ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বাজেট বরাদ্দে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ। সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাজেটে মোট বরাদ্দের ৯৭ দশমিক ৮৭ শতাংশই ধর্মীয় সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের জন্য। বিপরীতে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য বরাদ্দ মাত্র ২ দশমিক ১৩ শতাংশ।
সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। সেই সঙ্গে সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি জানায় সংগঠনটি। এ ছাড়া একটি জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠনেরও দাবি করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, পূর্ববর্তী ২০২১-২২ অর্থবছরে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মোট পরিচালন ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ২৭৮ দশমিক ৬০ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সচিবালয় ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পরিচালন ব্যয় ১০ দশমিক ৭৫ কোটি টাকা বাদ দেয়ার পর বাকি ২৬৭.৮৫ কোটি টাকা উন্নয়ন ব্যয়ের মধ্যে ২৬১ দশমিক ৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে দেশের ধর্মীয় সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়কে। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় ৬ কোটি ২ লাখ টাকা। অর্থাৎ ধর্মীয় সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের জন্য মোট বরাদ্দের হার ৯৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ আর ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য মোট বরাদ্দের হার ২ দশমিক ২৫ শতাংশ।
রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘২০১৬-১৭ সালে ঘোষিত অর্থমন্ত্রীর বরাদ্দ করা ২০০ কোটি টাকা পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর মঠ-মন্দির সংস্কারে ব্যয়িত হবে এবং তার পরের অর্থবছরগুলোতে বাজেট বরাদ্দে জনসংখ্যার অনুপাতিক হারের প্রতিফলন ঘটবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর প্রতি বাজেট বরাদ্দ সীমাহীন অবজ্ঞা, অবহেলা, বৈষম্যের এক সুস্পষ্ট প্রমাণ।’
রানা দাশগুপ্ত বলেন, সম্পদের সুষম বণ্টনের মাধ্যমে দেশের সকল সম্প্রদায়ের নৈতিক ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন সময়ের দাবি।
তিনি বলেন, বিগত নির্বাচনের আগে সরকারি দলের দেয়া প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। এসব প্রতিশ্রুতির মধ্যে আছে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, বৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন বাস্তবায়ন, পার্বত্য শান্তিচুক্তি ও পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন এবং সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন।
সংবাদ সম্মেলনে চার দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো: ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন ও কল্যাণে জাতীয় রাজস্ব বাজেট থেকে বার্ষিক বরাদ্দ প্রদান করে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টগুলোকে ‘ফাউন্ডেশন'-এ রূপান্তরিত করতে হবে।
সরকারের ধর্ম মন্ত্রণালয় সংবিধানের ২-ক অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রধর্মের পক্ষে কাজ করছে। এ অনুচ্ছেদের অন্য অংশে বিধৃত হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ধর্মের সমঅধিকার বাস্তবায়ন করতে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও উন্নয়নের জন্য সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করা হোক।
ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সার্বিক আর্থসামাজিক উন্নয়নে বরাদ্দ নিরূপণে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঠিক শুমারির উদ্যোগ নেয়া হোক।
ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠান সম্পাদন ও ধর্মীয় সংস্কৃতির উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মডেল মন্দির/প্যাগোডা/গির্জা ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপনে বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেয়া হোক।
সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম ২০০৮ এর নির্বাচনের পর সংখ্যালঘুদের অবস্থার পরিবর্তন হবে। তা না হয়ে আরও খারাপ হয়েছে। সরকারের মধ্যে সাম্প্রদায়িক শক্তি আরও গাঢ় হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে সরকার সরে যাচ্ছে। আমরা সংখ্যালঘুদের নিয়ে বৈষম্যের অবসান চাই।’
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি নিমচন্দ্র ভৌমিক বলেন, ‘বিরোধী দলগুলো যদি প্রকৃত অর্থে গণতন্ত্র চায়, তাহলে তাদেরকে বাহাত্তরের সংবিধান মানতে হবে। সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলগুলোও সংখ্যালঘুদের বৈষম্য নিয়ে কথা বলছে না, বরং তারা উসকানিমূলক মন্তব্য করছে।’
নিমচন্দ্র ভৌমিক বলেন, ‘দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। বিরোধী দলগুলো যদি প্রকৃত অর্থে গণতন্ত্র চায়, তাহলে তাদেরকে বাহাত্তরের সংবিধান মানতে হবে। ধর্মনিরেপক্ষতা মানতে হবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নিপীড়ন সম্ভব নয়।’