ময়মনসিংহ শহরতলীর শম্ভুগঞ্জ বাজারে প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ পিরানহা। অনেকে এ মাছটি চিনতে পেরে না কিনলেও আবার অনেকে না চিনে কিনে নিচ্ছেন। রাক্ষুসে মাছ হওয়ায় পিরানহা নিষিদ্ধ করা হয়। সেটি অবাধে বিক্রি করতে পারায় বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন বন্ধ করেননি চাষিরা।
সোমবার বিকেলে সরেজমিনে বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বিক্রেতারা দেশি প্রজাতির বিভিন্ন মাছের সঙ্গে পিরানহাও বিক্রি করছেন। পিরানহাকে রূপচাঁদা বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। আসল রূপচাঁদার চেয়ে পিরানহা কম দাম হওয়ায় অনেকে বেশি করে কিনে নিচ্ছেন। এভাবে অবাধে নিষিদ্ধ মাছ বিক্রি করতে পারায় খুশি বিক্রেতারা।
নাজমা খাতুন নামের এক ক্রেতা পিরানহা কিনতে বিক্রেতার সঙ্গে দামাদামি করছিলেন। এ সময় কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ বাজারে নিয়মিত পিরানহা মাছ পাওয়া যায়। রূপচাঁদা বলে মাছটি বিক্রি করা হয়। আমিও এটিকে রূপচাঁদাই মনে করেছি। কম দামে বিক্রি হওয়ায় নিয়মিত কিনেছি।’
তিনি বলেন, ‘নিষিদ্ধ এ মাছটির বিক্রি বন্ধ করতে সরকারিভাবে আরও প্রচার চালানো প্রয়োজন। তবেই আমাদের মতো না জানা ক্রেতারা মাছটি আর কিনবে না। ফলে চাষে আগ্রহ হারাবে চাষিরা।’
আসাদুল হক নামের আরেক ক্রেতা বলেন, ‘আসল রূপচাঁদার দাম অনেক বেশি থাকলেও এ মাছ ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করা হয়। বিক্রি বেশি। ফলে উৎসাহ পাচ্ছেন বিক্রেতারা। ফিশারিতে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে এ মাছ।’
তিনি বলেন, পিরানহা বিক্রি বন্ধে অভিযান চালানো হয় না। ফলে নিয়মিত কেনাবেচা চলছেই। বিক্রি বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করা প্রয়োজন।
পিরানহা বিক্রি প্রসঙ্গে বিল্লাল হোসেন নামের একজন বিক্রেতা নিউজবাংলাকে জানান, জেলার বিভিন্ন মাছের খামারে পিরানহা চাষ হয়। পাইকাররা ভোরে বাজারে এনে বিক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করেন। চাষ বন্ধ করতে না পারলে বাজারে বিক্রি বন্ধ করা কঠিন।
মো. হাসু নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, ‘পিরানহা মাছ দেখতে রূপচাঁদার মতো হওয়ায় অনেকে না চিনে কিংবা দাম কম পেয়ে কিনে নেন। তবে যারা চেনেন, তারা কিনতে চান না। যারা চাষ করছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হোক।’
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দিলীপ কুমার সাহা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘পিরানহা জলজ প্রাণীদের খেয়ে ফেলে। দেশীয় প্রজাতির মাছ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য এটি হুমকি। এ কারণে সরকার ও মৎস্য অধিদপ্তর পিরানহা মাছের পোনা উৎপাদন, চাষ, বংশবৃদ্ধিকরণ, বাজারে কেনাবেচা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা মৎস্য চাষিদের বলি, মাছটি চাষ না করতে। তবুও অনেকে গোপনে চাষ করছে। অন্যান্য মাছের উৎপাদন বাড়ানোর স্বার্থে রাক্ষুসে পিরানহার উৎপাদন বন্ধ করতে আমাদের চেষ্টার কমতি নেই। তবে ক্রেতাদেরও এ মাছ কেনা থেকে বিরত থাকতে হবে। তাহলেই উৎপাদন বন্ধ করা সম্ভব হবে।’
এ বিষয়ে ময়মনসিংহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নিষিদ্ধ মাছ যারা চাষ করে, তারা খুব গোপনে চাষ করে। ফলে এদের অনেকে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। শম্ভুগঞ্জ বাজারসহ সদরের অন্য বাজারগুলোতেও অভিযান চালানো হবে। কোথাও নিষিদ্ধ মাছ পাওয়া গেলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’