জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে সিটি করপোরেশনের বরখাস্ত মেয়র ও আওয়ামী লীগ থেকে আজীবন বহিষ্কৃত জাহাঙ্গীর আলমের বিচার দাবিতে আবারও উত্তাল হয়ে উঠেছে গাজীপুর।
তার বিচারের দাবিতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সোমবার বিকেলে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে। বেশ কিছু জায়গায় মহাসড়ক অবরোধ করেও বিক্ষোভ করেন জাহাঙ্গীর বিরোধীরা।
নগরীর টঙ্গী বাজার, স্টেশন রোড, চেরাগআলী, কলেজগেট, গাজীপুরা, বোর্ডবাজার, জয়দেবপুরসহ বিভিন্ন স্থানে দুপুরের পর থেকেই জড়ো হতে থাকেন কয়েক হাজার নেতাকর্মী। বিকেল ৪টায় শুরু হয় মানববন্ধন।
মানববন্ধন থেকে বক্তারা জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেপ্তার করে দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান। পরে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্ট অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধরা। এ সময় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।
টঙ্গী থানা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও ৪৬ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুল ইসলাম নুরু বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গাজীপুরবাসীর ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। কিন্তু দলীয় ও মেয়র পদের প্রভাব খাটিয়ে জাহাঙ্গীর সিটি করপোরেশনকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছিলেন।
‘দুদকসহ বিভিন্ন সংস্থা তার সেসব দুনীতির প্রমাণ পেয়েছে। আমরা জনগণের টাকা চুরি, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে দাম্ভিকতাপূর্ণ এবং অবমাননাকর বক্তব্য দেয়ার কারণে জাহাঙ্গীরের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবি করছি।’
আরেক আওয়ামী লীগ নেতা আহসান উল্লাহ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে কটূক্তি করার পরও জাহাঙ্গীরের দাম্ভিকতা কমেনি। এখনও তিনি নানানভাবে চক্রান্ত করে আসছেন। শুধু আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনই নয়, গাজীপুরবাসী জাহাঙ্গীরের বিচারের মাধ্যমে কলঙ্কমুক্ত হতে চায়।’
গত বছরের সেপ্টেম্বরে গোপনে ধারণ করা জাহাঙ্গীর আলমের কথোপকথনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জেলার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করা হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে জাহাঙ্গীরকে নভেম্বরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। একই সঙ্গে তার দলের প্রাথমিক সদস্য পদও বাতিল করা হয়।
ওই বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে মেয়রের পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।
সে সময় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে মামলা হয়।
সোমবার সকালে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করার অভিযোগে ফরিদপুরে করা মামলায় হাইকোর্ট থেকে আট সপ্তাহের জামিন পেয়েছেন জাহাঙ্গীর আলম।
গত ৩১ আগস্ট ফরিদপুরের ৩ নম্বর আমলি আদালত ওই মামলায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল।
মামলাটিতে আগাম জামিন চেয়ে জাহাঙ্গীর আলমের করা আবেদনের ওপর শুনানি শেষে সোমবার বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ তাকে আট সপ্তাহের আগাম জামিন দেয়।
পাশাপাশি এই মামলায় জাহাঙ্গীর আলমকে ৮ সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।