বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

সিলেট নগরে আবারও হাঁটুপানি

  •    
  • ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৫:২০

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, ‘ড্রেনের পানি নামার মুখগুলো হয়তো আমরা সব সময় তদারকি করতে পারি না। পানি নামার লিংকগুলোও সব সময় তদারকি করা হয় না। ফলে দোষ সবারই আছে। তবে সবচেয়ে বড় কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। এর ফলে এই ধরনের দুর্যোগ আমাদের সকলকে পোহাতে হবে।’

পানির সঙ্গে যেনে মিতালি গড়ে উঠেছে সিলেট নগরের। কয়েক দফা বন্যা আর বারবার জলাবদ্ধতায় ভাসছে এ নগর। সোমবার আবার এমনটি ঘটল। বৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে পড়েছে প্রায় পুরো নগর। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এ নগরের বাসিন্দারা।

রোববার মধ্যরাত থেকে প্রবল বৃষ্টি হয় সিলেটে, যা অব্যাহত থাকে সোমবার সকাল পর্যন্ত। এই বৃষ্টিতে সোমবার সকালে তলিয়ে যায় নগরের বেশির ভাগ সড়ক। অনেকের বাসাবাড়িতেও ঢুকে পড়েছে পানি। তবে দুপুরের দিকে পানি নেমে যেতে শুরু করে।

কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতেই নগর তলিয়ে যাওয়ায় নগরবাসী দায়ী করছেন সিটি করপোরেশনের অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও খামখেয়ালিকে। তবে নগর কর্তৃপক্ষ বলেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অতিবৃষ্টির কারণে এমনটি ঘটছে। সেপ্টেম্বরে এমন বৃষ্টিকে অস্বাভাবিক বলছেন তারা।

সকালে নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বৃষ্টিতে নগরের লামাবাজার, মিরেরময়দান, শিবগঞ্জ, সেনপাড়া, সোনাপাড়া, শাহজালাল উপশহর, মেন্দিবাগ, তোপখানা, কাজলশাহ, লালাদীঘির পাড়, আম্বরখানা, চৌহাট্টা, তেররতন, তালতলা, সোবহানীঘাট, যতরপুর, দরগাহ মহল্লা এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কোনো কোনো সড়কে হাঁটু পর্যন্ত পানি জমেছে। উপশহর, দরগাহ মহল্লা, সোবহানীঘাটসহ বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার বাসাবাড়িতেও পানি ঢুকে পড়েছে। পানি ওঠে দোকানপাটেও।

জলাবদ্ধতা দেখা দেয় সিলেটের ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অভ্যন্তরেও। এতে রোগী ও তাদের স্বজনরা অসহনীয় দুর্ভোগে পড়েছেন। তবে হাসপাতালটিতে চিকিৎসাব্যবস্থা স্বাভাবিক রয়েছে।

নগরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের পায়রা এলাকার বাসিন্দা রাজীব চৌধুরী সোমবার সকালে নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মধ্যরাতে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে পায়রা এলাকায় রাত থেকেই পানি জমে। আমারসহ অনেকের বাসাবাড়ি ও দোকানে পানি উঠেছে। রাতভর স্থানীয়রা আতঙ্কে ছিলেন।

‘সামান্য বৃষ্টি হলেই পায়রা এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। অথচ এর কোনো সমাধান সিটি করপোরেশন করছে না। এ অবস্থায় মানুষের ভোগান্তি দূর হচ্ছে না।’

নগরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের লালাদীঘির পাড় এলাকার বাসিন্দা সুবল সিংহ বলেন, ‘গতকাল রাত ২টার দিকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে লালাদীঘির পাড় সড়ক ডুবে গেছে। এলাকায় নিচু কিছু ঘরে পানি ভেতরে প্রবেশ করেছে। এখনও অনেক বাসায় পানি জমে আছে।’

এর আগে গত ১৭ জুলাই মাত্র ২ ঘণ্টার বৃষ্টিতে তলিয়ে গিয়েছিল পুরো নগর।

বৃষ্টি হলেই নগর তলিয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্য বিভাগের প্রধান স্থপতি রাজন দাশ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘নগরের ড্রেনগুলো খুব সরু আকারে নির্মাণ করা হয়েছে, ছড়াগুলো আবর্জনায় ভরাট হয়ে গেছে। ফলে পানি কাটতে পারছে না।’

ছড়া উদ্ধার ও ড্রেন নির্মাণে সিটি করপোরেশনের বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলো নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘এই খাতে হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। কিন্তু এই টাকা দিয়ে কী কাজ হয়েছে, তা প্রকাশ করা দরকার। কেন এত প্রকল্পের পরও এভাবে পানি জমে যাচ্ছে তা জানা দরকার।’

তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী বলেন, ‘নগরে পানি ঘণ্টা দুয়েক ছিল। এরপর নেমে গেছে। পানি নামার জন্য এইটুকু সময় দিতে হবে।’

রোববার মধ্যরাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত ১৮০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সেপ্টেম্বরে এই পরিমাণ বৃষ্টিপাত অবিশ্বাস্য। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমন হচ্ছে। তাছাড়া হাওর ও নদী ভরাট হয়ে গেছে। বৃষ্টিতে টিলা থেকে বালু নেমেও ড্রেন ও ছড়া ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে বৃষ্টির পানি নামবে কোন দিকে।’

জলাবদ্ধতার জন্য নগরবাসীরও দায় আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নগরবাসী সব ধরনের ময়লা-আবর্জনা, পলিথিন ড্রেনে ফেলে দেন। এতে ড্রেন ভরাট হয়ে যায়।’

নিজেদেরও ব্যর্থতা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ড্রেনের পানি নামার মুখগুলো হয়তো আমরা সব সময় তদারকি করতে পারি না। পানি নামার লিংকগুলোও সব সময় তদারকি করা হয় না। ফলে দোষ সবারই আছে। তবে সবচেয়ে বড় কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। এর ফলে এই ধরনের দুর্যোগ আমাদের সকলকে পোহাতে হবে।’

গত জুলাইয়ের জলাবদ্ধতার পর সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী জলাবদ্ধতার চারটি কারণ চিহ্নিত করেছিলেন। মেয়রের ভাষ্য অনুযায়ী, জলাবদ্ধতার কারণগুলো হলো- অল্প সময়ে অতিবৃষ্টি, নগরবাসীর যত্রতত্র আবর্জনা ফেলা, ঢলে টিলা ধসে ছড়া ও ড্রেন ভরাট এবং সময়মতো ড্রেন-ছড়া পরিষ্কার না করা।

নগরবাসীর অভিযোগ, কারণ চিহ্নিতের পরও তার প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়নি সিটি করপোরেশন। ফলে আবারও জলে ভাসল সিলেট নগর।

এ বিভাগের আরো খবর