিস্তা নদীর পানিবন্টন নিয়ে অনেক বছর ধরেই কাঙিক্ষত খবর মিলছে না, ভারত সফরে গিয়ে কৌতুকের সুরেই সে প্রসঙ্গ তুললেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পানি না দিলে এ দেশের সুস্বাদু ইলিশ থেকেও হয়তো ভারত বঞ্চিত হতে পারে বলে হাসতে হাসতেই জানালেন তিনি।
ভারতের নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের সময় সোমবার পার্শ্ব বৈঠকে সাংবাদিকদের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গ তোলেন বলে দ্য হিন্দুর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এ সময় হাসতে হাসতে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তোমরা তো আমাদের পর্যাপ্ত পানি দিচ্ছ না, সুতরাং এই মুহূর্তে আমি তোমাদের ইলিশও দিতে পারি না।’ এর পরই অবশ্য তিনি বলেন, ‘তবে প্রতিজ্ঞা করছি, আসন্ন পূজার আগেই (অক্টোবর) ইলিশ পাঠাতে পারব।’
অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে এক দীর্ঘমেয়াদি অমীমাংসিত ইস্যু। দুই দেশের মধ্যে ১৯৯৬ সালে একমাত্র গঙ্গা নদীর পানি বণ্টনের চুক্তি স্বাক্ষর হলেও তিস্তাসহ আলোচনায় থাকা ৮টি নদীর পানি ভাগাভাগির ব্যাপারে এখনো কোনো সুরাহা হয়নি।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মমতা আমার বোনের মতো। ভেবেছিলাম ভারত সফরে নয়াদিল্লিতে তার সঙ্গেও দেখা হবে।
‘কোনো কারণে এবার সেটা হচ্ছে না, তবে তার সঙ্গে তো আমি যেকোনো সময়েই দেখা করতে পারি।’
চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে সোমবার ভারতে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সফরে দেশটির সঙ্গে বেশ কিছু বিষয়ে চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে।
পূর্ব হিমালয়ের পানহুনরি পর্বতমালায় উৎপন্ন তিস্তা নদী গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এ নদীর পানি নিয়ে বিরোধ শুরু হয় ১৯৪৭ সালের পর। ১৯৭২ সালে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি যৌথ নদী কমিশন গঠন করা হয়।
পরে ১৯৮৩ সালে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন ইস্যুতে একটি অ্যাডহক মীমাংসা হয়েছিল। এতে সিদ্ধান্ত হয়, ভারত তিস্তার ৩৯ শতাংশ পানি পাবে আর বাংলাদেশ পাবে ৩৬ শতাংশ।
এমন প্রেক্ষাপটে ২০১১ সালে ভারত সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছায়। চুক্তি অনুযায়ী, ভারত কর্তৃপক্ষ তিস্তার পানির ৩৭.৫ শতাংশ বাংলাদেশকে দিতে সম্মত হয়েছিল। তাদের জন্য রেখেছিল ৪২.৫ শতাংশ। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কঠোর বিরোধিতার কারণে এ চুক্তিটি আর বাস্তবায়িত হয়নি।