প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরে গিয়ে কখনও কিছু নিয়ে আসতে পারেননি বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেছেন, ‘আমাদের অভিজ্ঞতা এত তিক্ত, হতাশ হওয়ার মতো। প্রত্যেকবার দেখেছি অত্যন্ত হতাশার সঙ্গে, নিরাশার সঙ্গে; প্রধানমন্ত্রী ভারতকে দিয়ে এসেছেন কিন্তু নিয়ে আসেননি।’
শেখ হাসিনা চার দিনের ভারত সফরে যাওয়ার দিন সোমবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের স্মরণসভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
সাবেক অর্থমন্ত্রীর ত্রয়োদশ মৃত্যুবার্ষিকীতে ‘সাইফুর রহমান স্মৃতি পাঠাগার’ নামে একটি সংগঠন এই স্মরণ সভার আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল বলেছেন, ‘আমরা প্রত্যেকবার আশা করেছি যে এবার হয়তো প্রধানমন্ত্রী আমাদের জন্য কিছু নিয়ে আসবেন। দেখেছি তিনি দিয়ে এসেছেন কিন্তু নিয়ে আসেননি। সুতরাং আগে আসুক তিনি ঘুরে, কী নিয়ে আসেন দেখি, তারপরে মন্তব্য করব।’
চার দিনের সফরে নয়াদিল্লির পালাম বিমানবন্দরে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে তাকে অভ্যর্থনা জানানো হয় । ছবি: নিউজবাংলা
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অমীমাংসিত বেশ কিছু সমস্যার সমাধান আওয়ামী লীগের টানা তৃতীয় মেয়াদে হয়েছে। এর মধ্যে আছে ছিটমহল বিনিময়, যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ১০ হাজার একরের বেশি জমি পেয়েছে। দুই দেশের সমুদ্রসীমাও নির্দিষ্ট হয়েছে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে।
সীমান্ত হত্যা দুই দেশের সম্পর্কে একটি গলার কাঁটা হয়ে রইলেও গত কয়েক বছরে এই হত্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে। তবে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি না হওয়াটা সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ সব সময় বলে আসছে, ভারতের সঙ্গে অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান তারা ছাড়া আর কেউ করতে পারেনি। বিএনপি একটি সমস্যারও সমাধান করতে পারেনি। ১৯৯১ সালে বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ভারত সফরে যাওয়ার পর গঙ্গার পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনা করতে ভুলে যাওয়ার যে কথা বলেছিলেন, সেটি নিয়ে এখনও বিএনপিকে আক্রমণ করে আওয়ামী লীগ।
ফখরুল কথা বলেন দেশের অর্থনীতি নিয়েও। তার দাবি স্বাধীনতার পরেও আওয়ামী লীগ আমলে লুটপাট চলেছে। এখনও তাই চলছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘৭৫ সালে যে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়েছিল, তার পূর্বে আপনাদেরকে লক্ষ্য রাখতে হবে সেটা ছিল সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি। যারা (আওয়ামী লীগ) সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে বিশ্বাস করত না। তারা বলত, আমরা সমাজতন্ত্র অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করব। কিন্তু সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির কোনো কাঠামোই তৈরি হলো না। যেটা তৈরি হলো, সেটা হলো লুটপাটের অর্থনীতি। ৭২ থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি ছিল সম্পূর্ণ লুটপাটের অর্থনীতি।
‘এখনও একই অবস্থা চলছে প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে। রাস্তা নির্মাণ হচ্ছে, সেতু নির্মাণ হচ্ছে; যে সেতুটা এক বছরে নির্মাণ করা সম্ভব সেটা করছে ১০ বছরে, ১৫ বছরে। ঢাকা থেকে টঙ্গীর যে রাস্তা সেটা আজ ১০ বছর যাবৎ হচ্ছে।
‘যে কাজটা ১০ হাজার টাকায় হবে সেখানে তারা ৫০ হাজার টাকা খরচ করছে। বাকি ৪০ হাজার টাকা তারা (সরকার) নিজেরা ভাগ করে চুরি করে খাচ্ছে।’
অর্থনীতিবিদ হিসেবে সাইফুর রহমানের ভূয়সী প্রশংসা করেন বিএনপি নেতা। বলেন, ‘সাইফুর রহমান পড়াশোনা করেছিলেন হিসাববিজ্ঞানের ওপর। সে কারণেই কোনটা করলে লাভ হবে আর কোনটা করলে লাভ হবে না, আর কোনটা করলে ঋণগ্রস্ত হব, আর কোনটা করলে অনেক বেশি লাভবান হব, সেটা তিনি খুব ভালো করে জানতেন।
‘সেই কারণে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েছিলেন। যে কাজটা দেশের জন্য ভালো মনে করতেন, তিনি সেটাই করতেন আর সেই কাজটা করার জন্য যা যা করা দরকার ছিল তিনি তাই করতেন।’
ফখরুল বলেন, ‘আমরা আজকে অত্যন্ত কঠিন একটি সময় অতিক্রম করছি। এ সময় যদি সাইফুর রহমান সাহেব আমাদের সঙ্গে থাকতেন, আমাদেরকে রাজনৈতিকভাবে সহযোগিতা করতেন এবং একটি ভ্রান্ত উন্নয়ন বিভ্রান্ত সৃষ্টি করেছে এই সরকার সেটার আসল চেহারা উদঘাটন করতে তিনি সক্ষম হতেন। এই সরকারের যে মূল চেহারা সেটাকেও উন্মোচন করতে তিনি সক্ষম হতেন।’
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খোন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সাইফুর রহমান একজন দেশপ্রেমিক নেতা ছিলেন, শুধু রাজনীতিবিদ ছিলেন না। আজকে যারা গায়ের জোরে ক্ষমতায় রয়েছে, তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে নেতাদের লুট করা, লুট করে দেয়ার সুযোগ তৈরি করা।’
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানুল্লাহ আমান, বিএনপি নেতা নাজিমুদ্দিন আলম ও কামরুজ্জামান রতনও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।