ছায়া সুনিবিড় সবুজে ঘেরা একটি গ্রাম। মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার শেষ প্রান্তের এই গ্রামটির নাম খাহ্রা।
গ্রামটিতে মানুষের বসতি শুরু হয়েছে আগে, নাকি বানরের- বলতে পারে না বাসিন্দাদের কেউই। তবে প্রায় শত বছর ধরে মানুষ ও বানরের সহাবস্থান এখানে। কিন্তু সম্প্রতি এই গ্রামে প্রায় সময়ই ঠুকাঠুকি বেঁধে যাচ্ছে দুই পক্ষের মাঝে। বানরের খামচি খায়নি এমন মানুষ এই গ্রামে এখন খুঁজে পাওয়াই ভার।
বাসিন্দারা বলছেন, দিন দিন বানরের আধিপত্য বেড়েই চলেছে এই গ্রামে। স্থানীয়দের জরিপ অনুযায়ী, বর্তমানে সেখানে প্রায় দুই হাজার বানরের বসতি।
অত্যাচার, নির্যাতনসহ বানরের বিরুদ্ধে বেশকিছু অভিযোগ খাহ্রা গ্রামের প্রবীণদের। তাদের মতে, খাবারের অভাবেই দিন দিন উশৃঙ্খল হয়ে উঠছে বানরগুলো।
হানিফ মিয়া নামে গ্রামটির এক বাসিন্দা বলেন, ‘এমন কোনো দিন নাই যে- বানররা কাউকে আক্রমণ করে না। বাজার থেকে কিছু নিয়ে গেলে লুকিয়ে নিতে হয়। না হলে বানররা দল বেঁধে এসে হামলা করে। অনেক সময় জেদ হয় আবার মায়াও হয়। হয়তো খাদ্যের অভাবেই ওরা এমনটা করছে।’
স্থানীয় আলিমুন্নেছা বলেন, ‘মানুষদের কিছু বলার সাহস নাই। কারণ তারা দল বেঁধে আক্রমণ করে। রান্নাঘরে ঢুকে খাবার নিয়ে যায়। কিছু করার নেই। ভয়ে থাকি, আতঙ্কে থাকি। আমার বয়স ৭৫, আমারও কামড় খেতে হয়েছে।’
ষাটোর্ধ্ব জহির আহমেদ জানান, বেশ কিছুদিন আগে তার শরীরে ৩৪টি সেলাই পড়েছে। রাস্তার মধ্যে ফেলে তাকে কামড়েছে এক পাল বানর। ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে হাত ও শরীরের মাংস।
খাহ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. আসলাম মিয়া বলেন, ‘এই এলাকায় কতোদিন ধরে বানর আছে এটা বলা খুবই দুরূহ। আমার বাপ দাদারাও বানর দেখছেন বলে আমরা শুনেছি। তবে এখন দিনে দিনে বানরের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে।’
এই বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছে, তারা ইতোমধ্যেই বানরের কামড় খেয়ে টিকা নিয়েছে। অনেকের হাত থেকে চিপসের প্যাকেট ছুঁ মেরে নিয়ে গেছে। বাসা থেকে স্কুলে যাওয়া-আসার পথে শিক্ষার্থীরা তাই সবসময় বানরের সম্ভাব্য আক্রমণের ভয়ে থাকে।
তবুও এই গ্রামের শিশুদের চোখে প্রকাশ পায় বানরের প্রতি মমতা ও ভালোবাসা। সখ্যতা ও খুনসুটি দুইয়ে মিলে বানরের সঙ্গে এই গ্রামের শিশুদের প্রগাঢ় বন্ধুত্ব।
মাঝেমাঝে ঠুকাঠুকি বেঁধে গেলেও মানুষের সঙ্গে গ্রামটিতে বানরের কোনো বৈরিতা নেই বলে জানালেন খাহ্রা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক।
তবে গ্রামের অনেকেই মনে করেন, বন বিভাগের উচিত তাদেরকে খাওয়ার ব্যবস্থা করা এবং এই এলাকা থেকে তাদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়া।
এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু তাহের বলেন, ‘যে এলাকায় পূর্ব বসতি বন্যপ্রাণীরা সেখানেই ভালো থাকে। হঠাৎ করে কোথাও তাদেরকে নিয়ে গেলে হলে সেখানের পরিবেশের সাথে তারা খাপ খাওয়াতে পারবে না।’
বানরের আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠার কারণ হিসেবে খাদ্যাভাবের পাশাপাশি তিনি গ্রামটিতে মানুষ এবং বানর উভয়ের সংখ্যা বেড়ে যাওয়াকেও দায়ী করেছেন।
তার মতে, নির্বিচারে বন জঙ্গল কেটে ফেলাও বানরের উশৃঙ্খলতা বেড়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ।