জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জাকাত তহবিলের অর্থ আত্মসাতের মামলায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) আইয়ুব আলী চৌধুরী সাক্ষ্য দিয়েছেন।
মঙ্গলবার পুরান ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-১-এর বিচারক সৈয়দা হোসনে আরার আদালতে মামলার বাদী ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক এই পরিচালক সাক্ষ্য দেন, তবে এদিন তার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ না হওয়ায় আগামী ৩ অক্টোবর সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী তারিখ ঠিক করেছে আদালত।
২০২১ সালের ১১ জানুয়ারি সাঈদীসহ ৬ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত।
জাকাতের অর্থ আত্মসাতের মামলায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ ছয়জন আসামি। অন্য পাঁচজন হলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ লুৎফুল হক, মসজিদ কাউন্সিল ফর কমিউনিটি অ্যাডভান্সমেন্টের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, বন্ধুজন পরিষদের প্রধান সম্পাদক মিয়া মোহাম্মদ ইউনুস, ইসলামী সমাজকল্যাণ কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মসজিদ কাউন্সিলের সহকারী পরিচালক আব্দুল হক।
আমৃত্যু কারাদণ্ড পাওয়া সাঈদী কারাগারে আছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আবুল কালাম আজাদ এবং আব্দুল হক পলাতক। অন্য তিনজন আসামি জামিনে রয়েছেন।
এই মামলায় আসামি ছিলেন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মোশারেফ হোসেন শাহজাহান। তিনি মারা গেছেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) আইয়ুব আলী চৌধুরী ২০১০ সালের ২৪ মে শেরেবাংলা নগর থানায় এ মামলা করেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জাকাত বোর্ডের এক কোটি ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ২০০৪-০৫ অর্থবছরের ১৩ লাখ টাকাসহ মোট এক কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা দুস্থদের না দিয়ে নিজেদের দলীয় প্রতিষ্ঠানে বরাদ্দ করে আত্মসাৎ করেন।
এই অর্থের মধ্যে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মোশারেফ হোসেন শাহজাহান জাতীয় বন্ধুজন পরিষদ ভোলার অনুকূলে ৫০ লাখ, কাঁঠালিয়া মুসলিম একে ইনস্টিটিউটের অনুকূলে ছয় লাখ ৫০ হাজার, মাওলানা আবুল কালাম আযাদের মসজিদ কাউন্সিল ফর কামউনিটি অ্যাডভান্সমেন্টের অনুকূলে ৪৫ লাখ, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির তৎকালীন সভাপতি সাঈদীর ইসলামী সমাজকল্যাণ কেন্দ্র পিরোজপুরের অনুকূলে পাঁচ লাখ, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ লুৎফুল হকের দারুল কারার সোসাইটি, শরীয়তপুরের অনুকূলে আট লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয় বলে অভিযোগ আছে মামলায়।
মামলাটি তদন্ত করে দুদকের সহকারী পরিচালক ওয়াজেদ আলী গাজী ২০১২ সালের ৩০ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
আয়কর ফাঁকির মামলা
সাঈদীর বিরুদ্ধে আয়কর ফাঁকির মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, তিনি ২ কোটি ২৭ লাখ ৪০ হাজার ১২০ টাকা আয় গোপন করে ৫৬ লাখ ৪৬ হাজার ৮১২ টাকা কর দেননি।
এই অভিযোগে ২০১১ সালের ১৯ আগস্ট এনবিআর মামলা করে মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিরুদ্ধে। পরের বছর ১৫ সেপ্টেম্বর অভিযোগ গঠন করে আদালত।
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয় আপিল বিভাগ। যদিও ২০১৩ সালে এই মামলায় তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।