বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

দেশি প্রকৌশলীদের হাতে সচল চীনা ডেমু ট্রেন

  •    
  • ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ২১:৪৫

একে একে অকেজো হয়ে পড়ে আছে চীন থেকে আনা ২০টি ডেমু ট্রেন। চীনা প্রকৌশলী এনে এগুলো সারাই করতে ৬০০ কোটি টাকা প্রয়োজন ছিল। বাংলাদেশি প্রকৌশলীদের মাধ্যমে ঠিক করতে খরচ হচ্ছে মাত্র ১০০ কোটি টাকা। এরই মধ্যে একটি ট্রেন সচল করা হয়েছে।

চীনা প্রযুক্তিতে নির্মিত একটি ডেমু ট্রেন দীর্ঘদিন ধরে অকেজো পড়ে থাকার পর অবশেষে দেশি প্রকৌশলীদের হাতে সচল হয়েছে। দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলায় ডিজেল লোকো ওয়ার্কশপে প্রায় দেড় বছর চেষ্টার পর সচল করা সম্ভব হয়েছে এগুলো।

রোববার বিকেল সাড়ে ৩টায় পার্বতীপুর রেলওয়ে জংশন থেকে পঞ্চগড়ের উদ্দেশে একটি ডেমু ট্রেন পরীক্ষামূলকভাবে চলাচল শুরু করে। এটির গতি ছিল ঘণ্টায় ৭২ কিলোমিটার। যে কোনো দিন আনুষ্ঠানিকভাবে এগুলো রেল বহরে হস্তান্তর করা হবে।

৬৪৫ কোটি টাকা খরচ করে ২০টি ডেমু ট্রেন দেশে আনা হয় ২০১৩ সালে। সে সময় চীনের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নিশ্চয়তা দিয়েছিল, ২০ বছরের আগে এগুলো নষ্ট হবে না। কিন্তু চালুর মাত্র চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে একে একে এগুলো বিকল হতে শুরু করে।

৯ বছরের মাথায় ২০টি ট্রেনই বিকল হয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, পার্বতীপুরসহ বিভিন্ন শেডে পড়ে থাকে।

প্রথমদিকে এগুলোর মডিউল নষ্ট হতে শুরু করে। প্রতিটি ট্রেনে ৪০টি মডিউল আছে। এগুলোর প্রতিটির দাম প্রায় ৭ লাখ টাকা। আর এগুলো সফটওয়্যারের মাধ্যমে ট্রেনে সংযোজন করতে হয়। এগুলো শুধু চীনা প্রকৌশলীরাই সরবরাহ করতে পারেন। প্রতিটি মডিউল ঠিক করতে চীনা প্রকৌশলীদের দেশে আনতে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ হতো।

রেলওয়ের সূত্র জানায়, নষ্ট হয়ে পড়ে থাকা এরকম ২০টি ডেমু ট্রেন চীনা প্রকৌশলীদের মাধ্যমে ঠিক করাতে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশি প্রকৌশলীদের মাধ্যমে ঠিক করতে খরচ হচ্ছে মাত্র ১০০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মঞ্জুর-উর-আলম ট্রেনগুলোকে সচল করতে দেশীয় প্রকৌশলীদের দারস্থ হন। এগিয়ে আসেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক শিক্ষার্থী ও আণবিক শক্তি কমিশনের সাবেক কর্মকর্তা প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান। তিনি দেড় বছর গবেষণা করে উপায় বের করেন। পরে মাত্র ৭২ দিন কাজ করে চীনা প্রযুক্তিকে সরিয়ে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি ডেমু ট্রেনকে সচল করেছেন তিনি।

ইতিমধ্যে লোডসহ তিন বারের সফল ট্রায়াল হয়েছে। তার এই মেরামত কার্যক্রমে সহযোগিতা করেন প্রকৌশলী আজিম বিশ্বাসসহ পার্বতীপুর ডিজেল লোকো ওয়ার্কশপের কর্মকর্তা কর্মচারীরা।

প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বলেন, ‘গত বছরের এপ্রিল থেকে ডেমু ট্রেন মেরামত শুরু করা হয়। কিন্তু ওই সময় করোনা ভয়াবহ অবস্থা ধারণ করায় যন্ত্রাংশ ঠিক মতো পাওয়া যায়নি। আমরা প্রায় দেড় বছর ধরে এই ট্রেনের পিছনে কাজ করে অবশেষে সচল করতে সক্ষম হয়েছি। ইতিমধ্যে আমরা পরীক্ষামূলকভাবে চালিয়েছি। লোড, গতি সব কিছুই ঠিক আছে। ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেলে আগামী তিন মাসের মধ্যে সবগুলো ট্রেন রেললাইনে চলাচলের উপযোগী করা সম্ভব।’

প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘চীনের সরবরাহ করা ডেমু ট্রেনগুলো মডিউলের মাধ্যমে পরিচালনা করা হতো। সেগুলো নষ্ট হলে তাদের উপর নির্ভর করতে হতো। কিন্তু আমরা মডিউলগুলো ঠিক করতে সক্ষম হয়েছি। আপাতত একটি ঠিক করা সম্ভব হয়েছে, আরও ১৯টি ট্রেন নষ্ট পড়ে আছে। চীনের প্রযুক্তি খুবই জটিল ছিল। এখন থেকে দেশীয় প্রযুক্তিতে এসব ট্রেন পরিচালিত হবে। ফলে দেশের টাকা সাশ্রয় হবে।’

ডেমু ট্রেনের লোকো মাস্টার মশিউর রহমান বলেন, ‘চীনের প্রযুক্তিতে নির্মিত এসব ডেমু ট্রেন দেশীয় প্রযুক্তিতে চালাতে সমস্যা হচ্ছে না। প্রয়োজনীয় গতিও ঠিক আছে, ঘণ্টায় ৭২ কিলোমিটার পর্যন্ত গতি উঠছে।’

পার্বতীপুর লোকো ইয়ার্ডের ইনচার্জ কাফী-উল-ইসলাম বলেন, পার্বতীপুরের লোকোশেডে অকেজো অবস্থায় থাকা দুটি ডেমু ট্রেন গত বছরের ২৪ মার্চ মেরামতের জন্য ডিজেল লোকো ওয়ার্কশপে হস্তান্তর করা হয়। প্রকৌশলীরা গত বছরের ২ এপ্রিল থেকে কাজ শুরু করেন। ইতিমধ্যে একটি ট্রেন মেরামত করে ২৯ বার ট্রায়াল দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে যাত্রী লোড ছাড়া ২৭ বার ও যাত্রী লোড নিয়ে দুই বার পঞ্চগড় ও লালমনিহাট পথে চালানো হয়েছে। সফলভাবেই এসব ট্রায়াল সম্পন্ন হয়েছে।’

এ বিভাগের আরো খবর