কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ৩৪ কোটি টাকার যন্ত্র খোলা আকাশের নিচে ফেলে রেখে নষ্ট করছে তাঁত বোর্ড। এসব যন্ত্র কাজে লাগালে জোরে ঘুরত উৎপাদনের চাকা। বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন যন্ত্রগুলো স্থাপনের কাজ চলছে।
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর তাঁতশিল্পের আধুনিকায়নে সরকার ২০১৬ সালে একটি প্রকল্প হাতে নেয়। কাপড়ের রং, ময়েশ্চারাইজিং, সাইজিং, ক্যালেন্ডারিং, সেন্টারিং ও ফোল্ডিংয়ের জন্য ৩৪ কোটি টাকার আধুনিক মালামাল আসে। কিন্তু সরকারি এসব যন্ত্র এভাবেই ৯ মাস ধরে খোলা আকাশের নিচে ফেলে রেখেছে কুমারখালী তাঁত বোর্ড। তবে এসব যন্ত্র বসাতে বড়োজোর দুই সপ্তাহ লাগার কথা বলে মনে করছেন তাঁত ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্তরা।
মেশিনগুলো যেভাবে রাখা হয়েছে, তাতে সেগুলো নষ্ট হয়ে যায় কি না, তা নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে। মাটির ওপর কোনো মতে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। ছিদ্র হয়ে ঢুকছে পানি। তবে কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, এভাবেই এগুলো সুরক্ষিত থাকবে।
তেবাড়িয়া এলাকার তাঁতী আব্দুল মালেক বলেন, ‘সরকার এত টাকা-পয়সা খরচ করে মেশিন আমদানি করেছে। এগুলো নষ্ট না করে যথাস্থানে স্থাপন করার দাবি জানাচ্ছি। এই মেশিনগুলো ব্যবহার করতে পারলে বড় বড় বস্ত্র কারখানার পাশাপশি ক্ষুদ্র তাঁতীরা বেশি উপকৃত হবেন। এতে এ এলাকায় আরও নতুন নতুন তাঁত গড়ে উঠবে।’
তাঁতী নাসির উদ্দিন বলেন, ‘রোদ, বৃষ্টি আর কাদা পানিতে মেশিনগুলো নষ্ট হওয়ার উপক্রম। এগুলো কেন স্থাপন করা হচ্ছে না, সেটা বুঝতে পারছি না।‘
কুমারখালী তাঁতী সমিতির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এ নিয়ে আমি তাঁত বোর্ডের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলেছি। কিন্তু কোনো কাজ হচ্ছে না।’
কুমারখালী রানা টেক্সটাইলের পরিচালক মাসুদ রানা বলেন, ‘আমরা জানি এই মেশিন সেট করতে ১৫ থেকে ১৬ দিন সময় লাগে। কিন্তু তারা ৯ মাসেও তা করেনি। আবার এসব ইলেকট্রনিক মেশিন রাখার জন্য নিরাপদ স্থান দরকার। কিন্তু এই মেশিনগুলো খোলা আকাশের নিচে থেকে নষ্ট হচ্ছে। এখন আমাদের শঙ্কা, মেশিনগুলো আদৌ চলবে কি না?’
এ বিষয়ে তাঁত বোর্ড, কুমারখালীর সহকারী মহাব্যবস্থাপক মেহেদী হাসান বলেন, ‘একটা একটা করে আমরা মেশিন সেট করছি। আমাদের টু-স্টিং সেকশন সেট হয়ে গেছে। বাদবাকিগুলোও দ্রুতই সেট হয়ে যাবে।’
বাইরে ফেলে রাখার কী কারণ- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ভেতরে পুরোনো মেশিন থাকার কারণে কিছু মেশিন বাইরে পড়ে আছে। তবে ৮০ ভাগ মেশিন ভেতরেই আছে। এই মাসের মধ্যে পুরোনো মেশিনগুলো আমরা সরিয়ে ফেলব। এরপর শেড ফাঁকা হয়ে গেলে নতুনগুলো ভেতরে নিয়ে আসব।’
মেশিনগুলো খোলা আকাশের নিচে থাকলেও সেগুলো সুরক্ষিত আছে বলেও মনে করেন এই কর্মকর্তা। বলেন, ‘তারপরও আমরা চেষ্টা করছি এগুলো নষ্ট হওয়ার আগেই স্থাপন করে চালু করার।’